মীরাক্কেলের ইশতিয়াক, জামিল, রনি ও সজলকে বলছি...
জীবন মানে জি-বাংলা।
ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভি বাংলার স্লোগান। গত দু’বছর ধরে ঢাকার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি অংশের ওপর চোখ রেখে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, এদের অনেকের জীবন এখন আসলেই জি-বাংলা হয়ে গেছে।
এর আগে গত দুই দশক ধরে স্টার প্লাস, জিটিভি এশিয়া প্যাসিফিক, আর সনি চ্যানেলের কূটনামী ভরা ডেইলি সোপগুলো গিলছে আমাদের দর্শক। গোপী বউ, রাশি আর মোটা ভাবী খুব সঙ্গোপনে প্রভাব ফেলছে আমাদের সমাজ কাঠামোয়। ঢাকায় তাই “স্টার প্লাস” দোকানে রাশি, গোপী, কোকিলা শাড়ির রমরমা ব্যবসা। শিশুরা হরহামেশা হিন্দি শিখছে ডোরেমন দেখে। তারও আগে চালু হয়ে গেছে কিড-জি স্কুল। এসবের প্রতিবাদ হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে, এমনকি অনলাইন ব্লগ – ফোরামেও। তাই মধ্যবিত্তের কেউ কেউ হয়তো সচেতন হয়েছেন। হিন্দি চ্যানেল দেখছেন না; দেখছেন বাংলা। কিন্তু, বাংলাদেশের চ্যানেল নয়, দেখছেন -ভারতের স্টার জলসা কিংবা জি-বাংলা!
কী আছে এই জি-বাংলায়? কী দেখায়?
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছ’টায় শুরু হয় দিদি নাম্বার ওয়ান; দিদিদের গেম শো।
সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা চলে ডেইলি সোপ; অগ্নিপরীক্ষা, রাশি, কেয়া পাতার নৌকো, কনকাঞ্জলি, সূবর্ণলতা...।
এর বাইরে আছে, দাদাগিরি আনলিমিটেড; কুইজ শো।
এবং মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার; স্ট্যান্ড আপ কমেডি কনটেস্ট।
এসব চলে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত।
ইচ্ছে ছিল, মধ্যবিত্তের টেলিভিশন এবং জীবনে জি-বাংলার প্রভাব নিয়ে লিখবো। প্রস্তুতিও ছিল মনে মনে। কিন্তু, এ সপ্তায় এসে পরিকল্পনা পাল্টাতে হলো।
১ মার্চ ভারত বনধের আহবানে মনে পড়লো মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারে এখনো টিকে থাকা চার বাংলাদেশী প্রতিযোগীর কথা। যত পর্ব দেখেছি তাতে নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের রনি, জামিল, ইশতিয়াক, সজল; এরা অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে গেছে। দৃষ্টি কেড়েছে দর্শকের...।
কিন্তু, সীমান্তে বিএসএফ যখন হাবিবুর রহমানদের ন্যাংটো করে মারে, বিজিবি হাবিলদারদের আধমরা করে ফেরত দেয়, ভারত সরকার নিশ্চুপ থাকে, তখন মীরাক্কেলে আমাদের চার তরুণের অংশগ্রহণকে নিছক বিদ্রুপ মনে হয়। এ যেন এক নিষ্ঠুর অত্যাচারী রাজার বাঈজী গানের আসর। দরিদ্র কৃষক কন্যা নেচে চলেছে অর্থের লোভে কিংবা ভয়ে।
মীরাক্কেল-৬ এ বাংলাদেশের চার প্রতিযোগী;
আবু হেনা রনি,
ইশতিয়াক নাসের,
আনোয়ারুল আলম সজল; এবং
মোঃ জামিল হোসেন;
মীরাক্কেলে আপনাদের গর্ব করে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের রাজশাহী, উত্তরা, নোয়াখালি, কল্যাণপুর- ঢাকা থেকে যাওয়া প্রতিযোগী হিসেবে। আপনাদের কৌতুক শুনে শিস বাজায় রনিদা, ক্যাপ খুলে স্যালুট দেয় পরানদা, লাস্যময়ী হাসি দেয় শ্রীলেখা, কোমর দোলায় মীর। আপনাদের পারফর্ম্যান্সের বিনিময়ে নাচতে নামে দেব এবং শুভশ্রী, অথচ কী চমৎকারভাবে পাবলিসিটি করে খোকাবাবু সিনেমার! খেয়াল করেছেন, রনি-জামিল-ইশতিয়াক-সজল, আপনাদের পুঁজি করে কী বাণিজ্য করে তারা?
আপনারা তো আর দরিদ্র কৃষক কন্যা নন, রাজার অত্যাচারের ভয় তো আপনাদের নেই! আর্থিক প্রাপ্তি কিংবা খ্যাতির মোহ, এটুকু কি ছাড় দিতে পারবেন না আপনারা?
রাজশাহী, উত্তরা, নোয়াখালি, কল্যাণপুর, ঢাকা নয়; এবার মঞ্চে আপনারা বাংলাদেশের মানুষ হয়ে উঠুন।
মানুষ হাসাবার আগে একবার তাকান সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলতে থাকা ফেলানীর লাশের দিকে।
অন্ততঃ একবার দেখুন হাবিবুর রহমানকে ন্যাংটো করে পেটানোর দৃশ্য!
বিএসএফের দাদাগিরি আনলিমিটেড, চলছে-চলবে, দেখে প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছে করবে না আপনাদের?
অর্থ আর খ্যাতির মোহ কাটিয়ে একটিবার কি সমস্বরে প্রতিবাদ করতে পারবেন না?
পারবেন না – বিএসএফপনার প্রতিবাদ জানিয়ে মীরাক্কেলের মঞ্চ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে?
মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে জানাতে পারবেন না যে সীমান্তে বাংলাদেশী নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে আপনারা এ প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন? পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলতে পারবেন না, হাবিবুর রহমানের ঐ ভিডিও দেখার পরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে লোক হাসানোর মত নগ্নতায় আপনাদের আপত্তি রয়েছে?
বলুন তো, রনিদা-পরানদা-শ্রীলেখা আর মীরকে আপনাদের কাতারে এসে দাঁড়াতে। প্রতিবাদ জানাতে। আসবে তারা?
আর মোঃ জামিল হোসেন, আপনাকে বলছি। দেবের আগমনে আপনার সুরময় স্তুতিমালা জি-বাংলার মঞ্চকে তেলতেলে করেছে প্রচুর। আপনার গান শুনে দেব বলেছে, এমন সম্মান আর কোথাও পায়নি সে। তো, এবার একবার দেবকে অনুরোধ করুন তো আপনার সম্মানে ছোট্ট একটা কাজ করতে; ভারত সরকারের কাছে দেব কি অন্ততঃ একবার প্রতিবাদ জানাবে এ মানুষ হত্যার? নির্যাতনের? সঙ্গে যোগ দেবে শুভশ্রী?
আমি সাধারণ এক ব্লগার।
নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানের ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি, মীরাক্কেলের কেউই আপনাদের অনুরোধ রাখবে না, সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাবে না।
তাই, অনুরোধ রাখছি – আপনারা ৪ জনই প্রতিবাদ জানান।
আমাদের নেত্রীদের দিদি নাম্বার ওয়ানের দৌড় প্রতিযোগিতার দর্শক হয়ে নয়, সরকারের মুখপাত্রদের কনকাঞ্জলিসুলভ লেইম বিবৃতির অপেক্ষায় নয়।
নিজস্ব অবস্থানে আপনারাই জেগে উঠুন।
চিৎকার করুন।
প্রতিবাদ জানান।
নিন্দা জানিয়ে মীরাক্কেলের মঞ্চ ছেড়ে আসলে আপনাদের প্রতিবাদ হবে ভারতীয় মিডিয়ায়, অন্ততঃ একটি টিভি চ্যানেলে, বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের প্রতিবাদ।
আপনারা, পারবেন?
ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভি বাংলার স্লোগান। গত দু’বছর ধরে ঢাকার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি অংশের ওপর চোখ রেখে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, এদের অনেকের জীবন এখন আসলেই জি-বাংলা হয়ে গেছে।
এর আগে গত দুই দশক ধরে স্টার প্লাস, জিটিভি এশিয়া প্যাসিফিক, আর সনি চ্যানেলের কূটনামী ভরা ডেইলি সোপগুলো গিলছে আমাদের দর্শক। গোপী বউ, রাশি আর মোটা ভাবী খুব সঙ্গোপনে প্রভাব ফেলছে আমাদের সমাজ কাঠামোয়। ঢাকায় তাই “স্টার প্লাস” দোকানে রাশি, গোপী, কোকিলা শাড়ির রমরমা ব্যবসা। শিশুরা হরহামেশা হিন্দি শিখছে ডোরেমন দেখে। তারও আগে চালু হয়ে গেছে কিড-জি স্কুল। এসবের প্রতিবাদ হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে, এমনকি অনলাইন ব্লগ – ফোরামেও। তাই মধ্যবিত্তের কেউ কেউ হয়তো সচেতন হয়েছেন। হিন্দি চ্যানেল দেখছেন না; দেখছেন বাংলা। কিন্তু, বাংলাদেশের চ্যানেল নয়, দেখছেন -ভারতের স্টার জলসা কিংবা জি-বাংলা!
কী আছে এই জি-বাংলায়? কী দেখায়?
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছ’টায় শুরু হয় দিদি নাম্বার ওয়ান; দিদিদের গেম শো।
সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা চলে ডেইলি সোপ; অগ্নিপরীক্ষা, রাশি, কেয়া পাতার নৌকো, কনকাঞ্জলি, সূবর্ণলতা...।
এর বাইরে আছে, দাদাগিরি আনলিমিটেড; কুইজ শো।
এবং মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার; স্ট্যান্ড আপ কমেডি কনটেস্ট।
এসব চলে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত।
ইচ্ছে ছিল, মধ্যবিত্তের টেলিভিশন এবং জীবনে জি-বাংলার প্রভাব নিয়ে লিখবো। প্রস্তুতিও ছিল মনে মনে। কিন্তু, এ সপ্তায় এসে পরিকল্পনা পাল্টাতে হলো।
১ মার্চ ভারত বনধের আহবানে মনে পড়লো মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারে এখনো টিকে থাকা চার বাংলাদেশী প্রতিযোগীর কথা। যত পর্ব দেখেছি তাতে নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের রনি, জামিল, ইশতিয়াক, সজল; এরা অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে গেছে। দৃষ্টি কেড়েছে দর্শকের...।
কিন্তু, সীমান্তে বিএসএফ যখন হাবিবুর রহমানদের ন্যাংটো করে মারে, বিজিবি হাবিলদারদের আধমরা করে ফেরত দেয়, ভারত সরকার নিশ্চুপ থাকে, তখন মীরাক্কেলে আমাদের চার তরুণের অংশগ্রহণকে নিছক বিদ্রুপ মনে হয়। এ যেন এক নিষ্ঠুর অত্যাচারী রাজার বাঈজী গানের আসর। দরিদ্র কৃষক কন্যা নেচে চলেছে অর্থের লোভে কিংবা ভয়ে।
মীরাক্কেল-৬ এ বাংলাদেশের চার প্রতিযোগী;
আবু হেনা রনি,
ইশতিয়াক নাসের,
আনোয়ারুল আলম সজল; এবং
মোঃ জামিল হোসেন;
মীরাক্কেলে আপনাদের গর্ব করে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের রাজশাহী, উত্তরা, নোয়াখালি, কল্যাণপুর- ঢাকা থেকে যাওয়া প্রতিযোগী হিসেবে। আপনাদের কৌতুক শুনে শিস বাজায় রনিদা, ক্যাপ খুলে স্যালুট দেয় পরানদা, লাস্যময়ী হাসি দেয় শ্রীলেখা, কোমর দোলায় মীর। আপনাদের পারফর্ম্যান্সের বিনিময়ে নাচতে নামে দেব এবং শুভশ্রী, অথচ কী চমৎকারভাবে পাবলিসিটি করে খোকাবাবু সিনেমার! খেয়াল করেছেন, রনি-জামিল-ইশতিয়াক-সজল, আপনাদের পুঁজি করে কী বাণিজ্য করে তারা?
আপনারা তো আর দরিদ্র কৃষক কন্যা নন, রাজার অত্যাচারের ভয় তো আপনাদের নেই! আর্থিক প্রাপ্তি কিংবা খ্যাতির মোহ, এটুকু কি ছাড় দিতে পারবেন না আপনারা?
রাজশাহী, উত্তরা, নোয়াখালি, কল্যাণপুর, ঢাকা নয়; এবার মঞ্চে আপনারা বাংলাদেশের মানুষ হয়ে উঠুন।
মানুষ হাসাবার আগে একবার তাকান সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলতে থাকা ফেলানীর লাশের দিকে।
অন্ততঃ একবার দেখুন হাবিবুর রহমানকে ন্যাংটো করে পেটানোর দৃশ্য!
বিএসএফের দাদাগিরি আনলিমিটেড, চলছে-চলবে, দেখে প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছে করবে না আপনাদের?
অর্থ আর খ্যাতির মোহ কাটিয়ে একটিবার কি সমস্বরে প্রতিবাদ করতে পারবেন না?
পারবেন না – বিএসএফপনার প্রতিবাদ জানিয়ে মীরাক্কেলের মঞ্চ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে?
মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে জানাতে পারবেন না যে সীমান্তে বাংলাদেশী নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে আপনারা এ প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন? পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলতে পারবেন না, হাবিবুর রহমানের ঐ ভিডিও দেখার পরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে লোক হাসানোর মত নগ্নতায় আপনাদের আপত্তি রয়েছে?
বলুন তো, রনিদা-পরানদা-শ্রীলেখা আর মীরকে আপনাদের কাতারে এসে দাঁড়াতে। প্রতিবাদ জানাতে। আসবে তারা?
আর মোঃ জামিল হোসেন, আপনাকে বলছি। দেবের আগমনে আপনার সুরময় স্তুতিমালা জি-বাংলার মঞ্চকে তেলতেলে করেছে প্রচুর। আপনার গান শুনে দেব বলেছে, এমন সম্মান আর কোথাও পায়নি সে। তো, এবার একবার দেবকে অনুরোধ করুন তো আপনার সম্মানে ছোট্ট একটা কাজ করতে; ভারত সরকারের কাছে দেব কি অন্ততঃ একবার প্রতিবাদ জানাবে এ মানুষ হত্যার? নির্যাতনের? সঙ্গে যোগ দেবে শুভশ্রী?
আমি সাধারণ এক ব্লগার।
নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানের ওপর ভরসা রেখে বলতে পারি, মীরাক্কেলের কেউই আপনাদের অনুরোধ রাখবে না, সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাবে না।
তাই, অনুরোধ রাখছি – আপনারা ৪ জনই প্রতিবাদ জানান।
আমাদের নেত্রীদের দিদি নাম্বার ওয়ানের দৌড় প্রতিযোগিতার দর্শক হয়ে নয়, সরকারের মুখপাত্রদের কনকাঞ্জলিসুলভ লেইম বিবৃতির অপেক্ষায় নয়।
নিজস্ব অবস্থানে আপনারাই জেগে উঠুন।
চিৎকার করুন।
প্রতিবাদ জানান।
নিন্দা জানিয়ে মীরাক্কেলের মঞ্চ ছেড়ে আসলে আপনাদের প্রতিবাদ হবে ভারতীয় মিডিয়ায়, অন্ততঃ একটি টিভি চ্যানেলে, বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের প্রতিবাদ।
আপনারা, পারবেন?
0 মন্তব্য::
Post a Comment