31 August, 2010

তারপর সেবা রোমান্টিক

হঠাৎ করে আম্মার জ্বর আবার ফিরে এলো বুধবার রাতে। সাথে সেই পুরনো লক্ষণগুলো। আম্মা এমনিতে হসপিটালে যেতে চায় না। তবে এবার না করলো না। ক্যালেন্ডার মিলিয়ে দেখলাম, ঠিক এক মাস। এক মাস আগে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছিলাম। সেইবার ডেঙ্গুর লক্ষণ, রেস্ট দরকার, হালকা কিছু অসুদ দিয়ে ছেড়ে দিলো। সমস্যাটা বোধ হয় এখানে যে আম্মা রেস্ট নিতে জানেন না। পানি খাওয়ানোটাও বিরাট হ্যাপা। এবার আবার ভর্তি করালাম ইমার্জেন্সিতে। ডাক্তার দেখেই বললো, ট্রাভেল করেছিলেন নাকি? আবারও সেই একই রকম মন্তব্য। নেক্সট কয়েকদিন প্ল্যাটিলেট চেক করাতে হবে, ব্লাড কালচারও করতে হবে...। অন্য কিছু করার নেই।


গত দু’সপ্তাহ ছুটি ছিলো।
চোখের ভাইরাল ইনফেকশন এক সপ্তাহ নিয়ে নিলো। অনেক কিছু লিখে রেখেছিলাম, এই সময়ে করার – দেখার। কিছুই হলো না। শনিবার সকালের দিকে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে যাচ্ছিলাম রিপোর্ট আনতে। রিক্সা নিলাম। সমস্যা হলো, ট্রাফিক পুলিস মোড়ের পরে রিক্সা বামে যেতে দিবে না। অন্য একটা রাস্তা ছিলো, সেদিক দিয়ে গেলেই ভালো হতো, এসব ভেবে ভেবে হাঁটা শুরু করি। রোদের তেজ বাড়ছে, পিঠে শার্ট লেপ্টে যাচ্ছে ঘামে। পথ লম্বা নয় – পাঁচ থেকে সাত মিনিট। ফুটপাথ দখল করে নিয়েছে হকার। এ পাশটায় বইয়ের দোকান আছে ফুটপাথে। আরেকদিন দেখে গিয়েছিলাম। নিউমার্কেটের কাছাকাছি দাম। সিডনী শেলডনের বইগুলো নীলক্ষেত প্রিন্ট, ১০০ টাকা দাম। নিউমার্কেটের ওদিকেও ১০০/১২০ এরকম দাম দেখেছিলাম। হাঁটার গতি কমিয়ে চোখ বুলাই বইয়ে। এক স্তুপ সেবা রোমান্টিকের দিকে চোখ গেলো। হিসেব করে দেখেছি, অনেক কিছু পড়তে দেরি হয়ে যায় কেবল। প্রথম মাসুদ রানা পড়েছি বিশ বছর বয়সে! ছোটোকাকা সেই কবে তিন গোয়েন্দা ছুড়ে ফেলে দিলো, হাতে দিলো জিম করবেটের কুমায়ুনের মানুষখেকো, এইচ জি ওয়েলসের টাইম মেশিন। আশেপাশের কোনো এক সপ্তায় বিটিভিতে দেখালো আজাদ আবুল কালাম অভিনীত নাটক। যেখানে তুষার খান থ্রিলার রাইটার। আবুল হায়াতের ছেলে আজাদ আবুল কালাম এ-লেভেল দিয়েছে। কিন্তু, ঐ থ্রিলারের নায়কের মতো একদিন মানুষ খুন করে ফেলে সে, বিচারে ফাঁসি হয়। আবুল হায়াত মামলা করে লেখক তুষার খানের বিরুদ্ধে। লেখকের কোনো শাস্তি হয় না। শেষ দৃশ্যে, আজাদ আবুল কালাম জেলের গ্রিল ধরে কাঁদতে থাকে- টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার...। নাটকের নাম ভুলে গিয়েছি। কলেজের প্রথম সপ্তায়, আহসান হাবীব স্যার যারা মাসুদ রানা পড়ে তাদের জন্য কী এক বিশাল ওয়াজ করে দিলেন। আশরাফ ভাই বললেন, দুই ধরনের ছেলের সাথে মিশবিনা – যারা সিগারেট খায় – যারা মাসুদ রানা পড়ে। মাসুদ রানা পড়া মানে – পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেইল। সুবোধ সময়ে তাই হুমায়ূন পড়ি, মিলন পড়ি, শীর্ষেন্দু পড়ি, হুমায়ূন আজাদ পড়ি। পরে সমরেশও পড়ি। কিন্তু, মাসুদ রানা পড়তে দেরি হয়ে গেলো অনেক। এর পরে বেশ কিছু মাসুদ রানা পড়েছি, এখনো পড়ি, বিরক্তি লাগে না। তবে বন্ধুদের মুখে শুনেছি আরেক নিষিদ্ধ সেবা রোমান্টিক। সেবা রোমান্টিকও পড়া হয়নি আমার, এর অন্যতম কারণ - সম্ভবত হাতের কাছে পাইনি কখনো। এবারের বইমেলায় সেবার স্টলেও পাইনি, রোমান্টিক সিরিজের কোনো বই-ই প্রিন্টে নাই। জানার আগ্রহ ছিলো – বইগুলো কেমন হয়, কী নিয়ে লিখে। রাজশাহী ট্রেন স্টেশনে ট্রেনের সময় যখন মিললো না, বইয়ের স্টলে বই দেখছি, কিনলামও কয়েকটা অনুবাদ, অয়ন বললো – সেবা রোমান্টিক হলো অমিত আহমেদের গন্দমের মতো। প্রেমের আখ্যান।


শনিবার সকালে রাস্তার পাশে এতগুলো সেবা রোমান্টিক দেখে হাতে নিলাম। বেশিরভাগের অবস্থা ভয়াবহ, অনেক পুরনো। একটার কভারই নেই। সন্দেহ জাগলো, ভেতরের পাতা ঠিকমতো আছে কিনা। আরো খানিক উলটে পালটে পাঁচটা সেবা রোমান্টিক কিনলাম – রোকসানা নাজনীনের ‘এ মণিহার’, খন্দকার মজহারুল করিমের ‘কঙ্কাবতী’, ‘ময়ূরী রাত’, ‘সব মানুষের পৃথিবী’, শেখ আবদুল হাকিমের ‘অন্তরা’। সঙ্গে একটা গল্পগ্রন্থ কাজী মায়মুর হোসেনের ‘ওস্তাদের মার’। গল্পগ্রন্থটার অবস্থা বেশ ভালো, দেখতে নতুনের মতোই লাগে। বাকীগুলোর একটু টেপ-টুপ লাগাতে হবে। সব মিলিয়ে ছয়টা বইয়ের দাম, দরাদরি শেষে, ৬৫ টাকা। বাসায় ফিরে ‘ওস্তাদের মার’ বইয়ের ভূমিকায় পড়লাম হেলেন নিলসের লেখা দ্য মাস্টার্স টাচ অবলম্বনে লেখা ‘ওস্তাদের মার’ গল্পটি। মোট চৌদ্দটা গল্পের দুইটা মৌলিক, বাকী বারোটা অনুবাদ বা রূপান্তর। মৌলিক গল্প ‘স্মৃতি’ পড়লাম প্রথমে। নয় পৃষ্ঠার গল্প। হতাশ হলাম। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত গল্প আরো স্মার্ট হওয়া উচিত ছিলো। এমনকি গত চার বছরে ব্লগের আনকোরা অনেক লেখকও এরচেয়ে ভালো গল্প লিখেছেন। অন্য গল্প পড়তে আগ্রহ পেলাম না। বাকী বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখলাম। এই প্রথম চোখে পড়লো, সেবা’র বেশিরভাগ বইগুলো কাউকে উৎসর্গ করা হয় না।


গল্প/উপন্যাস পড়তে গেলে যেটা প্রথমেই দেখে নিই – কতো সালের লেখা। সঙ্গে, গল্পের প্লটের সময়টাও অনুমান করার চেষ্টা করি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখক নিজেই সময় বলে দেন। আবার কোনো ক্ষেত্রে অনুমান করে নিতে হয়। কিছু কিছু প্লটের সময় খুব জরুরী কিছু নয়। শুরু করেছিলাম রোকসানা নাজনীনের ‘এ মণিহার’ দিয়ে। ১৯২ পৃষ্ঠা, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৫। সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর কাগজের মান খারাপ, সেজন্য হয়তো দাম কম। কিন্তু, অনন্য দিকটা হলো ব্যাক-কভারে লেখা সার সংক্ষেপগুলো। ভীষণ আকর্ষণীয় হয় পেছনের লেখাটুকু, বই পড়তে আগ্রহ জাগায়। ‘এ মণিহার’এ লেখা আছে –


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আরশি আমিন
শয়নে-স্বপনে মজে থাকে ওর মায়ের জন্মভূমি স্পেনের
কল্পনায়।
সে সূত্রেই বন্ধুত্ব হলো স্প্যানিশ ভিজিটিং প্রোফেসার এমিলিও
সিয়েরার সঙ্গে। কিন্তু তিনি বিয়ের প্রস্তাব দিতেই তেলে-
বেগুনে জ্বলে উঠল আরশি, নিষ্ঠুরের মত ফিরিয়ে দিল তাঁকে।
সেরাতেই আরিচা রোডে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেন
সিয়েরা। পুলিশের ধারণা সেটা আত্মহত্যা।
বিবেকের দংশনে জ্বলছিল আরশি, তখনই জানতে পারল
জীবনবীমার পুরো টাকাটা ওকেই দিয়ে গেছেন সিয়েরা।
এত টাকা গ্রহণ করতে বাধল ওর, বাবার সঙ্গে পরামর্শের পর
ঠিক করল স্পেনে গিয়ে এমিলিও সিয়েরার পরিবারকে
খুঁজে বের করবে – ওদের হাতেই তুলে দেবে টাকাটা।
তারপর? ও কি ভাবতে পেরেছিল, এত আচমকা, এমন
অপ্রস্তুত অবস্থায় এসে হাজির হবে প্রথম প্রেম!




এই হলো কাহিনী। মাঝপথে কাহিনী কিছুটা ঝুলে গেছে, নইলে মোটামুটি গতিময় কাহিনী। স্পেনে গিয়ে এমিলিওর পরিবার খুঁজে বের করতে খানিক চক্করে পড়তে হয় আরশিকে। তবে তার আগেই প্রেম করে বিয়ে করেছে এমিলিওর ছোটো ভাই লরেন্সকে। সেখানে কিছু দ্বন্দ্ব কিছু সন্দেহ আসে যখন পরিচয় প্রকাশিত হয় আর তারও আগে ঢাকা থেকে লরেন্সের প্রাইভেট ডিটেকটিভ রিপোর্ট পাঠায় এমিলিওর খুনের জন্য দায়ী আরশি নামের মেয়েটি। এর বাইরে অন্য কোনো চমক নেই, অপেক্ষা নেই, একটানা সরল গতিতে কাহিনী এগিয়ে গেছে। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম এটি কোনো মৌলিক কাহিনী নাকি বিদেশী কোনো কাহিনীর রূপান্তর। বইতে কোনো ইংগিত পেলাম না। কারণ, স্পেনের প্রত্যন্ত গ্রাম বাস্ক কিংবা যুবিলিয়ায় যাওয়ার যে বিবরণ, দূর্বোধ্য এসকুয়ারা ভাষার অনুবাদ গান, সামাজিক আচার, এগুলো কি না দেখে লেখা সম্ভব? আরেকটা হতে পারে লেখক নিজেই ঘুরে এসেছেন, জানেন ওসব ভাষা কিংবা প্রচুর স্টাডি করেছেন...। তবে অমনটি হওয়ার সম্ভবনা কেমন সেটাই বড় প্রশ্ন। এই উপন্যাসের চোখে লাগার মতো একটা ভুল হলো – শুরুতেই বলা আছে, আরশির মা (স্প্যানিশ মহিলা) মারা গিয়েছিল আরশির জন্মের সময়। কিন্তু, এরপরে পুরো উপন্যাসে বিবরণ এসেছে কীভাবে আরশিকে তার মা স্প্যানিশ ভাষা শেখাতো, এসকুয়ারা গান শেখাতো, এসেছে মায়ের অনেক স্মৃতি। নিজের খটকা কাটাতে আবার দেখেছি, কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা। দেখলাম, নাহ! ঠিকই পড়েছি। ব্যক্তিগত রেটিং দেবো – পাঁচে আড়াই।


পরদিন পড়লাম ‘কঙ্কাবতী’।
রচনাকাল ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ১৫২।
পেছনে লেখা সংক্ষেপ পড়ি-
হৃদয়-উষ্ণ-করে-দেয়া আরও একটি রোমান্টিক উপন্যাস
লিখেছেন আধুনিক পাঠকের প্রিয় লেখক।
কাহিনী?
এক মধুর লগ্নে রেজার সঙ্গে কঙ্কাবতীর আলাপ। তার মধ্যে
রেজা খুঁজে পায় রাজকন্যেকে আর কঙ্কাবতী রেজার
মুখে আবিষ্কার করে বীর রাজকুমারের প্রতিচ্ছায়া – যে কীনা
যুদ্ধে জিতে দেশ শত্রুমুক্ত করে ফিরে এসেছে।


ওদের মিলন হবার কথা, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মুখে বোমার
মত ফেটে পড়ে একটি সংবাদঃ
কঙ্কাবতীর বিয়ে হয়েছিল কৈশোরে।
কারুর ষড়যন্ত্র নয়, সত্যি সত্যি, অনেক সাক্ষীও আছে।
এখন কী করবে রাজপুত্র আর রাজকন্যা?
চলুন, ওদেরই জিজ্ঞেস করি।
ভাল কথা, হাতে কিন্তু সময় থাকা চাই, কারণ
একবার শুরু করলে তো...




‘কঙ্কাবতী’ উপন্যাসের কাহিনী ‘এ মণিহার’এর চেয়েও সরল। যেনো উডেন ফ্লোরের উপরে মার্বেল ছেড়ে দিলে যেমন গড়গড়িয়ে চলে যাবে সেরকম। সময় ধরার চেষ্টা করছিলাম। বলা আছে, উপন্যাসে বর্তমানের কঙ্কাবতীর বয়স বিশ, আর যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৭। যোগ করলে কাহিনী দাঁড়ায় ১৯৮৪ সালের। সময় নিয়ে খাপছাড়া কিছু নেই। কিন্তু, পাঠক হিসেবে বিরক্ত লেগেছে ৮৪ সালের প্রেমের গল্প বলতে গিয়ে পাতার পরে পাতা একাত্তুরের যুদ্ধকে নিয়ে আসা। আমাদের গৌরব মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আসা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, কাহিনীর যে প্রেক্ষিতে নিয়ে আসা হয়েছে, তার তুলনায় যুদ্ধের গোলাগুলি অ্যাকশনের যে বিস্তার দেয়া হয়েছে সেটা কঙ্কাবতীর পাঠককে বিরক্ত করে। মনে হয়েছে, এতো অধ্যায়ের পরে অধ্যায় না লিখে বরং এক পৃষ্ঠায় একাত্তুরের কঙ্কাবতী গল্প বলা যেতো। আবার এমনও হয়েছে উপন্যাসের বর্তমান সময় বলতে যুদ্ধের পনের-ষোল বছর বলা হয়েছে। আরেকটি প্রশ্ন হলো, ব্যাক-কভারে কঙ্কাবতীর কৈশোরে বিয়ের কথা বলা আছে। সাত বছর বয়স কি কৈশোর না শিশুকাল? ব্যক্তিগত রেটিং দেব – পাঁচে দেড়।


একদিন বিরতি দিয়ে শুরু করলাম খন্দকার মজহারুল করিমেরই ‘ময়ূরী রাত’।
প্রকাশকাল ১৯৯৩, পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৯২।
এটার প্রচ্ছদ পাতা নেই, ছিড়ে গেছে। তবুও পড়া শুরু করলাম –


ঐতিহাসিক নীলকুঠি দেখতে এসে সাংবাদিক
আনিসের প্রেমে পড়ল নীলা।
দিগন্ত-ছোঁয়া দিঘি আর প্রাচীন জমিদার বাড়ির মায়াবী
হাতছানিতে দুটো স্বপ্ন মিলেমিশে একাকার হল।


পরিপার্শ্বের বাধা ছিল অনেক, তবুও নীলা
নিজের সিদ্ধান্তে অটল।
আনিসের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল ওর।


কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা গেল মায়াবী
স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে।
গভীর রাতে ওদের ঘুম ভেঙে যায় কার পায়ের শব্দে।
জানালার কাচ ভেঙে চুরমার হয়, এগিয়ে আসে
একখানা কালো হাত...


অনন্ত দুঃখনিশায় পরিণত হয় ময়ূরী রাত।




এ পর্যন্ত পড়া তিনটি উপন্যাসের মধ্যে এটাই স্মার্টলি লেখা। গদ্য এবং কাহিনীর বুনটে কৌশল আছে। বিবরণে লেখক ছিমছাম থেকেছেন। লায়লা বানুর সংলাপ বিবরণে ভয় ধরাতে পেরেছেন। এজন্য স্যালুট। ১৯২ পৃষ্ঠার উপন্যাসের চার ভাগের তিনভাগ না পেরুতেই নায়িকাকে মেরে ফেলে লেখক চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। এ চ্যালেঞ্জ পাঠককে ধরে রাখার। বাকী পৃষ্ঠাগুলোয় কেবল খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আমি অবশ্য পড়তে গিয়ে টের পাচ্ছিলাম বদরুল কী কী ঘটাতে যাচ্ছে। বদরুল এর চরিত্রটিও ব্যতিক্রম। ঠান্ডা মাথার ভিলেন। টানা আড়াই ঘন্টায় পড়ে শেষ করলাম ‘ময়ূরী রাত’। খন্দকার মজহারুল করিমের দুটো বই পরপর পড়লাম বলেই চোখে পড়লো, নায়িকা তার প্রেম প্রত্যাশী ছেলেটিকে প্রত্যাখান করবে, তার বিবরণে বলা আছে “...সুডৌল পিঠ কখনো ওর দিকে ফেরাতে পারে না”। একজন লেখকের একাধিক বইয়ে একই রকম বিবরণ, সংলাপ, রসিকতা থাকলে পাঠক হিসেবে বিরক্ত হই। এর পরেও স্মার্ট উপন্যাসটিকে পাঁচে চার নম্বর দেবো।


সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর নিজস্ব কিছু ভাষা আছে। যেমন ‘শ্রাগ করল’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাবজেক্ট থাকে বাক্যের শেষে। মাসুদ রানার জন্য এটা মনে হয় স্ট্যান্ডার্ড; যেমন- ঘুরলো রানা, দেখলো ওর দিকে তাকিয়ে আছে সোহানা। ওর/ওঁ/উনি এগুলোও সেবার বইয়ে থাকে। সেবা রোমান্টিকে সাবজেক্টকে বাক্যের শেষে দেয়ার প্রবণতা চোখে পড়লো না। গতমাসে যখন হ্যানরি রাইডার হ্যাগার্ডের ‘এলিসা’ পড়ছিলাম সেবার রূপান্তরে সেখানেও এই একই প্রবণতা দেখেছি।


মাত্র তিনটি বই পড়ে সেবা রোমান্টিক নিয়ে কোনো উপসংহারে যেতে পারছি না।
প্রেমের এ উপন্যাসগুলোকে কেনো ‘রোমান্টিক’ ট্যাগ দেয়া হয় সেটা ভাবছিলাম। হয়তো নায়ক নায়িকার খানিক ঘনিষ্ঠতার বিবরণ থাকে, কোমরে হাত দেয়, ঘাঁড়ে ঠোঁট রাখে, ঠোঁটে চুমু দেয়, বিছানায় নায়িকার পিঠে নায়ক নাক ঘষে, নায়িকা চুল আঁচড়ানোর সময় পিঠে কেমন ঢেউ উঠে তার বিবরণ থাকে – বলেই রোমান্টিক ট্যাগ থাকে। কিন্তু, আমার কাছে মনে হলো এরচেয়ে আরো শরীরি বর্ণনার বই লেখা হয়েছে সাদামাটা উপন্যাস হিসাবে। বইগুলো লেখার সময় ১৯৯৩/৯৫ বলেই হয়তো এমন। এখানকার সেবা রোমান্টিক কেমন হয় সেটাও দেখার দরকার। আরেকটি ব্যাপার হতে পারে পাঠকের বয়স। ক্লাস সেভেনে খন্দকার মজহারুল করিমের (সম্ভবত) লেখা ‘হৃদয়ের কথা’ উপন্যাসে নায়ক নায়িকার ঘনিষ্ঠতার বিবরণ পড়ে যে নিষিদ্ধ আনন্দ পেয়েছিলাম, তা কি এখন সম্ভব! হাহাহা! “নদী বয়ে যায়, তরঙ্গ জানে না সমুদ্র সে কোথায়!”


উপহার হিসেবে বইয়ের কদর সম্ভবত কমছে দিনদিন। সিডি-ডিভিডির দিন এখন। রোকসানা নাজনীনের ‘এ মণিহার’ উলটে দেখলাম বলপয়েন্ট কলমে লেখা, “Rahee জন্মদিনের শুভেচ্ছা Sampa”। এতদিন ধরে এই বই কার কাছে ছিল, কোথায় ছিলো, কে কে পড়েছে? সঙ্গে এ’ও মনে প্রশ্ন জাগলো রাহী সম্পা তারা কারা? ভাই-বোন, বন্ধু, নাকি প্রেমিক প্রেমিকা? কোথায় আছে তারা, কেমন আছে?


.
.
.

0 মন্তব্য::

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP