03 December, 2009

পাঠ প্রতিক্রিয়া : আজগুবি রাত

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখা নিয়ে নির্মোহ মন্তব্য প্রকাশে বরাবরই আমি ব্যর্থ। এর মূল কারণ – শুরুতেই এমন একটি ধারণা নিয়ে পড়া শুরু করি, মনে হয় – পাঠক হিসেবে আমার প্রত্যাশার সবটুকুই পূর্ণ হবে। এ তীব্র পক্ষপাতের ঘোরতর সমস্যাটি হলো, একবার হতাশ হলে আরেকবার মুগ্ধ হওয়ার সম্ভবনা বিলীন হয়ে যায়। পাঠক হিসেবে আমার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে একজন জনপ্রিয় এবং আরেকজন সম্ভবনাময় তরুণ লেখকের গদ্য পাঠে।

এবার যখন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের উপন্যাস ‘আজগুবি রাত’ পড়া শুরু করলাম, অদ্ভুতভাবে মনে হতে লাগলো – মুগ্ধতার পরিসমাপ্তি এবার ঘটতে যাচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ যেমন বিভিন্ন নামে একই উপন্যাস লিখে যান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও সম্ভবত সে পথ ধরেছেন। আগে পড়া তাঁর ‘আধখানা মানুষ’ উপন্যাসের শুরুর সাথে, যেখানে প্রবল গতিতে তেড়ে আসা নদীর ঢেউ আঘাত করে গ্রামের সীমান্তে – ভাঙনের শব্দ শুনেও মানুষ নিশ্চিত হতে পারে না এ কীসের শব্দ – গ্রামের মাঝখানের কুলিং কর্ণারে বসে একটু আগে কোক খাওয়া মানুষটি ভেবেছিলো বুঝি তার পেট থেকে কোকের ঢেকুর উঠছে, ঠিক এরকমই মনে হয় ‘আজগুবি রাত’এর শুরুর একটু পরের অংশকে। প্রবল বেগে আসছে ঘূর্ণিঝড় সারিকা। দুবলার চরে ‘সমুদ্রকন্যার মন’ ছবির শ্যুটিং করতে আসা একদল ফিল্মী মানুষকে ‘আধখানা মানুষ’এর গ্রামবাসী মনে হয় তখন। অবশ্য ‘আজগুবি রাত’এর সূচনা অন্যভাবে। চতুর্থ পরিচ্ছেদ পড়ার পর জেগে ওঠা হতাশাকে যাচাইয়ে আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করি –

“বলেশ্বর দিয়ে ভাসতে ভাসতে নূর বানুর কাটা হাত পাথরঘাটার খেয়াঘাটে এসে ঠেকল। অন্তত দুদিন হাতটি নদীতে ভেসেছে – ভেসেছে কেন, ডোবাই তো উচিত ছিল – সে এক রহস্য।“

শুরুতে এমন রহস্য এবং কিছু প্রশ্ন রেখে উপন্যাসের শুরু। এরপর দ্বিস্তর বিশিষ্ট বয়ানে একদিকে থাকে নূর বানু ও তার স্বামী ইকবালুর রহমানের সংসার, আদর ও অনাটনের সংকট। অন্যদিকে বলেশ্বরের এক মাইল উজানে নূর বানুর কাটা হাত পেয়ে দ্বিধায় পড়া মাঝি তোশাররফ, জনৈক সজ্জন, আরো সময় পরে - থানার ওসি, এ সময়ের হার্টথ্রব নায়ক ফিল্মের হিরো লাকি খান। কাটা হাতটি কার হতে পারে এমন নানা জল্পনায় সংকট প্রবল হয় ঘূর্ণিঝড় সারিকার আগমনী সংকেতে। সারিকা মোকাবেলায় করণীয় এবং প্রস্তুতিতে প্রতিমন্ত্রীর ফোন, ঘটনাক্রমে থানার কাছে থাকা দূর্যোগ সচিব, ইউ এন ও, সোনারবাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার সাবরিনা – আসলাম এবং এরকম আরো অনেকে থানায় হাজির হলে সারিকা নয় বরং কাটা হাতটি কার, কেনো এ হাত কাটা, কোত্থেকে এলো এ হাত – এসব প্রশ্ন প্রধান হয়ে ওঠে। আরো অদ্ভুতভাবে উপস্থিত সকলে সঙ্গোপনে কাটা হাতটির সঙ্গে নিজের জীবনের কোনো এক ঘটনার মিল পায়, দ্বিধাগ্রস্ত হয়।

নুর বানুর কাটা হাতের রহস্য উন্মোচনে উপন্যাসে যতোটা গতি এবং অস্থিরতা – ঠিক ততোটাই স্থির নুর বানু আর ইকবালের সংসারী জীবন। নুর বানুর ঘরে, উঠানে এবং বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তায় কী হয় না হয় তার সবই দেখে কানা রাইসু। কানা রাইসু, যার বয়স এখন দশ, নিরবে নির্জনে বসে থাকে নুর বানু ও ইকবালুর রহিমের বাড়ির উঠানের উলটা দিকে অঘন জঙ্গলের পাশের বিলাতি আমড়া গাছের নিচে বছরের পর বছর। কানা রাইসু সেখানে বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজে, আবার পরদিন রোদে শুকায়। কখনো ঘুমায় কিনা তার ঠিক নেই, তবে কানা রাইসু সব দেখে। দেখে - নুর বানুর সংসারের সকাল-দুপুর বিকাল, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত। নুর বানুকে বেশ কয়েকবার কানা রাইসুর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু অন্য কেউ কি কানা রাইসুকে দেখে না? নাকি দেখলেও তুচ্ছতার কারণে মনোযোগ দেয় না? উপন্যাসটি পড়তে পড়তে হঠাৎ করে মনে হয়, কানা রাইসু হয়তো কোনো মানুষ নয়। কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকা কোনো গাছ, ঘাট কিংবা অন্য কোনো জড়বস্তুর কল্পিত মানবরূপ! সারিকার তান্ডবের সূচনায় ‘আজগুবি রাত’ এর আখ্যান শেষ হয়। নূর বানুর কাটা হাতের রহস্যময়তা এবং অন্যান্য সমূহ সংকটের কিছু কিছু সমাপ্তিও হয়তো হয়, কিন্তু পাঠকের মনে দাগ কেটে যায় কানা রাইসু – সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের এক দূর্দান্ত সৃষ্টি এই কানা রাইসু। অভিনন্দন জানুন, লেখক!

‘আজগুবি রাত’ পড়েছি প্রায় মাসখানেক হলো।
পড়ার পরপরই দুটো বিষয়ে প্রশ্ন জাগে। মনে হয় – এ নিতান্তই লেখকের অমনোযোগীতা। প্রথমতঃ উপন্যাসের একেবারে শুরুর এ অংশ –

“...আর নূর বানুর হাত যে নূর বানুর হাত, সে কথাটাও এক কানা রাইসু ছাড়া -এবং আমি ছাড়া - কেউ-ই তো জানে না। আর কানা রাইসুর জানা আর আমার জানা তো একই কথা, যদিও তার বয়স মাত্র দশ, আমার যেখানে...। যা হোক, বয়সের কথা থাক... নূর বানুর বয়সের কথাই না হয় বলি।”

এটি উপন্যাসের চতুর্থ বাক্য। স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে উত্তম পুরুষে বলা হবে বাদবাকী গল্প। কিন্তু, কথক নিজের বয়স না বলে যেখানে থামলো, তারপর আর ফিরলো না – সারিকার তান্ডবেও না।

অন্য প্রশ্নটি –
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের গল্পের মানুষগুলোর নাম বরাবরই যথার্থ মনে হয়। নূর বানু গরীবের মেয়ে, লাকি খান ফিল্মের হিরো, ভিলেন সম্রাট আনজাম, বিউটি কুইন আলপনা; নামগুলো শুনলে মনে হয় – এমনই তো হওয়ার কথা। লেখকের এ সচেতনতার কারণেই উপন্যাস বয়ানে পড়ি – লাকি খান ‘দেখলেন’, ওসি ‘বললেন’, সচিব ‘শুনলেন’ এবং এই ধারাবাহিকতায় নূর বানু এবং তার গরীব স্বামী ইকবালুর রহমান ‘দেখল’/’বলল’/’শুনল’। অথচ, উপন্যাসের একেবারে শেষ প্যারায় –

“শুধু ইকবাল দেখলেন, তিনি নূর বানুর আঙুলে আঙুল বুনে পাথরঘাটার আকাশ দিয়ে উড়ছেন। তাঁর পেছনে অজগরের সে ফনা।”

হতাশ হওয়ার যে শংকা শুরুতেই জেগেছিলো মনে, যে শংকা মনোযোগ বাড়িয়েছে পাঠে, তা কেটে গেছে মাঝামাঝি পর্যায়ে। কানা রাইসুর কারণে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অন্যান্য উপন্যাস (যা পড়েছি) থেকে ‘আজগুবি রাত’কে এগিয়ে রেখেছি। কিন্তু, প্রশ্ন দুটি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছিলো। সপ্তাহ খানেক আগে, সম্ভবত ট্রাফিক জ্যামে বসে বসে অপেক্ষায়, এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি নিজের মনে।

লেখকের জন্য তাই আরো এক দফা অভিনন্দন।

Read more...

08 September, 2009

মৃতগল্প এবং সোডিয়াম স্বপ্নের জন্য এলিজি

গল্পটির নাম ‘মৃত্যুর তারিখসমূহ জেনে যাওয়ার পর’।
শুরুতে ভেবেছিলাম, এ গল্প লেখা খুব কঠিন হবে না। ক্রমাগত মাথার ভেতর যন্ত্রণা করে গেলে, একটা দৃশ্যের পর আরেকটা দৃশ্য, ঘটনা এবং সংলাপ ফিরে এলে দ্রুত গল্প সাজানো যায়। আমি হয়তো কনরয় স্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি – তখন গল্পের একটা মোড় আসে। অথবা ট্রেন শেপার্ড স্টেশনে পৌঁছে গেছে – আমাকে নামতে হবে, তখন আবার গল্পের প্রথম অংশকে মাঝে এনে শুরুটা অন্যভাবে করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শুরুটা পালটে দিলে শেষটায় কী হবে, এসব ভেবে ভেবে ম্যাডিসন স্কয়ারের ২৩০৬ নম্বর রুমে চলে যাই। এরপর আরো ৮ ঘন্টা একটানা কাজে পার হলে ঘরে ফিরি। এভাবেই গল্প থাকে মাথার ভেতর।

গল্পের নামটি বেশ লম্বা। তবে নামের মধ্যে একটা আহবান আছে, গল্প পাঠের প্রস্তুতি আছে। সম্ভবনা থাকে গল্পের নাম দেখেই পাঠক অনুমান করবে – কেউ একজন মৃত্যুর তারিখ জেনে গেছে এবং এরপরে কী হবে তা নিয়ে গল্প। এখানে একটু খটকা থাকে, বলা আছে ‘তারিখসমূহ’ – অর্থ্যাৎ মৃত্যুর একাধিক তারিখ জেনে গেছে। খুব সম্ভবত একদল মানুষ তাদের মৃত্যুর তারিখ জেনে গেছে। আরোগ্য সম্ভবনাহীন মানুষ যদি জেনে যায় তার মৃত্যুর তারিখ, কিন্তু তখন আর কী-ই বা করার থাকে? কতোটুকুই বা সাজানো যায় জীবন? এরচেয়ে বরং একদল সুস্থ মানুষ জেনে যাবে তাদের মৃত্যুর তারিখ, প্রথমে কেউ কেউ বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে থাকবে, কিন্তু দেখা যাবে সত্যি সত্যি মানুষ তার জেনে যাওয়া তারিখে মারা যাচ্ছে। তখন কোলাহল হবে, জীবন সাজানোর গতিময়তা বাড়বে। গল্পের ভেতরে কী হবে সেটা পরে বলছি। আগে বলি, গল্পের শুরুটি কেমন হতো।

আচ্ছা, তারও আগে বলে রাখি – যেহেতু এই লেখকের কব্জির জোর নেই, সেহেতু গল্পটি উত্তম পুরুষে বর্ণিত হবে। চিন্তার-চৌবাচ্চারা (থিংক ট্যাঙ্ক এর অনুবাদ হলো কি?) বলে থাকেন - উত্তম পুরুষে লেখা সহজ। উত্তম পুরুষের বাইরে গিয়ে লিখতে হলে নাকি কব্জির জোর লাগে। আমার কব্জিতে জোর নেই, পারলে যা আছে ঐ সামান্য জোরটুকু মোহাম্মদ আশরাফুলকে দিয়ে দিতে পারি অনায়াসে – আকাশে ভাসিয়ে দেয়া বল যেনো আরো ভেসে, আমার কব্জির জোর পেয়ে, সীমানাটুকু পার হয়।

গল্পের শুরু এভাবে –
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শুনি আব্বার চিল্লাচিল্লি। ড্রয়িং রুমে বসে টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টাচ্ছেন আর চিৎকার করে যাচ্ছেন – ‘যতো সব ফালতু অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার’। হাতের কাছে রাখা খবরের কাগজটাও ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। সব জায়গায় এক খবর – ‘কী সব টেস্ট ফেস্ট করে মানুষ জেনে যাচ্ছে কে কবে মরবে’। আব্বার দিকে যেতে আমার সাহস হয় না। আমি চুপেচুপে রান্নাঘরে আম্মার কাছে যাই। আম্মা একচুলায় পরোটা ভাজছেন, অন্য চুলায় ভুনা গরুর গোশত। ঘ্রাণে আমার পেট মোচড় দিয়ে ওঠে। আম্মাকে বলি, ‘আব্বা, এমন চিল্লাচিল্লি করছে কেনো? সারা দুনিয়া মেনে নিলো, আব্বার কেবলই আপত্তি’।

আম্মা শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালে জমে থাকা ঘাম মোছেন। বিড়বিড় করেন, কী বলেন বোঝা যায় না। আম্মার চেহারায় তাকিয়ে অনুমান করি, আম্মা বলছেন – ‘তোর আব্বা তো সারাজীবন এরকম’।
ফ্লোরে পড়ে থাকা পেপার কুড়িয়ে আমি বাথরুমে ঢুকি।

অনেক আগে যেবার বাসায় ইন্টারনেট কানেকশন নিলাম, আব্বা এলেন আমার রুমে। আমি ইয়াহুতে নিউ ইয়র্কে থাকা কাজিনের সঙ্গে চ্যাট করছি। আব্বা এসে আমার পাশে বসলেন, দেখলেন – আমি টাইপ করছি – ha ha.
আব্বা জিজ্ঞেস করলেন – হা হা মানে কী?
বললাম, হাসছি।
শুনে তাঁর চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো, ‘তুই তো গম্ভীর হয়ে বসে আছিস, আর টাইপ করছিস – হাসছিস কই?’
আমি আব্বাকে কী করে বোঝাই - এসব চ্যাট, এসব অনুভূতি অন্যরকম।
সেদিন কিছু না বলে চলে গেলেন। এরপর আরো অনেকদিন আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, ফোনে অন্য কাউকে বলছেন – ‘কী আর বলবো বলেন, মুখ গম্ভীর করে টাইপ করে আর বলে হাসছি, একটা বিশাল জেনারেশন গ্যাপ, হা হা হা’।
আব্বা এরকমই। পরিবর্তন মেনে নিতে পারেন না।
আমাদের বাসায় ডিশ এন্টেনার সংযোগ নেয়ার পর আম্মা নিয়মিত খানা খাজানা দেখে, আমার ছোটো ভাই মুকুল কার্টুন নেটওয়ার্ক, আর আমি রিমোটের বাটন চেপে চেপে আমিশা প্যাটেল খুঁজি।
আব্বা কোত্থেকে শুনে এলেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে প্রকৃতির নানান আজব জিনিশ দেখায়, দূর্লভ সব নাকি ব্যাপার স্যাপার। আব্বা অফিস থেকে ফিরে টানা কয়দিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখলেন। সপ্তাহ খানেক পরে সাত্তার মামা আমাদের বাসায় এলে আব্বা বললেন, ‘লেদা পোকা কী খায়, এইটাও মানুষের আগ্রহের বিষয়?’

পত্রিকার প্রথম পাতা – শেষ পাতা – বিশেষ সম্পাদকীয় পড়া শেষে আমি আব্বার এসব কথা ভাবছিলাম। এই যে আজ এক মাস সব মিডিয়া তুলকালাম কান্ড করে দিচ্ছে, সামান্য একটা টেস্ট করে মানুষ জেনে যাচ্ছে সম্ভাব্য মৃত্যুর তারিখ – আব্বা এটাকে বিশ্বাস তো করছেই না, বরং পুরো ব্যাপারটিকে তুচ্ছ করে মানুষের ওপর ক্ষেপে যাচ্ছে। আমিও প্রথমে আব্বার মতো অবিশ্বাস করতাম। কিন্তু, সেদিন রিন্টু যখন ভার্সিটির ক্যাফেতে এসে বললো – তার এক ফুপা বাইপাস সার্জারি করতে সিঙ্গাপুর যাবে, লাখ বিশেক টাকার মতো খরচ হবে। কিন্তু যাওয়ার আগে ঢাকায় ঐ ডেথ-টেস্ট করালো, দেখা গেলো বাঁচবেন আর ৯ দিন। এরপরও রিন্টুর ফুপাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হলো, অপারেশনের আগের রাতে আবার স্ট্রোক করে মারা গেলেন। রেন্টু আঙুলের কড়ে গুনে গুনে দেখিয়ে দিলো রবিতে রবিতে আট আর পরের দিন সোমবার মিলিয়ে ৯ দিনই ছিলো। সোমবারে ফুপা মারা গিয়েছিলেন।

রাতে বাসায় ফিরে খাবার টেবিলে রিন্টুর ফুপার ঘটনা বলার সাহস আমি পাইনি। কারণ, এর আগেই আম্মা বলছিলেন, আমারদের বাসার তিন ব্লক পরে সাদী কাকার মামা শ্বশুর এ টেস্ট করেছিলেন, টেস্টে দেখা গেছে বাঁচবেন আর ৬ দিন। পুরোদস্তুর সুস্থ মানুষটি ঠিক ৬ দিনের মাথায় বাজার করে ফেরার পরে রিকশার ঝাঁকুনিতে রাস্তায় পড়ে গেলেন। হাসপাতালে নেয়ার পর – ডাক্তার বললো, ব্রেইন হ্যামারেজ।
আম্মার কথা আব্বা মন দিয়ে শোনলেন, আম্মাকে বললেন – ‘কাল সকালে বের হয়ে সব ক’টা টিভি চ্যানেলে যাবে, রিপোর্টারের কাজ খুঁজবে, আর কোন বাসায় কী হলো সেসব লাইভ টেলিকাস্ট করবে’।
আব্বার এরকম প্রতিক্রিয়ায় আম্মা চুপ মেরে গেলেন। আব্বা বলেই যাচ্ছেন –
‘...ঘুরে ঘুরে পশ্চিম পাইকপাড়ায় যাবে, বের করবে কার বাসার তরকারী পুড়ে গেছে। ঐটা রেকর্ড করে রাস্তায় দাঁড়াবে, বলবে – তরকারী পুড়ে পশ্চিম পাইকপাড়ার এ বাসায় এখন তীব্র গন্ধ, লতিফুন্নেসা, একুশে টেলিভিশন, পশ্চিম পাইকপাড়া’।
আম্মা চুপ, আমিও চুপ। আব্বা আর কথা না বলে - ভাত খাওয়া শেষ করলেন। রিন্টুর ফুপার ঘটনাটি তাই সে রাতে আর বলা হয়নি।


এতটুকুকে ভূমিকা হিসেবে মন্দ মনে হয় না। নাকি?
শিরোনামের চমকে পাঠক গল্পে যাবে, গিয়ে দেখবে – আজব এক ঘটনা ঘটছে, কী এক ডেথ-টেস্ট করে মানুষ মৃত্যুর তারিখ জেনে যাচ্ছে, এবং এরপর লৌকিক বা অলৌকিক যেভাবেই হোক না কেনো মানুষ ঠিক ঐ তারিখেই মারা যাচ্ছে। গল্পের কথক এবং তার মা এরকম দুটো ঘটনা জেনে গেছে। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলেও রিপোর্ট হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে গল্পকে কীভাবে আগানো যায়?
সমস্যা দেখা দেয় দুটি।
এক – এরকম ঘটনা কি শুধু বাংলাদেশেই ঘটছে? তাহলে বাকী বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কী? অন্য দেশে এই ডেথ-টেস্ট সফল হলে, সেখানকার বিজ্ঞানীরা কী বলছে?
দুই – এটা কী সায়েন্স ফিকশন, নাকি নিছক কল্পগল্প।

ঠিক এ জায়গায় এসে গল্পকার হিসেবে আরামদায়ক জায়গা হলো কল্পগল্পকে বেছে নেয়া। যেহেতু বাকী বিশ্বে এ ঘটনা ঘটে গেছে বলে দিলে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জটিল হয়ে যাবে, ঢাকা শহরের নানান চমকের জীবনে এ ঘটনা চমক পাবে না। আরো সমস্যা আমি তেমনভাবে সায়েন্স ফিকশনের পাঠক না, সুতরাং এ প্লটে গল্প আগানো আমার জন্য বেশ কঠিন। যদিও আমার ধারণা - এরকম প্লটে সায়েন্স ফিকশন হয়েছে, কিংবা হয়ে থাকার সম্ভবনাই ব্যাপক।

এখানে এসে গল্প আঁটকে যায়।
আমার কিছু অচেনা উঠতি বয়েসী বন্ধু-বান্ধবী আছে, যারা সময়ে অসময়ে আমাকে ইয়াহু মেসেঞ্জারে টোকা দেয়। কেউ কেউ তাদের রিসেন্ট ব্রেক আপ এবং তৎসংক্রান্ত ক্রাইসিসের কথা বলে। আমি শুনি, কারণ - আমি মনোযোগী শ্রোতা। তারাও এপ্রিশিয়েট করে। কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমি সংকটে পড়ে যাওয়া মানুষকে ব্যাপক সান্ত্বনা দিতে পারি,বিজনেস কেইস এনালাইসিসের মতো করে একাধিক সমাধান বলি, তারপর একটা ডিসিশন ম্যাট্রিক্স করতে বলি। বলি, “এ বয়সটা ভুল করারই বয়স, ভুল থেকে শিখে নাও, আরো বড়ো হলে পরে আর শিখতে পারবে না”। প্রায়ই দেখেছি – এ কথা এখনকার উঠতি জেনারেশন পছন্দ করে। যাবতীয় ভুল সিদ্ধান্ত তাদের মনে অপরাধবোধ জাগায়। সে প্রেক্ষিতে আমি যখন বলি – ভুল জীবনের অংশ, ভুল করা মানে জীবনের শেষ নয়; তখন তারা আমাকে পছন্দ করে। ঠিক আমাকে নয়, আমার কথাকে পছন্দ করে।

‘মৃত্যুর তারিখসমূহ জেনে যাওয়ার পর’ নামের গল্পটি যখন আঁটকে গেলো তখন আমি সারাদিন ইয়াহু মেসেঞ্জারে ঘাপটি মেরে থাকি। আমার সেই অচেনা উঠতি বয়েসী বন্ধু-বান্ধবীদের জন্য অপেক্ষা করি। নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে টোকা দেই। তাদের কেউ বিআরবি বলে যায় – আর আসে না, কারো গার্লফ্রেন্ড ম্যাঙ্গো ক্যাফেতে ওয়েইট করছে, কাউকে আম্মু বকা দিচ্ছে এতক্ষণ নেটের সামনে বসে থাকার জন্য, তাই জিটিজি। আমি মন খারাপ করি, তবুও অপেক্ষা করি। ডেথ টেস্টে মৃত্যুর তারিখ জেনে গেলে, এবং টেস্ট করা সকল সুস্থ-অসুস্থ লোক যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক ব্যাখ্যায় মারা গেলে কী হতো আমাদের প্রতিক্রিয়া; ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির তাসিফ মেহমুদ, সানিডেলের মৌমিতা অথবা মোহাম্মদপুর কিংস কলেজের কেমেস্ট্রি অনার্সের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম কী ভাবতো – কী করতো; সেসব আমার জানতে ইচ্ছে করে। আমার বরাবরই মনে হয় – তাদের সঙ্গে কথা বললে আমি গল্প আগাতে পারবো। অথচ তারা কেউ অনলাইনে আসে না। তখন রকিকে মনে পড়ে।

রকি আমার পুরনো বন্ধু। কোপেনহেগেন স্কুল অব বিজনেসে এমবিএ করছিলো সেবার।
সামারে থাইল্যান্ড গিয়েছিলো ব্রেকে।
আমি খুশি হয়েছিলাম, আমার পুরনো বন্ধুদের কেউ কেউ এখনো আমাকে মনে করে, ভিনদেশে গিয়ে ফোন করে বলে – আসো দেখা করি।
কড়া রোদের এক দুপুরে ৩০১ সুকুমভিত রোড ঠিকানা থেকে ৭ মিনিট হাঁটার দূরত্বে আমরা ম্যাকডোনাল্ডসে বসি। রকি তখন ম্যাক-ইনডেক্স নিয়ে আলাপ তোলে। জেফ জার্ভিসের ব্লগ থেকে ব্যাখ্যা দেয়। আমি গল্প শুনি, আমার ভালো লাগে। রকি আমাকে বোঝায় – গ্লোবাল সিটিজেন শব্দটি কেবল একাডেমিন পারপাসে না রেখে পারসোনাল লাইফে নিয়ে আসতে হবে, দেশের জন্য কিছু করা মানে দেশে থাকতে হবে এমন কিন্তু নয়। আমি মাথা নাড়ি। খুব আলগোছে খেয়াল করি, একদা লাজুক-নীরব আমার এ বন্ধুটি এখন সৌম্য হয়ে গেছে। অনায়াসে সে এখন ঢাকার এক কর্পোরেট অফিসে ফিরতে পারে। কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থার তরুণ, কিছু ওয়ান্না-বি-মডেল কিছু টেন্ডারবাজ রকির পেছন পেছন ঘুরবে। সকাল আটটা সাতান্ন মিনিটে অফিসে যাবে রকি, নয়টা দশ মিনিটে তার অফিসে মর্ণিং ব্রিফিং হবে, সেখানে বাইশ বয়েসী এক উদ্ভিন্না ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী কথা না শুনে রকির ধারালো চিবুকে অপলক তাকিয়ে থাকবে, কিংবা দুপুরে লাঞ্চের পরে অকারণে রকির রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাবে সে। কাঁচ ঘেরা তাপশীত-নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে রকি এসবই দেখবে। তারপর সন্ধ্যা ছয়টা এক মিনিটে অফিসের ডেস্কটপ বন্ধ করে, নিজের ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে ইন্টারকমে ডাক দেবে সেই সকালের উদাসীন এমটিকে। চারকোণা মোটা ফ্রেমের চশমা মুছতে মুছতে রকি মেয়েটির চোখে চোখ রেখে বরফ শীতল গলায় বলবে – “এন অফিস, ইজ এন অফিস, ইজ এন অফিস, বিকজ দিস ইজ এন অফিস”।
এ কথাতেই মেয়েটি বুঝে যাবে – কর্পোরেটের কেউ কেউ জুতো পা অবস্থায় মরতে চায়, কাজ করতে করতে মরতে চায়। রকি আর কথা আগাবে না। এরপর সে সন্ধ্যায় পিয়াসীতে যাবে, সেখানে কিছু ব্যাংকার, কিছু টেলিকম গুরু, কিছু অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা গোল হয়ে বসবে। রকি মন দিয়ে সব শুনবে, আবার আড় চোখে দেখে নেবে রোডস এন্ড হাইওয়েজের এক ইঞ্জিনিয়ার দূরের টেবিলে কাঁপা কাঁপা হাতে নেশা করে, আর হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে – তার বৌ ভেগে গেছে এক মেট্রিক পাশ কন্ট্রাক্টরের সাথে। রকি সব দেখবে, নেশা করবে, কিন্তু তাল হারাবে না। কারণ রাত বারোটা এক মিনিটে তাকে এটিএন বাংলার লীড নিউজে যেতে হবে, জুনিয়র চেম্বার্সের প্রতিনিধি হিসেবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং সাম্প্রতিক ব্যবসায়ের হাল হকিকত নিয়ে কথা বলবে সে। এ অনুষ্ঠানে রকি ভুলেও কোনো ইংরেজী শব্দ বলবে না, চাহিদা-যোগান-সমন্বয়-প্রান্তিক চাষী-লভ্যাংশ-বিপনন-বন্টন-ভূর্তকী-মোদ্দাকথা; এসব শব্দে বুঝিয়ে দেবে বিদেশে পড়লেও সে বাংলার মানুষ, এদেশে কর্পোরেটের মার্বেল পাথর কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলের বৈঠকী স্টেজ; সব তার জন্যই।

অথচ এসব আমার কল্পনাতেই থাকে।
বার্গার শেষ করে তখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস চিবুচ্ছি। রকি আমাকে চমকে দিয়ে বলে সে আর দেশে ফিরবে না। রকি জীবনের হিসেব করে ফেলেছে। আটাশে বিয়ে, তিরিশে বাবা হবে। পঞ্চাশে সন্তানের বয়েস হবে বিশ, ভার্সিটির ছাত্র। ততদিনে এখনকার সবুজ পাসপোর্টটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে, রকি এবং তার পরিবার হবে কল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিক, যেখানে রাষ্ট্র সব দায়িত্ব নেবে, যেখানে সন্তানের জন্য ডিপিএস করে সারা মাসের সঞ্চয় থেকে টাকা সরাতে হবে না। রকি তখন অনায়াসে অবসরে যেতে পারে কিংবা মারাও যেতে পারে। বেঁচে থাকলে নিদেনপক্ষে ইউএন এর কোনো অংগসংস্থার কনসাল্ট্যান্ট হয়ে বাংলাদেশে হলিডে কাটাতে যেতে পারে। রকির হিসেবে ভুল নেই। আমি তখন স্মৃতিকাতর হই, টেস্ট পেপারে দেয়া রাজশাহী মডেল কলেজের একাউন্টিং সেকেন্ড পার্টের ফাইনাল একাউন্ট যখন কেউ মেলাতে পারেনি, তার পরদিন রকিদের বাসায় গেলে সে আমাকে ব্যালকনি থেকে চিৎকার দিয়ে বলে – ‘সংরক্ষণশীলতার নিয়ম অনুযায়ী হিসাববিজ্ঞান সব সময় ক্ষতির দিক চিন্তা করে, তাই বাজারমূল্য কম থাকলেও সেটাকে আসল বিবেচনা করতে হবে’।
কোকের গ্লাসের তলানীতে আর কিছু নেই, তবুও আমি স্ট্রতে টান দিই, বাতাসের ফুরৎ ফুরৎ শব্দ হয়।
রকি জিজ্ঞেস করে – ‘তোমার প্ল্যান কী?’
আমি তখন সুকুমভিতের বুক চিড়ে যাওয়া গাড়ি দেখি, বলি – ‘তুমি কি ভুলে গেছো, কোনো পরীক্ষাতেই আমি এইম ইন লাইফ রচনা লিখিনি...’
রকি আর কথা বাড়ায়নি।

‘মৃত্যুর তারিখসমূহ জেনে যাওয়ার পর’ নামের গল্পটির জন্য আমি রকিকে খুঁজি। ডেথ-টেস্ট সত্যি হয়ে গেলে তার জীবন পরিকল্পনায় কী প্রভাব পড়তো সেটা নিয়ে জানা যেতো। ইন্টারেস্টিং কিছু পেলে রকিকে আমার গল্পের নায়ক বানিয়ে দিতাম। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে – গল্পের সূচনায় একজন তরুণকে দেখা যাচ্ছে, যে ভার্সিটিতে যায়, ক্যাফেতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়, বাবাকে খানিক ভয়ও পায়। ঠিক এরকম একটি চরিত্রকে ধরে এই অবস্থায় গল্প সামনে আগানো দুঃসাধ্য মনে হয়। তবুও অনেকগুলো সম্ভবনা রাখি, যার একটা এরকম: ডেথ-টেস্ট সফল। মানুষ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে। জানাজার নামাজ কিংবা ফিউনারেলের ইনভাইটেশন কার্ড চলে যাচ্ছে আগে। গল্প কথক তরুণটি তার দূর সম্পর্কের মামা ও ভার্সিটির শিক্ষক, যারা কিনা একই দিন মারা যাবে, তাদের কাকে শেষ বারের মতো দেখতে যাবে – তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে। শহরের প্রেমিক প্রেমিকারা এখন জেনে নিচ্ছে কে কবে মারা যাবে। কাছাকাছি সময়ে মরে যাওয়ার মানুষগুলো সম্পর্কে জড়াচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলো নতুন নতুন বিনিয়োগ স্কীম নিয়ে আসছে। জীবনের তখন আর অনিশ্চয়তা নেই, কারণ – মৃত্যুর নিশ্চয়তা আছে। মানুষের মৃত্যুতে শোক নেই – ব্যথাতুর কিংবা সন্তপ্ত হওয়ার অনুভূতি নেই...।

এগুলো হলো – গল্পের মাঝামাঝি পর্যায়ের মাল মসলা।
কিন্তু, শেষটায় কী হবে?
ধরা যাক - আমাদের গল্পকথক যে কিনা একটি ভার্সিটিতে পড়ে, তার একজন প্রেমিকা আছে, মেহরীন, – যে নিজের মৃত্যুর তারিখ জেনে গেছে, কিন্তু প্রেমিক গল্পকথকেরটা জানা হয়নি। আমাদের গল্পকথকের তখন ভীষণ ব্যস্ত সময়। তাহলে আসুন, গল্পের “হতে-পারতো-শেষ-অংশটা” পড়ি –

“টানা তিনদিনে তিনটা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে আমার মাথা খারাপ হয়ে আসে। মনে হয় – কতো রাত ঘুমাইনি। বাসায় বলে রেখেছিলাম, ১৮ ডিসেম্বর আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে দরজার হুক বন্ধ করে একটানা ঘুম দেবো, কেউ যেনো আমাকে এই তিনদিন না ডাকে, আমাকে যেনো খাবারের জন্যও না ডাকা হয়। আজ সব ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে রিন্টুরা যখন রাঙ্গামাটি যাচ্ছে, তখন আমি বাসায় ফিরি। কলিংবেল চাপতে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। আমি ভেতরে পা দিতেই আম্মা এসে আমাকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আম্মার কান্নায় যতো না অবাক হই, তারচেয়ে বেশি অবাক হই যখন দেখি সোফায় মেহরীন বসা। আমাদের বাসায় আগে সে কখনো আসেনি, তার কথা আমার বাসায় জানাইনি এখনো।
আমি মেহরীনের দিকে তাকাই, আম্মা আমাকে ছাড়ছে না। শক্ত করে জড়িয়ে হাউমাউ কান্না বেড়েই চলেছে। এবার মেহরীন এসে যোগ দেয়। তার আগে আমার হাতে দেয় একটি সাদা খাম। খুলে দেখি – আমার ডেথ-টেস্ট রিপোর্ট। ভুলে গিয়েছিলাম দু’সপ্তাহ আগে মেহরীনের জোরাজুরিতে টেস্টে গিয়েছিলাম। অবাক হয়ে দেখি – আজই আমার মারা যাওয়ার কথা, স্পষ্ট লেখা এ বছরের তারিখ, আজই – আজ ১৮ ডিসেম্বর। জানি না কেনো, আমার অদ্ভুত ভালো লাগে। আমার হাসি পায়। আম্মা আর মেহরীনকে সরিয়ে আমি আমার রুমে চলে আসি। দরজার হুক লাগিয়ে বলি – “আমি ৩ দিন ঘুমাবো, কেউ আমাকে ডাকবে না”।


সমাপ্তি হিসেবে এ অংশটুকু কেমন তা আমার জানা নেই।
কারণ, গল্পের মাঝটা আমি লিখিনি। আসলে মাঝে কী হবে তা আমি জানি না। আমি ইচ্ছে করেই আর সমূহ অচেনা বন্ধু, রকি অথবা অন্য কাউকে খুঁজিনি। কে যেনো একবার আমাকে বলেছিলো – দলবদ্ধ জীবনে তোমাকে মানুষ বরাবরই একটি ‘শো-কজ’ লেটার ধরিয়ে দেবে। মনে পড়ছে না – কে বলেছিলো, কিংবা কোথায় পড়েছিলাম। তবে, সংঘবদ্ধতার কারণ-দর্শানো নোটিসে ইদানিং জীবন ভরপুর। পরামর্শের কমতি নেই – একজন বারটেন্ডার বলছে – ‘এমবিএ করেছো মার্কেটিং এ? ভুল করেছো – ফাইন্যান্স ভালো হতো’। একজন গবেষক পরামর্শ দিচ্ছে, ‘এমবিএ কেনো, এমএস করলেই পারতে’। একজন যশোপ্রার্থী লিটল ম্যাগ কর্মী বলছে – ‘ব্লগে লিখো? বাদ দাও ওসব, সিরিয়াস কিছু লিখো’। এখন সমালোচক জ্ঞান দিচ্ছে – ‘আগে ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক্স শেষ করো, তারপরে লিখো’। একজন প্রবাসী ধিক্কার দিচ্ছে – ‘এখনো পিআর নাওনি? থেকে যাও এখানে - কী করবে আর? অথবা, ওয়ার্ক পারমিট নিচ্ছো না কেনো?’ নিজের ইচ্ছে মতো জীবন সাজানোর উপায় আর নেই – নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে অনেক কিছু – একজন বিকম ফেল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী একাধিক ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক হয়ে গেছে, কিছু অধ্যাপক তার হারেমের সেবাদাস হয়ে আছে, নিত্যনতুন বানর নাচ চলছে সেখানে। আর এখানে স্বপ্নেরা সব ধুসর হয়ে আছে।
‘তোমার মুক্তি নেই, তোমাকে র‌্যাটরেসে আসতেই হবে’।

মূলত এসব কারণেই ‘মৃত্যুর তারিখসমূহ জেনে যাওয়ার পর’ নামের গল্পটি মারা যায়।
থেকে যায় এলিজি - গল্পের জন্য এবং স্বপ্নের জন্য।

Read more...

19 June, 2009

পারমিতার একদিন : সম্পর্ক এবং আশ্রয়হীনতার ছবি

একই ঘর এবং সংসারে বাস করেও মানুষ দিন শেষে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। যখন আয়নায় মুখোমুখি তাকিয়ে কেবল নিজের সঙ্গেই কথা বলা লাগে। মনে হয় – এর বাইরেও অন্য কোথাও সঙ্গোপন টানাপড়েন রয়ে গেছে। অঞ্জন দত্তের গানে যেমন, ‘চারটে দেয়াল মানে নয়তো ঘর, নিজের ঘরে অনেক মানুষ পর’। তেমন করেই, নিজের ঘরে পর হয়ে ওঠা মানুষগুলো তাই ক্রমশঃ আশ্রয় খোঁজে অন্য কোথাও।

শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে, মেল শভিনিস্ট স্বামী কিংবা মাতাল সন্তান নিয়ে পারমিতার শাশুড়ী যেমন আশ্রয় খোঁজে, আরো অতীত – আরো গোপন অথচ ভালোবাসার মানুষটির কাছে। জীবনের পৌঁণিক প্রান্তে এসে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, তাই প্রশ্নহীন উত্তরহীন থাকে সম্পর্কের ধরণ। নিজের এই ব্যক্তিগত দূর্বলতাই হয়তো শাশুড়ীকে বৌয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে, অথবা দুজনেরই শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানের কারণে কোথাও মিল খুঁজে পায় দুজনে। কিন্তু, নিজের ঘরে পর হয়ে যাওয়া দুজন আসলেই কি সমান্তরাল জীবনে চলতে পারে? কিংবা চললেই বা কতোটুকু? ‘পারমিতার একদিন’ দেখতে গিয়ে এ প্রশ্নই বারবার জেগে উঠেছে। উত্তর জানার চেষ্টা ছিলো - পারমিতার স্মৃতিমন্থনে।

একটি শোকের বাড়িতে পারমিতার আগমন, চারপাশের জটিল মানুষের ফিসফাস, হুট করে অতীত এবং আবার বর্তমান; এভাবেই ছবি এগিয়েছে। সরলরৈখিকভাবে ভাবলে – তেমন চমকের কিছু নেই। কিন্তু, অতীত বর্তমানের মিশ্রণে দর্শককে অপেক্ষা করতে হয়েছে, কখনো দীর্ঘশ্বাসে – কখনো আশায়। পারমিতার দ্বিতীয় জীবনে পা রাখার পেছনের ঘটনা জানার আগ্রহই ছিলো অপেক্ষার মূল বিন্দু। প্রথম জীবনের সঙ্গে সম্পর্কছিন্নের গল্প প্রলম্বিত হয়নি, জটিলতার ছিলো অনেক কিছু – থাকতেও পারতো। কিন্তু, সম্পর্কের সুতোয় টান পড়ে যাওয়া মানুষগুলো একে অন্যকে আর ধরে রাখতে পারে না। খটকা যা লেগেছে তা ঐ দ্বিতীয় জীবনের সম্পর্ক নির্মাণের দ্রুততা। দর্শক হিসেবে মনে হয় – এ পরিচালক কিংবা কাহিনীকারের তাড়াহুড়া। অবশ্য না জেনেও ক্ষতি হয়নি খুব বেশি। গৃহবধু পারুর চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থার পারমিতা অনেক বেশি প্রত্যাশিতই মনে হয়।

নামের সঙ্গে মিল রেখেই মূল কাহিনী একদিনের, কিংবা কয়েক ঘন্টার। ক্ষণে ক্ষণে অতীত-বর্তমানের দৃশ্যপট। শেষ ভাগে – পারমিতা এবং মনুকাকা যখন ঐ বাড়ির গেট পেরিয়ে এলো, তখন মনে হয়- এ দুজনের কখনো আর এখানে আসা হবে না। পারষ্পরিক আশ্রয়হীনতার যে সম্পর্ক ছিলো তারও সমাপ্তি হলো। কিন্তু জীবনের গল্পের সমাপ্তি কি হয়? মন হয় - ‘বিপুল তরঙ্গরে...’ গানের মতো করেই পারমিতা ও বাকী মানুষগুলো হয়তো নতুনভাবে আশ্রয় খুঁজবে অন্য কোথাও...।
.
.
.

Read more...

25 January, 2009

স্লামডগ মিলিওনারঃ দারিদ্র্য বাণিজ্য বিনোদন

আমাদের চারপাশের গল্পে কেবল না পাওয়ার কথা। শন ওয়াইজের সাথে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হচ্ছিলো জেনারেশন গ্যাপ নিয়ে। একদিন বললো, আশির দশকে যাদের জন্ম তারা কেবলই না পাওয়ার বেদনায় ভোগে, এরা নিজেদের ক্রমাগতঃ বঞ্চিত ভাবে, সন্তুষ্টির মাপকাঠিতে এদের ইনডেক্স অনেক নিচে। প্রজন্ম ব্যবধানের ব্যবচ্ছেদ নয়, বলিউড-ঢালিউডের সিনেমার কথা ভাবলে কেবল দেখি- পাওয়া না পাওয়ার ব্যবধান। ভিন্নধর্মী যা হচ্ছে সেগুলো চোখে পড়েনা। কিংবা চলচ্চিত্র বোদ্ধা না হলে, সমালোচনার কলম ধরা যায় না।

তবুও দর্শক নমস্য, এরাই কথাচ্ছলে তুচ্ছ করে দেয় জব্বার পাটেল, বিমল রায়কে। রাম গোপাল ভার্মা তো আনন্দবাজারে আগেই ছুরির নিচে। এরকম দর্শক আলোচনায় তুঙ্গে এখন 'স্লামডগ মিলিওনার', নয় দশটি বিভাগে অস্কার নমিনেশনও পেয়েছে। বড়ো পর্দায় বন্ধুসহ দেখার সুযোগ যখন এলো এই ভীনদেশে তখন আরাম করেই বসা যায়।

সন্ধ্যার শো'তে লোক গিজগিজ তাই ফিরে এসেছিলাম। রাত দশটা বিশের শো'ও ফুল। চল্লিশ মিনিট আগে লাইনে দাড়িয়ে পছন্দের সীট পেলাম। কাহিনীতে চমক যতোটা তার চেয়ে বেশী চমক কাহিনী বলার চমক। জামাল মালিক এক বস্তির ছেলে, বাচ্চাদের সাথে খেলছে, পানিতে লাফালাফি করছে। আবার পরের দৃশ্যে পুলিশি রিমান্ডে ইলেকট্রিক শক খাচ্ছে সে। ফিরতি দৃশ্যে 'মিলিওনার কে হতে চায়' অনুষ্ঠানের হট সীটে। একের পর এক উত্তর দিয়ে পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করছে জামাল। অনিল কাপুর প্রশ্নের পর কম্পিউটার লক করে দিচ্ছে। স্টুডিও কিংবা টিভির সামনের দর্শকের উত্তেজনা বাড়ছে। এটুকু থামিয়ে জামালের ছোটোবেলার গল্পে ফিরে যায় কাহিনী। রায়ট। জামাল-সেলিম-লতিকার গল্প শুরু হয়।

মিউজিকে এবং দৃশ্য ধারণে নতুনত্ব আছে, কিংবা বলা যায় হলিউডের কপিক্যাট চেষ্টা আছে। এবং সে চেষ্টা সফল। ড্যানি বয়লের বাহাদুরিকে চাতুর্য্য মনে হয় যখন দেখা যায় - বাঁশের তৈরি খোলা ল্যাট্রিনে বসে আছে ছোট্ট জামাল। ক্যামেরার চোখ তখন জামালের কচি পা ভেদ করে নিচের হলদেটে মনুষ্য বিষ্ঠা দেখাচ্ছে। ফ্যাক্টসের তর্ক নয়, রুচি বোধ নির্ধারণও নয়; ড্যানি বয়ল সচেতন ভাবেই এ কাজ করেছে। অমিতাভ বচ্চনের হেলিকপ্টার উড়ে আসছে, বস্তির লোক ছুটছে। সালিম ল্যাট্রিনের দরজা আঁটকে চলে গেছে। আর শিশু জামাল নিরুপায় হয়ে নিচে লাফ দিয়ে সারা গায়ে গু মাখা জামায় অমিতাভের ছবি হাতে দৌড়াচ্ছে অটোগ্রাফের জন্য। অটোগ্রাফ পেয়েও যায়। কিন্তু এ দৃশ্য ছবির জন্য কতোটা প্রয়োজন? কিংবা অন্য কিছু করে কি এ বলিউড ক্রেজ প্রকাশ করা যেতো না?
হয়তো যেতো। কিন্তু মুম্বাইয়ের বস্তি জীবন এসব জায়গায় পণ্য হয়ে গেছে। দারিদ্র্য উঠে আসে স্যালুলয়েডের ফিতায়। দারিদ্রের অগমে দূর্গমে শীর্ণ বিশীর্ণ মানুষ। বস্তি নোংরা মানুষ। ক্লেদাত্ব জীবন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দর্শকের চোখে বিমুর্ত হয়ে উঠবে। ক্রিটিক তার কপালে ভাঁজ ফেলে চশমায় ধাক্কা দিবে। একজন শিল্প রসিক বিদগ্ধ ভাষ্য দিবে নির্মাণ মাধুর্য্যে।
এখানে আমি একটু থামি।
নিজেকে বড্ডো দূর্বল দর্শক মনে হয় এবারের দৃশ্যে। এ তো আর নতুন কিছু নয়। এসব কষ্টের জীবনের গল্প আমাদের ঢাকায় বাসে বাসে ঘুরলেই চোখে পড়ে। ভিখারিনী মা তার শিশুর হাত ভেঙে দিয়েছে ছোটোবেলায়; এসব তো কতো চেনা গল্প। ডবল কিংবা ট্রিপল ইনকাম তাই বাংলাদেশী দর্শকের কাছে চমকের মনে হয় না। নিজের সীমাবদ্ধতার, নিজেদের চারপাশের নিরুপায়তার কষ্ট জেঁকে বসে। তাই এ কষ্টকে মনে হয় ব্রিটিশ পরিচালক পণ্য করেছে কৌশলে- দেখা যায়, নানান জায়গা থেকে তুলে আনা শিশুদের ভালো খেতে দেয়া হয়। তারা সারাদিন নানান অভিনয়ে ভিক্ষা করে। ভিক্ষার টাকা আসে মাফিয়া দলের হাতে। গানের জন্য ডেকে শিশুদের পক্কতা চেক করা হয়। শিশু অরবিন্দ আনন্দ নিয়ে গান গায়। সামনে গ্যাং লিডার। গান শুনে মুগ্ধ। অরবিন্দ এবার পাবলিক শো'তে যাবে। অরবিন্দকে নাক চেপে অজ্ঞান করা যায়। পাশে বাতির আগুনে তেল গরম করা হচ্ছে চামচে তুলে। অরবিন্দকে শুইয়ে একচোখে চামচে করে গরম তেল ঢেলে দেয়া হয়। অসহ্য এক দৃশ্য। খানিক তফাতে এ দৃশ্য দেখে সেলিম হরহড় করে বমি করছে। তারপর ডাক আসে জামালের। আরও একটি বিভৎস দৃশ্য দেখার প্রস্তুতি নিই। এবার পালায় তারা। জামাল-সেলিম-লতিকা। লতিকা ট্রেনে উঠতে পারে না। এরপরে তাদের কাহিনী এগোয়। দেখা হয় নানান চক্রে।
কিন্তু, দূর্বল দর্শকের জন্য অস্বস্তি জমে গেছে তখন। দারিদ্র্য নিয়ে কৌশলী দৃশ্য পশ্চিমা বিনোদন। ডলারে বিকোয় এসব...।

জামাল-সেলিম বড়ো হয়ে গেছে ততদিনে।
জামাল রূপী দেব পাটেলকে নিয়ে কিছু বলার নেই। তুমুল ইনোসেন্ট চেহারার ছেলে। বলিউডি হিরোইজম নেই। কিন্তু সংলাপ বলছে সাবলীলভাবে। চোখ বড়ো ছোটো করছে। কিন্তু, চোখ আঁটকালো নায়িকার আগমনে। ট্রেন চলে যাচ্ছে পেছনে, আর সামনে ওড়নাহীন নায়িকা। আরও কয়েক দৃশ্য পরে চিনি - ফ্রেইডা পিন্টো। জিটিভি'তে ট্রাভেল শো 'ফুল সার্কেল' করতো। ঘুরে বেড়াতো নানান দেশে নানান জায়গায়। পাতায়ায় আমার সাপ্তাহিক বিনোদনে পিন্টোর ঘোরাফেরা-গ্ল্যামারহীন উপস্থাপনা অন্যতম ছিলো। বিশেষ করে পিন্টো যে পর্বে আফগানিস্তান গেলো রোজার মাসে, ইফতারের পরে গানের আসর হলো, উটের পিঠে চড়লো তখন থেকে আমি পিন্টোর ফ্যান। কিন্তু এমন করে রুপালী পর্দায় এসে তাও দুমদাম তুলকালাম অভিনয়। আবার মুগ্ধ হলাম, পিন্টো।

শুরুতে বলছিলাম পাওয়া না পাওয়ার ব্যবধানের কথা। স্লামডগ মিলিওনারও এ চক্করে বন্দী। জামাল পেতে চায় লতিকাকে। ওদিকে শত্রু সেলিম যে কিনা আবার গডফাদারের ফাঁদে বন্দী। তাহলে চমকটা কোথায়? হ্যাঁ, দর্শক বসে থাকে কেনো জামাল পুলিসের হাতে সে প্রশ্নের উত্তরে। একেবারে শুরু থেকে এভাবে আঁটকে দেয়া হয়েছে। তিন পর্যায়ের গল্পে টানটান দৃশ্য আছে। আছে শেষ মুহুর্তের অপেক্ষা। এসব মিলিয়েই স্লামডগ মিলিওনার সাদামাটা বলিউডি ছবি থেকে আলাদা হয়ে উঠে। চরম দারিদ্র্যের বিনোদনীকরণ কিংবা বাণিজ্যের অভিযোগ জানিয়েও বলি - অনেকদিন মনে রাখার মতো একটা ছবি দেখলাম আজ।

তিনটি লিংকঃ
আমেরিকার কোনো টিভিতে দেব আর পিন্টোর প্রথম লাইভ ইন্টারভিউ
লেটারম্যানের সাথে ইন্টারভিউতে দেব প্যাটেল।
ছবির একটা ট্রেলার

মনে দাগকাটার মতো অভিনয় করেছে বাচ্চা দুটি। আয়ুশ আর তনয়কে স্যালুট। একটু আগে আঙুল তুলছিলাম, ছবিতে দারিদ্র্যের
বাণিজ্যিকিকরণ নিয়ে। অথচ সিএনএন'এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে- ঐ দৃশ্যই এ ছবির সেরা দৃশ্য। ইউটিউবের কল্যাণে আরও একটু বিস্তারিত আছে এখানে -



শেষে কথা থাকে - ড্যানি বয়ল তো ছবি বানিয়েছেন বাণিজ্যের জন্যই, নাকি?
তাহলে তার হাতে অস্কার আসুক। এটুকু শুভকামনা জানাই আপাততঃ।

.
.
.

Read more...

01 January, 2009

২০০৮ সালে সচলায়তনে যা কিছু উল্লেখযোগ্য

দেখতে চেয়েছিলাম – সচলায়তনে ২০০৮ সালের প্রথম পোস্ট কোনটি ছিলো। কী ছিলো। টের পেলাম, ভার্চুয়াল বিশ্বে কোনো সময় বিন্দু খোঁজা কেবলই বিভ্রম। ২০০৭ এবং ২০০৮ এর সন্ধিক্ষণে সুবিনয় মুস্তফী যখন হ্যাপি নিউ ইয়ার বলছেন, আড্ডাবাজ তখন ভাবছেন ২০০৮ এর ঝুড়িতে কি আছে? ওদিকে অরূপ খবর দিচ্ছেন ঢাকায় নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। আর সুমন চৌধুরী বলছেন – জার্মানীতে নববর্ষ আসতে আরো ছয় ঘন্টা বাকী। এরপর যথারীতি নববর্ষ নিয়ে লিখেছেন অনেকে, পাওয়া-না পাওয়া কিংবা রেজুলিউশন। এ তো গেলো ইংরেজী নববর্ষের কথা। মাস কয়েক পরে বাংলা নববর্ষে সচলরা ভেবেছেন অন্যরকম। শুভেচ্ছা-শুভকামনা ও উৎসবের খবরের বাইরে বৈশাখের পেছনের কথা বলেছেন আসাদুজ্জামান রুমন, বাংলা নববর্ষ ও বাঙালিত্ব নিয়ে লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের, আর বাঙালিত্বের শুলুকের সাকিন খুঁজেছেন হাসান মোরশেদ।


একুশে...
চোখ বুলিয়েছিলাম, এ বছর সচলায়তনের লেখাগুলো কেমন ধরণের ছিলো? ক্যাটেগরী করে দেখলে কেবল লিংকই আসবে। বরং সময় ধরে আগালে দেখি ফেব্রুয়ারীতে রাগিব লিখছেন কীভাবে উইকিপিডিয়ায় জায়গা করে নিলো একুশের ইতিহাস। একুশের ইতিহাস প্রয়োজনমত সারা বিশ্বে কেনো জানানো হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলেছিলেন থার্ড আই। একই সময়ে দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টের সুত্র ধরে অরূপ জরিপ চালিয়েছিলেন - একুশে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে সম্বোধন করায় কি একুশের মূল ইতিহাস ক্রমশ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে? জরিপের ফলাফলের বাইরে মন্তব্যের ঘরে ছিলো জরুরী আলাপ। ওদিকে একুশের চেতনা নিয়ে মিথ্যাচার - ডাকটিকিট সমাচার লিখে এক প্রতারকের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন রাগিব।
একুশের বইমেলায় সচলায়তন ছিলো জমজমাট। প্রবাসে নিঘাত তিথি যখন কয়েক বছর আগের বইমেলার স্মৃতিচারণ করছেন, তখন অমিত আহমেদ দেশে ফিরে ছয় বছর পর গ্রন্থমেলা ডায়েরি লিখছেন। এই বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকজন সচলের বই। নিজেদের বই নিয়ে লেখকরা তাঁদের অনুভূতি লিখেছেন প্রায় সবাই। পাশাপাশি ছিলো পাঠকের প্রতিক্রিয়া।


১৯৭১ এবং স্বাধীনতা
কেবল মার্চ নয়, সারা বছরব্যাপী সচলরা নিয়মিতভাবে লিখেছেন একাত্তর ও স্বাধীনতা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসুত্রের সংকলন ও গণহত্যা আর্কাইভ নিয়ে প্রচারণা ছিলো সরব। মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের ভুমিকা ও পরিনতি,সাত মার্চের ভাষণ, বুরুংগা গণহত্যা দিবস স্মরণের পাশাপাশি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে এসেছে ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশের খবর। স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকার নকশা এবং নকশাবিদ নিয়ে এসেছে একাধিক লেখা। একাত্তরের বীর নারীদের নিয়ে লিখেছিলেন ফারুক ওয়াসিফ। ২০০৭ সাল থেকে নিন্দিত শর্মিলা বোসের অপপ্রচারের কড়া জবাব যুক্তি তথ্যে আলাদাভাবে দিয়েছেন জ্বিনের বাদশা এবং তানভীর। মার্চ মাসেই অচ্ছুৎ বলাই স্বাধীনতার টুকরো স্মৃতি লিখতে আহবান জানিয়েছিলেন। আরও পরে হিমু বলেছেন – ৭১এ যাঁরা ছিলেন তাঁদের ডায়েরী লেখার প্রস্তাব। একাত্তরের ছবি চেয়ে ক্যাম্পেইনও করছেন তিনি। বিতর্কিত সাইটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রচার যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিয়ে বছরের শেষ দিকে সচলায়তন ছিলো সরগরম। অন্যদিকে ব্লগার শিক্ষানবিস অনুবাদ করছেন ১৯৭২ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রিপোর্ট - বাংলাদেশ: আশায় নতুন জীবনের বসতি। মুক্তিযুদ্ধ আর একাত্তর নিয়ে সচলায়তনে দূর্লভ সব তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট দিয়েছেন – এম এম আর জালাল


আন্তর্জাতিক...
সচলদের লেখায় সারা বছর উঠে এসেছে নানান দেশের হাল হকিকত। পাকিস্তানের প্রসংগ এসেছে বেশ কয়েকবার – বেনজিরের মৃত্যুর পরে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ, পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, পাকিস্তানের ঘটনায় বাংলাদেশের আতংকিত হওয়ার কারণ আছে কি নেই, অথবা ইসলামাবাদে বোমা হামলার খবরসহ বিভিন্ন পোস্ট এসেছে এ বছর। বছরের শেষভাগে দিগন্ত অনুবাদ করেছেন পারভেজ হুদভয়ের চোখে আজকের পাকিস্তান। মুম্বাইয়ে বোমা হামলায় সমবেদনার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক সংবাদ জানতে লাইভ ব্লগিং ছিলো সচলে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর হামলার পর উঠে এসেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। মালয়েশিয়ায় যৌন কেলেঙ্কারীর ঘটনা এবং নির্বাচনের খবরও এসেছে সচলে। মির্জা লিখেছেন - রানি এলিজাবেথ, একজন খুনি ও জিন্দা পাত্থর! মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সাফ্রোন-বিপ্লব ও বিশ্বরাজনীতি নিয়ে দিনমজুরের পোস্টের পালটা পোস্ট দিয়েছিলেন মির্জা। প্রেসিডেন্ট বুশকে জুতা নিক্ষেপের তরতাজা খবর ভিডিওসহ দিয়েছিলেন ইশতিয়াক রউফ। সেই সাংবাদিক জায়েদীকে সেনা হেফাজতে নির্যাতনের সংবাদ পোস্টও ছিলো পরে।
আলোচিত ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়েও সচলরা লিখেছেন বিভিন্ন সময়ে। ওবামা, ম্যাককেইন, সারাহ প্যালিন, প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক প্রসংগ এসেছে বারবার। নির্বাচনের দিন লাইভ ব্লগিংয়ের আয়োজন করেছিলো সচলায়তন।


বাংলাদেশঃ রাজনীতি, সংকট ও শংকা
এ বছর ওয়ান ইলেভেনের একদিন আগে আড্ডাবাজ দেখেছেন – কেমন ছিলো তত্বাবধায়ক সরকারের এক বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ আনোয়ার হোসেনের লিখিত জবানবন্দী, মুক্তির দাবী, মামলার রায়সহ প্রাসংগিক আপডেট ছিলো সচলায়তনে। একদিকে যখন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব উদ্যোগ চলছে, তখন চেতনায় সামরিকায়ন নামের অসাধারণ একটি পোস্ট দেন রাসেল। রাজনীতি প্রতিদিনের পোস্টে শোহেইল মতাহির চৌধুরী লিখেন - ভাবুন, আল্লাহ আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন। গনতান্ত্রিক ভোটপ্রথা, তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ ও জার্মানী
লিখেছেন তীরন্দাজ। নারী-নীতি বিষয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর আষ্ফালন নিয়ে লিখেছেন আলমগীর।
চালের দামের বৃদ্ধিতে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার সরকারী পরামর্শে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সচলে। ভাতালু, ভাত বনাম আলু অথবা অন্যকিছুর মতো সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি ছিলো কল্পগল্প এবং স্যাটায়ার পোস্ট।
নিজামীর গ্রেফতারের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক খবর মুহুর্তের মধ্যেই এসেছে সচলের পাতায়। তর্ক বিতর্ক ছিলো নিজামী-জিল্লুরের করমর্দন নিয়ে। এরশাদ পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবে কিনা, নাকি বাংলাদেশের দুই নেত্রীর পরিণতি হবে বেনজিরের মতো সে প্রশ্নও উঠেছে। এসব সংকটময় পরিস্থিতিতে মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন - রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষিত, একটি ব্যক্তিগত বোধ। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের জবানবন্দী নিয়ে লিখেছেন অণৃন্য।
যে মুক্তিযোদ্ধা, মোহাম্মদ আলী আমান, জামাতি মুক্তিযোদ্ধা সংষ্করণের সম্মেলনে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ।
উগ্র মৌলবাদের চাপে বিমানবন্দরের সামনে থেকে লালনের ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় ফারুক হাসান লিখেন কোনদিকে যাচ্ছে স্বদেশ? প্রতিক্রিয়ায় সুমন চৌধুরী লিখেন - এই ধিক্কারের থুতু থেকে কেউ মুক্ত নই। তবে মাসুদা ভাট্টির মুর্তি চুম্বণে মুক্তি, মুর্তি দর্শনে পাপ পোস্টে ছিলো উত্তপ্ত আলোচনা।
কিছুদিন পর বলাকা ভাস্কর্য আক্রমণের লাইভ খবর দেন আরিফ জেবতিক। হামলাকারী দল আল-বাইয়িন্যাতের স্বরূপ উন্মোচনে অচ্ছ্যুৎ বলাই লিখেন - একজন উচ্চঅশিক্ষিত আল-বাইয়্যিনাত
বিশেষ দিবসের মাঝে সাত নভেম্বরে বিপ্লব স্পন্দিত বুকে ও নূর হোসেন দিবসে এইদিনে ,এইসব প্রহসন- মনে পড়ে ছিলো উল্লেখযোগ্য।


অবশেষে নির্বাচন...
দেশচিন্তা পোস্টে সারা বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল আলোচনার তুঙ্গে। সেপ্টেম্বরে সচল মাসকাওয়াথ আহসান লিখেন এবার গণতন্ত্রের চাকা ঘুরতে পারে। তিনি নিজেও নির্বাচনে অংশ নেন পরিবর্তনের আশায়। তবে ডিসেম্বরে এসে নির্বাচনী উত্তাপ লাগে সচলদের পোস্টে। নির্বাচনী ইশতেহার, প্রচারণা, সম্ভাব্য ফলাফল বিষয়ে আসে বেশ কিছু পোস্ট। ‘না’ ভোট কে না বলা, না ভোট নিয়ে ভাবা, শর্টহ্যান্ডে কিছু পয়েন্ট; এরকম বিভিন্ন শিরোনামে না ভোট ছিলো আলোচনায়। সচল জরিপও ছিলো। ভোটের দিন সচল নির্বাচনী ব্লগিং এবং লাইভ ব্লগিং এ দু’পোস্টে ব্লগাররা প্রতিমুহুর্তে ভোটের ফলাফল জানান এবং জানেন। নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের কাছে চাওয়া এবং নিরংকুশ গরিষ্ঠতার শংকা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করার দাবী নিয়ে পোস্ট আসে সচলে। বছরের শেষ দিনে নির্বাচন নিয়ে ইশতিয়াক রউফ দেন দূর্দান্ত বিশ্লেষণী পোস্ট ময়ূরপংখী রাজনীতি


পাকি-বিহারী, ঘৃণা নাকি সহানুভূতি...
মে মাসে অতিথি অপ্রিয় প্রশ্ন তুলেছিলেন তিন লক্ষ বিহারী ভোটারের ভোট কারা পাবে? এ বিষয়ে ডিসেম্বরে আবার সচল সরগরম হয় অভ্রনীলের পোস্ট উর্দুতে নির্বাচনী প্রচারনা’য়। এর আগে অক্টোবরে অতিথি লেখক টিকটিকির ন্যাজের পোস্টের সুত্র ধরে একই ব্যাপারে পোস্ট দেন হাসান মোরশেদ এবং রানা মেহের


অর্থনীতি...
বিশ্বের অর্থনীতিতে ঘনঘটা এমন ইংগিত দিয়ে বছরের তৃতীয় দিন গাড়ী চলে না সিরিজ চালু করেছিলেন সুবিনয় মুস্তফী। একই ধারাবাহিকতায় সারা বছর অর্থনীতির নানান দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সফটওয়্যার বুদবুদ, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ইতিসহ বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতির নানান হালচাল নিয়ে লিখেছেন দিগন্ত। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এস এম মাহবুব মুর্শেদ চাকরি বাজারের মন্দা’র কথা বললে মন্তব্যের ঘরেও উঠে আসে নানান আলোচনা।


ক্রিকেট এবং অন্যান্য...
বারবার হেরেও ক্রিকেট নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। আশায় সমবেত হই। সচলায়তনে সারা বছর ক্রিকেট উত্তাপ লেগে ছিলো। ছিলো লাইভ খেলা দেখার আনন্দে বলা - আজ বাংলাদেশ ভালো খেলছে তো!, শাহাদাতের বিষদাঁত বসিল জাগামতো, নিউজিল্যান্ড আরেকবার। অথবা জয়ে সম্মিলিত চিৎকার - শাব্বাস বাংলাদেশ !!! নিউজিল্যান্ড কুপোকাত!!!
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নিজস্ব ভাবনা লিখেছেন জলদস্যু, প্রস্তাবনা দিয়েছেন উলুম্বুস, ২০১০ থেকে ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে আর কোনো সিরিজে আমন্ত্রণ জানাবে না এমন শংকার কথা বছরের শেষে জানিয়েছেন সুবিনয় মুস্তফী। আইপিএলে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন শ্যাজা। ক্রিকেটের টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভার্সন, চিয়ার লীডারদের প্রদর্শনী এবং সামগ্রিকভাবে ক্রিকেট বাণিজ্যের অনেক বিষয় এসেছে সুবিনয়ের পোস্ট অনেক আগে একটা খেলা ছিল’এ।
আইসিএলে নানান বিতর্ক জন্ম দেয়া ঢাকা ওয়ারিয়র্সের জন্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হিমু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইসিএল বিতর্ক পরবর্তী ভাবনা লিখেছেন উলুম্বুশ। বাংলাদেশের টিভিতে আই সি এলের খেলা টেলিকাস্ট বন্ধের ইগো ধুয়ে পানি খাওয়ার কথা লিখেছিলেন গোপাল ভাঁড়। খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো উচিত কিনা আরও সহজ করে বললে – পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সাপোর্ট করা যায় কিনা এ নিয়ে বিশ্লেষণী লেখা লিখেছেন অচ্ছ্যুৎ বলাই। বব মার্লিকে নিয়ে প্রথম আলোর ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রের এক লেখার প্রতিক্রিয়ায় ঝড় তুলেছিলেন রাসেল। বাংলাদেশ দলের অলিম্পিক যাত্রা, পুলিশি প্রহারে মলিন আসিফ, এবং বেইজিং অলিম্পিকের মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও লেখা এসেছে সচলায়তনে। ক্রিকেটের বাইরে শ্বাসরুদ্ধকর তুর্ক-ক্রোয়াট কোয়ার্টার ফাইন্যাল নিয়ে ছিলো আরেকটি লেখা। বছরের শেষ দিনে শ্রী লংকার বিরুদ্ধে টেস্টে জয়ের সম্ভবনায় আবারও লাইভ ব্লগিং হয় সচলায়তনে। হেরে গিয়ে লেখার শিরোনাম পালটে সৌরভ বলেন - 'এবারের মতো শ্রীলংকাকে ছেড়ে দিলাম, পরের বার আর ছাড়বো না'। বাংলাদেশ আর কাউকে ছেড়ে দিবে না, এমনটি আমরা আগামীতেও আশা করে যাবো।


শহর থেকে দূরে...
দেশ বিদেশের সচলরা কতো জায়গায় ঘুরেছেন সেটা দেখে অবাক হই নানান ভ্রমণ কাহিনি পড়ে। দেশের ভেতরে বাইরে, কিংবা বিদেশ থেকে দেশে ভ্রমণের গল্প আছে ছবিসহ অনেক পোস্টে। ভ্রমণ সিরিজের শিরোনামগুলোয় তাকাই –
কচ্ছপ দ্বীপ 'কুসু আইল্যান্ড', চির বসন্তের দেশে, প্রথম যাযাবর, পোল্যান্ডের চিঠি, উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, যে শহরে ফিরিনি আমি, পিনাং দ্বীপে আরেকবার, আপকো দেখকর তো যমীন ডর জায়েগী, ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুর, হ্যমিলনের বাঁশীওয়ালা আর ইঁদুরের দেশে,ওব্রিগাদো সাও পাওলো, পাণ্ডবের চীন দর্শন


দূর পরবাসে...
সচলায়তনের অনেক ব্লগার দেশের বাইরে থাকেন। তাদের কেউ কেউ নিয়মিতভাবে প্রবাসের ডায়েরী লিখে যাচ্ছেন। এর মাঝে হিমুর প্রবাসে দৈবের বশে, কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের প্রবাস থেকে নিয়মিত। অনিয়মিত বা থমকে যাওয়া সিরিজের মাঝে আছে প্রবাসের কথোপকথন , প্রবাস প্যাচালী, পিটস্‌বার্গের ধুসর পান্ডুলিপি, দ্বীপবাসী দিন, প্রবাসের কথা


সম্মিলিত ব্লগ কন্ঠ...
কেবল সচলায়তন নয়। বিশ্বব্যাপী ব্লগারদের কন্ঠরোধের নানান চেষ্টা ছিলো ২০০৮এ। সৌরভ জানিয়েছেন ফওয়াদ আল ফারহানের কথা। অরূপ লিখেছেন মালয়েশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহী ব্লগারকে নিয়ে। আড্ডাবাজ জানিয়েছেন মেহদী হাসানের মুক্তির দাবী। তাসনীম খলিলকে নিয়ে লিখেছেন বিপ্লব রহমান। মুক্তি পেয়েও ফেরারী কার্টুনিস্ট আরিফের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অমি রহমান পিয়াল। হ্যাকিং অভিযুক্ত শাহী মির্জাকে নিয়ে লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ।


মৃত্যুর মিছিল অথবা স্মরণ...
অভিযোগটা প্রায়ই শোনা যায়, সচলায়তনে গল্প-কবিতা সাহিত্য পোস্টে ভরপুর। পুরনো সব পোস্টে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম এর চেয়েও বেশি পোস্ট বোধ হয় দেশ বিদেশের নানান ব্যক্তিকে নিয়ে। কারো কারো বিদায়ের খবর, কারো বা জন্ম-মৃত্যুতে স্মরণ।
কেবল শিরোনামেই দেখি - বিদায় ববি ফিশার, বিদায় নান্নু..., বিদায় মান্না, চলে গেলেন গল্পকার শহীদুল জহির, বিদায় জন হুইলার, একে একে নিভিছে দেউটি - এবারে কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক, বিদায়, সলঝেনিৎসিন..., এবার ঘুমাও শান্তিতে প্রিয় মাহমুদ..., আবদুল্লাহ আল মামুন আর নেই, চলে গেলেন কবি জিয়া হায়দার, নক্ষত্রের বিদায়, মৃত্যুর মিছিলে কবি, অধ্যাপক এবং গীতিকার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ও গুরুদাসী, তুমি বুঝি আমার জননী ছিলে... ।
এছাড়াও নানান দিনে সচলরা স্মরণ করেছেন, বলেছেন যাঁদের কথাঃ লুই কান, সেলিম আল দীন, শামসুর রাহমান, রজার ফেডেরা, অমর্ত্য সেন, লুথার কিং, ওয়াহিদুল হক, ভাষা সৈনিক শামসুল হক, কবি বেনজির আহমেদ, ড. আহমেদ শরীফ, সম্রাট হুন্ডার্টওয়াসার, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ, জাহানারা ইমাম, সত্যজিত রায়, মুক্তিযুদ্ধের উপরে প্রথম গ্রন্থের প্রণেতা মাহবুবুল আলম, কার্ল মার্ক্স, গাঁস্ত রোবের্জ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সুরাইয়া খানম, সমুদ্র গুপ্ত, কল্পনা চাকমা, কবি শামসুল ইসলাম, এম আর আখতার মুকুল, শ্যাম বাহাদুর, নেলসন ম্যান্ডেলা, কর্ণেল তাহের, তাজউদ্দীন আহমদ, আহমদ ছফা, লুৎভিগ ফয়েরবাখ, জহির রায়হান, শেখ মুজিব, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, কাজী নজরুল ইসলাম, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, টমাস বাটা - ডন লাফন্টেইন, নিতুন কুন্ড, ভি এস নাইপল, সঞ্জীব চৌধুরী, ফাদার লুকাস, বুদ্ধদেব বসু, ওরিয়ানা ফাল্লাচি


মানুষের পাশে...
এ বছর সচলে এসেছে বেশ কিছু মানবিক আবেদনের উদ্যোগ। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সচল বন্ধুরা। মনে পড়ছে – অপু, জয়, জারিফ, শ্বাশ্বত, চলে যাওয়া ফয়সাল আর সিমি’র কথা।


দেখি, শুনি, পড়ি...
ম্যুভি ফ্যান সচলদের পরিচয় পাওয়া গেলো তাদের দেখা নাটক-সিনেমা রিভিউয়ের তালিকা দেখে। My Architect, Four Eyed Monsters, The Kite Runner, লা স্ট্রাডা, দার্জিলিং লিমিটেড, হারবার্ট, ব্রিক লেন, ডি ফ্যালশার (দ্য কাউন্টারফিটার্স), তারে জামিন পার, WALL—E, জানে তু... ইয়া জানে না, সিং ইজ কিং, এল এস্পিনাযো দেল ডিয়াব্লো, রিলিজুলাসআমার দেখা বাংলা সিনেমা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র। এর বাইরেও এসেছে পিয়ালীর পাসওয়ার্ড এবং দীপ নেভার আগে’র মুক্তির খবর।
চলতি সময়ের গান নিয়ে আলাপ এসেছে হাবিব-ফুয়াদ-অর্নব আর আমরা এবং বালামের বেইল শেষ এই দুই পোস্টে।
তবে পাঠ প্রতিক্রিয়ার কমতি ছিলো না, যেমন - আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা, 'স্পার্টাকাস', একজন দাসানুদাস, মরণ-মুখোশে জীবনের ছায়া - এরকম আরো অনেক। দেশি বিদেশী বই, কলাম, খবর এমন কি অন্য সচলের লেখা নিয়েও প্রতিক্রিয়া পালটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে কমেন্টে, পোস্টে।


ভিন্ন ভাবনা...
জ্বিনের বাদশা লিখেছিলেন - প্রসঙ্গ সমকামিতা: কয়েকটি প্রশ্ন। একই বিষয়ে আরো দুটি পোস্ট - ক্যালিফোর্নিয়ায় গে বিবাহ ব্যান, কানাডায় সমকামীতা। সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার লিখেছেন হাসান মোরশেদ।


শিক্ষা ব্যবস্থা...
স্কুল পর্যায়ে বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষার বর্তমান অবস্থা: একটি পর্যবেক্ষণ লিখেছিলেন আয়েশা আখতার। বিদেশে লোন নিয়ে পড়ালেখা বিষয়ে লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক। দিনমজুর লিখেছিলেন কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন । পাঠ্য বইয়ের নানান ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে ছিলো গৌতমের সিরিজ। বাংলা মিডিয়াম বনাম ইংলিশ মিডিয়াম বিতর্কে ব্লগ সরগরম ছিল নানান সময়। সুবিনয়ের দুটি পোস্ট - ক্ষমতা, বিত্ত, ভাষা ও শিক্ষা এবং ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্রের কথা উল্লেখযোগ্য। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তায় সচল ষষ্ঠ পান্ডব বুয়েটের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোটা সিস্টেমের প্রতিবাদে লিখেন - বুয়েটের মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসুন। নানান ফোরামে আলোচিত এ পোস্ট সম্ভবতঃ ২০০৮ সালে সচলায়তনে সর্বাধিক পঠিত পোস্ট।


সিরিজ লেখা...
আলাদা করে গল্প-কবিতা-ছড়ার প্রসঙ্গ আনছি না, কারণ সচলে এর বৈচিত্র্য ব্যাপকতায় কমতি নেই। ২০০৮ সালে সচলায়তনের উল্লেখযোগ্য সিরিজ ছিলো - স্মৃতিবিপর্যয়, ছুটির দিনের কড়চা, হাওয়াই মিঠাই, টোপ দিলেই যে কেঁচো মাছ খেয়ে ফেলবে তার গ্যারান্টি কি? মেয়ে টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি, মন্তব্যের মন্তাজ, পথের গল্প, গুরুচন্ডালী, আবজাব, তিতিক্ষা, যদি সে ভালো না বাসে, আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন, এলোমেলো কথা, নিয়মিত লেখা আর ব্লগের লেখা, উকুন বাছা দিন, ছোট্ট গোল রুটি, কামরাঙা ছড়া, জেলার নাম লালকুপি, জায়গীরনামা, আঙুল-কাটা ইচ্ছে-কথা, দেখা হবে, শেরালী, জাহাজী জীবনের গল্প, লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া, ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে, কস কী মমিন!


সংলাপ...
দীর্ঘদিন পর উত্তম জাঝা, হ, বিপ্লব সংলাপের চক্কর থেকে মুক্তি দিয়েছে সচল আলমগীরের নতুন সিরিজের শিরোনাম। সচলায়তনে নতুন ইমোটিকন যোগ হয়েছে – কস কী মমিন!


বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রতিবেশ...
বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ে সচলায়তনে পোস্ট এসেছে খানিক কম। অভিজিৎ, শামীম, শিক্ষানবিস, রাগিব, দিগন্ত নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে লিখে গেছেন। তানভীর লিখেছেন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে। ক্ষেত্র বিশেষে অভিজিৎ, শামীম, শিক্ষানবিসকে সায়েন্স-ব্লগারের ব্র্যান্ডিং করা যায়। গুরুত্বের হিসাবে তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে, এতটুকু বলা যায় - তাদের বেশিরভাগ পোস্টই বিজ্ঞান বিষয়ে বছরের আলোচিত পোস্ট।
বাংলাদেশ ডুবে যাওয়া নিয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়েছে সচলায়তনে।


সচলাড্ডা...
ব্লগিংয়ের প্রথম দিকে ব্লগারদের প্রথম সাক্ষাৎ ছিলো বেশ আরাম করে বলার মতো। আলাদা পোস্টে আসতো, গতকাল অমুকের সাথে দেখা হলো। যোগাযোগের ব্যাপ্তিতে অনেক সচলের হরহামেশা দেখা হয় আলাপ হয়। কিন্তু, আয়োজন করে গেট-টুগেদারের গল্প এসেছে জার্মানী থেকে, বইমেলায়, লন্ডনে, ঢাকায় সচিত্র, ঢাকায় লাইভ আড্ডা, কিংবা ছবি আড্ডা। প্রস্তাব আসে নিউ ইয়র্ক আড্ডার। এমনকি ২০০৯ এর শুরুতে ঢাকায় সচল সম্মিলন হবে বলে নানান সুত্রে জানা গেছে। আড্ডার বাইরে সচলের নানান পোস্টে সচলরা তাঁদের ব্যক্তিগত আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করেছেন। বিশেষ করে জন্মদিনে শুভেচ্ছা পোস্ট এসেছে ঘুরে ফিরে।


সচলায়তন প্রকাশনা...
সচলদের নির্বাচিত লেখা নিয়ে সচলায়তন সংকলন প্রকাশিত হয়েছে একুশের বই মেলায়। এরপর আগস্টে প্রকাশিত হয়েছে ছোটগল্প সংকলন ‘পূর্ণমুঠি’। ২০০৮ সালে প্রকাশিত একমাত্র ই-বুক অণুগল্প সংকলন ‘দিয়াশলাই’ প্রশংসিত হয়েছে অন্তর্জালের পাঠকের কাছে। ব-e ক্যাটেগরীতে ‘দেশের গান’ প্রাণ পেয়েছে নতুন করে। নতুন কোনো ব-e এ বছর আসেনি। ইতোমধ্যে সচলায়তনে ঘোষণা এসেছে আগামী বইমেলায় আরেকটি সংকলনের প্রকাশনার কাজ করছে বিস্কুটিয়ার্স টীম।


অন্দর মহল...
সচলায়তনের উদ্যোগে সচলদের মাঝে চালানো হয়েছে নানান জরিপ। বাংলাদেশের সেরা একুশ, সচলায়তনে পাঠকপ্রিয়তা, প্রথম বছরে সচলায়তনের পরিসংখ্যান, লেখক-পাঠক মিথস্ক্রিয়াচিত্র, আপনি কত ঘন ঘন সচলায়তনে আসেন টাইপ জরিপ সচলায়তন সম্পর্কে সচলদের বিভিন্নমূখী মনোভাব যাচাই করেছে।


সচল ব্যানার...
বছরব্যাপী নানান ঘটনাপ্রবাহের সাথে মিল রেখে পাল্টেছে সচলের ব্যানার। ব্যানার গ্যালারীতে তাকালেই বোঝা যায়...


বেতারায়তন...
বেতারায়তনের ইন্টারভিউতে এসেছেন অমিত আহমেদ এবং লুৎফর রহমান রিটন। বাতিল হয়েছে অর্নব এবং হাসান মোরশেদের ইন্টারভিউ। এর বাইরে সচলরা ফোনে জানিয়েছেন - অডিও: রাষ্ট্র পরিচালনায় কাদের দরকার? রামছাগল না শিম্পাঞ্জী। বিভিন্ন সচলাড্ডা’র ফোনলাপ দূর দূরান্তের সচলরা শুনেছেন দ্রুত।


ব্যান সচলায়তন!
জুলাইয়ের মাঝামাঝি বিটিসিএল প্রান্ত থেকে অ্যাকসেস বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠকের কাছে সচলায়তন পাঠ কঠিন অথবা অসম্ভব হয়ে পড়ে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দেশের সচলরা চেষ্টা করেছেন কার্যকারণ জানতে। বিশেষ বুলেটিন আপডেটে সচলদের ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ করা হয়। তবে সচলের এই দূর্যোগে অনলাইনে-প্রিন্ট মিডিয়ায় সচল নিন্দায় নেমেছিলো কিছু জ্ঞানপাপী হীনমন্য দীন ভন্ড সমালোচক, স্থুল পরিতোষক। সচলায়তনের সদস্যদের ‘শিক্ষানবীশ’ ট্যাগ লাগিয়ে, নানান ব্যাঙ্গে এসব সঘোষিত শিক্ষাগুরু-বুদ্ধিজীবি আখেরে হালে পানি পায়নি। সচলের ব্যান হওয়া বরং ব্লগারদেরই এগিয়ে দিয়েছে।


মিস ইউ, খাট্টুনিশ!
অনেকেই অনেক কিছু করেন, পারেন। কিন্তু, সচলে কার্টুন আঁকেন ঐ একজনই। বছরের মাঝের পর থেকে অনিয়মিত হয়ে গেছেন তিনি। কার্টুনিস্ট সুজন চৌধুরী


নতুন মাত্রা, ফটোব্লগ...
আগে বিক্ষিপ্তভাবে ফটোব্লগ পোস্টানো হলেও এবার একেবারে গুছিয়ে ফটোব্লগ শুরু হয়। ফ্লিকারে ছবিপাড়া করা হয়। আর সচল জানতে পারে আলোছায়ার কবিদের। নজরুল ইসলামের পোস্টে ছিলো জাভেদ আক্তার সুমনের তোলা ঢাকার ছবি। কাঞ্চনজংঘা, দার্জিলিং-এ সূর্যোদয় আর সুন্দরীদের ছবি সিরিজ করেন মুস্তাফিজ। আর রণদীপম বসু ঢাকার বিভিন্ন ভাস্কর্যের ছবি তুলে দেন যদি হারিয়ে যায়... সিরিজে।


দুষ্ট সার্ভার...
মাঝে মাঝে দেখি, পৃষ্ঠা দেখানো সম্ভব নয়। মডারেটর এসে জানান টেকনিক্যাল সমস্যা। ২০০৯ সালে এ সমস্যা থেকে মুক্ত হোক সচলায়তন...।


সচল সংখ্যান...
আগের মতোই আশা করছি সচলের মডুভাইরা জানাবেন কতোগুলো পোস্ট ছিলো এ বছর, কতো কমেন্ট পড়লো, কে বেশি পোস্টালো, কমেন্টালো বা হিট খেলো। এইসব। কিন্তু, সারা বছর সচলায়তনের প্রাণ ছিলেন সচলেরা যারা দৈনন্দিনের অংশ করে নিয়েছেন এ মঞ্চকে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে পোস্টে কমেন্টে ২০০৮ সালে শীর্ষ সরব ছিলেন হিমু এবং সংসারে এক সন্ন্যাসী। এ দুজন সচল তাদের নতুন নতুন আইডিয়ার পোস্টে জমিয়ে রেখেছেন সমাবেশ। এর বাইরে প্রায় সবাই গল্পে কবিতায় ভাবনায় চিন্তায় সচলের সাথে লেপ্টে ছিলেন। আলদা আলদা করে নাম বলতে গেলে উল্লেখের চেয়ে বরং বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি। আশার কথা হলো ২০০৮এ এক ঝাঁক নতুন সচল এসেছেন। আগামীতেও আসুন। তবে জনবাহুল্যের মোহ-মুক্ত সচলায়তন পরিমাণে নয়, কলরব করুক গুনে ...।


বিদায় জুবায়ের ভাই...
২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮, সচলায়তনে এক শোকের দিন- তীব্র কষ্টের দিন। সচলায়নের লেখক, ব্লগার, শুভাকাঙ্ক্ষী, বটবৃক্ষসম স্বজন - মুহম্মদ জুবায়ের এদিন পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। সচলায়তনে জুবায়ের ভাই কী লিখতেন প্রশ্নের জবাব, তিঁনি কী লিখতেন না। সব লেখা কতো আগ্রহ নিয়ে পড়তেন সেটা বোঝা যেতো তাঁর কমেন্ট খেয়াল করলে। মুহম্মদ জুবায়ের কেবল এ পৃষ্ঠায় আর সীমিত নন। ২০০৮ সালের অন্যসব ঘটনার সাথে বিস্মৃত হবেন না তিনি। মুহম্মদ জুবায়ের বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝেই...।



শুভ হোক, কল্যাণময় হোক – ২০০৯।

.
.
.

Read more...

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP