29 December, 2008

কল্পের নায়কদলঃ এক কোটি তরুণ ভোটার

কখনো কখনো কাটতি বেড়ে যায় কারো। প্রয়োজনের মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগ আসে ব্যক্তি-দল কিংবা গোষ্ঠী থেকে। এবার নির্বাচনে যেমন বলা হচ্ছে নবীন এবং তরুণ ভোটাররাই ফলাফল নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখবে। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন চিন্তা হুটহাট বা হুজুগে নয়, বরং তাদের থিংকট্যাংকরা বেশ ভেবেই তরুণদের কাছে ভোট চাইছেন।

কেনো চাইছেন, সেটা স্পষ্ট হবে যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যার বয়স ভিত্তিক সেগমেন্টে তাকাই। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে - ২০০৬ সালের তথ্য মতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যক হচ্ছে ২২.২ বছর। অর্থ্যাৎ ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে এদের সবারই বয়স ছিলো সতেরোর কাছাকাছি। সে সূত্রে একেবারে নতুন ভোটারের এ গোষ্ঠী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে 'মহামূল্যবান'। নানান সূত্র বলছে - এবারের ভোটারদের ৩৩ শতাংশ তরুণ ভোটার, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪/২৫এর মধ্যে। জনসংখ্যার এ বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ কী চায় বা কী ভাবে সেটি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কখনো ভেবেছেন বলে চোখে পড়েনি। ২৫ বছর আগে কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে, আমার মতো, যাদের জন্ম তাদের কৈশোরে কিংবা উঠতি যৌবনে পলিটিক্যাল আইকন বলে ছিলেন না কেউ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে মসনদ দখলের জন্য প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়া তেমন বলার মতো কিছু চোখের সামনে ঘটেনি। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় - আ'লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার 'ভিশন ২০২১' নতুন ভোটার হওয়া তরুণ-তরুণীদের উৎসর্গ করেছে। অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারের শেষ অংশে জাতীয় উন্নয়নে যুবশক্তিকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা হবে সে কথা বলা হয়েছে। এসব কথা শুনতে খুব ভালো লাগে। এতো স্বপ্ন দেখারই বয়স।

আমার যেমন ভালো লেগেছিলো ২০০১ সালে। এরকমই নির্বাচনের একদিন বা দু'দিন আগে হাতে এসেছিলো ৩২ পৃষ্ঠার নিউজ 'পৃন্টে' ছাপানো সাপ্তাহিকটি। মনকাড়া প্রচ্ছদ। চোখে চশমা পরে মোটরবাইক দিয়ে দাঁড়ানো সুদর্শন তরুণ। খানিক তফাতে গেঞ্জি আর জিন্সে মোবাইল হাতে হেটে যাচ্ছে তরুণী। মাঝামাঝি পড়ে আছে একটি বই - 'এ বৃফ হিস্টৃ অফ টাইম', লাল রঙা প্রচ্ছদের ব্যাকগ্রাউন্ডে দালান ছিলো এবং পাশে সূর্য উঠার ছাপ ছিলো বলে মনে পড়ছে। প্রচ্ছদ কাহিনী 'এক কোটি তরুণের কাছে একটি আবেদন'। চৌষট্টি কিংবা পঁয়ষট্টি অথবা সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়েসে সে সাপ্তাহিকের স্যুটেড বুটেড এডিটর চমৎকার একটি চিঠি লিখেছিলেন। 'আমার তরুণ বন্ধুরা, আমার তরুণ বান্ধবীরা' ডেকে 'তুমি' সম্বোধনের অনুমতি নিয়েছিলেন। তারপর নানান ছলে চার-দলীয় জোটের জন্য ভোট চেয়েছিলেন। 'অমুক দলকে ভোট দিও' এমন কথা তিনি সরাসরি বলেননি। তিনি তুলনা করেছিলেন, সে সময়কার দুই নেত্রীর, দুই অর্থমন্ত্রীর, দুই দলের ক্ষমতার দুই টার্মের। তারপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন তরুণ বন্ধু ও তরুণী বান্ধবীদের উপর। শেষে ছোটো ছোটো বাক্যে বলেছেন - 'কারো কথায় ভয় পেয়ো না', 'সকাল সকাল কেন্দ্রে যেও', 'আগে আগে ভোট দিও'। কিন্তু মাঝে দেখিয়েছেন দূর্দান্ত কিছু স্বপ্ন, প্রচ্ছদের অলংকরণের মডেল তরুণ তরুণী জীবন।

সেবার ভোটার হইনি। নইলে ঐ চিঠি পড়ার পরে আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতাম, শুনেছি পালটিয়েছে অনেকে। মূল বক্তব্যে ভোটের আহবান হয়তো ছিলো, কিন্তু অমন চিঠি আমাকে কেউ কখনো লিখেনি। কেউ বলেনি - দেশের তরুণ হিসেবে আমার মোবাইল পাওয়ার অধিকার আছে। বিদেশে তরুণদের গাড়ী আছে- এপার্টমেন্ট আছে- ক্রেডিট কার্ড আছে, চাকরীর নিশ্চয়তা আছে, গার্লফ্রেন্ড আছে। আর বাংলাদেশের তরুণরা বেকার হয়ে হন্য জীবনে কাটাচ্ছে। সে চিঠিতে চিরযৌবনা এডিটর এ'ও লিখেছিলেন- 'বিদেশে তরুণদের গার্লফ্রেন্ড আছে। অথচ চাকরী নেই বলে তোমরা ভরা যৌবনেও (প্রাইম ইয়ুথ) বিয়ে করতে পারছো না'। ওয়াও! তরুণদের অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি জৈবিক চাওয়া নিয়ে এমন করে আর কেউ ভেবেছেন বলে মনে পড়েনি। তাই সে চিঠি আমি বারবার পড়ি। হয়তো দু'পৃষ্ঠার চিঠি, কিন্তু কী দূর্দান্ত তার ভাষা, কী চমৎকার আহবান, লোভনীয় জীবনের ডাক!

দু'দিন পরে নির্বাচনে সেই এডিটরের ঘনিষ্ট দলটি জিতে। ভুমিধ্বস সে জয়ের উন্মাদনায় অনেক কিছুই ঘটে। হুমায়ুন আজাদের ভাষায় শহরের কাকগুলোও বিষন্ন হয়ে যায়। তারপর ঋতু বদলায়। দেয়ালের পোস্টার খসে পড়ে। কিন্তু আমি যত্ন করে রাখি সে চিঠি, ৩২ পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক। তরুণেরা এবার গার্লফ্রেন্ড না হোক, চাকরী অন্ততঃ পাবে সে আশায় চোখ রাখি স্মার্ট এডিটরের লেখায়। কিন্তু এ কী! তিনি আরও তরুণ হয়ে গেলেন। নানান রঙা শার্ট পরে (হয়তো আগেও পরতেন) লাল গোলাপ হাতে পেছনের জুলফি সামনে এনে ট্রেন্ডি করে চটাস চটাস করে বিদেশি ম্যুভির ক্লিপ দেখান। শুনেছি এমন অনুষ্ঠান তিনি আগেও করতেন। কিন্তু এবারও বিটিভির অনুষ্ঠানের চেয়ারটি তিনি নিজেই দখল করেছেন, সেখানে বসানোর মতো আরেকজন তরুণ খুঁজে পাননি। ওদিকে ঢাউস সাইজের বিশেষ সংখ্যায় তরুণরা লিখে যাচ্ছে তাদের প্রাইম ইয়ুথে ঘটে যাওয়া শরীরি সম্পর্কের ফ্রয়েডীয় কিংবা গুপ্তীয় গল্প। বিশেষ সম্পাদকীয়তে এডিটর জানাচ্ছেন - 'এসব গল্প আগামী দিনের সমাজ বিজ্ঞানীদের নীরিক্ষার বিষয় হবে'। কিন্তু, এক কোটি তরুণের কী হবে!

বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি, এক কোটি তরুণের একজন (স্ত্রী সহ) বিটিভি'র প্রাইম টাইমের স্লট দখল করেছিলেন। এই তরুণ পরে প্রবীণ পিতাসহ 'বিকল্প' পথ ধরেছেন। আরেক তরুণ অবশ্য তরুণের পর্যায়ে নেই। সেই এডিটরের ভাষায় বাংলাদেশের মহাথির তিনি। মালয়েশিয়া থেকে শেখার জন্য কিনা জানি না, তবে কতো কোটি টাকা কী জানি কী হয়েছে, আঁটকে গেছে। এই শাহেনশাহ তরুণের কাছাকাছি বন্ধুরা কেউ টিভি চ্যানেল করেছেন, ফোন কোম্পানী এনেছেন। এগুলোর অর্থায়ন সুত্র নিয়েও নানান তর্ক আছে, মামলা আছে। আজ এটিএন বাংলায় রাহুল রাহার সাথে 'লীড নিউজ' অনুষ্ঠানে বিএনপির মিস্টার রিজভী অবশ্য বলছিলেন, "বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের গণতন্ত্রের কৈশোরিক অবস্থায় দূর্নীতি একেবারে না থাকা সম্ভব নয়"। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বড়ো কথা নয়, 'গণতন্ত্রের কৈশোরিক অবস্থা' কী, সেটা ভাবতেই অনুষ্ঠান শেষ। রাহুল রাহা বুঝেছেন কিনা জানি না। যাক, তরুণের গল্প ছেড়ে কৈশোরে নয়। ক্ষমতাবান তরুণেরা সব মামলা থেকে মুক্ত হবেন, ইতোমধ্যে হতে শুরু করেছেন, আরও হবেন, একেবারে বিশুদ্ধ তরুণ হবেন। বিপরীতে হার্ভাড/ক্যামব্রিজের পেপার নিয়ে আলোচনায় আসছেন আরেক তরুণ। তিঁনি বিদেশীনি গার্লফ্রেন্ডকে বৌ করেছেন, রাণীমা'র উজির নাজিররা লিখছে - সম্ভবনা আছে তিনিই হবেন রাজীব গান্ধী, তাঁর বিদেশীনি স্ত্রীটি সোনিয়া স্টাইলে দেশে আলো দেখাবেন। হয়তো সেসব কেবলই কল্প-গল্প। কিন্তু, শেষতক সে-ই সুদর্শন চির তরুণ সম্পাদকের পরিণতি মইন-মিলার কল্পগল্পের চেয়েও করুণ হয়েছে। লাভ রোডে 'সাদ্দাদের বেহেশতখানা'য় লস দিয়ে 'পালাতে গিয়ে' বিমান বন্দরে আঁটকে গিয়েছিলেন। তখনো আমি সে-ই চিঠিওলা ম্যাগাজিন সাথে নিয়ে ঘুরি। ইরাবতী বা কাওয়াই নদীর ওপাশে গেলেও একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরীর সাথে ভাজ করে রাখি। স্বপ্নগুলো সত্যি হোক না হোক, কল্পগল্প মনে করেই পড়ি সে চিঠি। সময় যায়, পাঁচ বছর, ছয় বছর। কেবল অপেক্ষায় থাকি, একবার যদি দেখা হয় - চিঠিটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবো, 'আমাদের কাছে এ চিঠি আপনি লিখেছিলেন, মনে আছে?' দেখা হয়নি। বরং গত মে মাসে আরেক চিঠিতে তিনি বিদায় জানিয়েছেন ২৯ বছরের আজন্ম সংস্পর্শের পত্রিকা থেকে। সে চিঠি পড়ে আমি হতাশ হয়েছি, বিমর্ষ হয়েছি। তরুণদের মিছে স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁর কী লাভ হলো, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চিন্তা বাদ দিয়েছি। কেবল, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছি - 'আই ফিল স্যরি ফর ইউ, মিস্টার রেহমান!'

নির্বাচনের এ ডামাঢোলে, নবীন/তরুণদের জপাজপিতে আজ খুব মনে পড়ছে মিস্টার রেহমানের সে চিঠির কথা। প্রথম কৈশোরে প্রেমিকার লেখা চিঠির অনুভব যেমন প্রায়ই নস্টালজিক করে তোলে, ঠিক তেমন করে মনে পড়ছে। বাসায় কোথাও কোনো ফাঁকে আছে হয়তো এখনো। আজ বাদে কাল নির্বাচন। বিশাল তরুণ গোষ্ঠী ভোট দিবে। এক কোটি তরুণের একজন হয়ে, খুব আশার কিছু দেখতে পাচ্ছি না। বেকারত্ব বাড়ছে, চাকরীর বাজার সংকোচিত হচ্ছে, ধনী-গরীবের আয় বৈষম্য বাড়ছে দিনদিন। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা ২০০৮এ গেলো এবং এখনো চলছে তার ধাক্কা বাংলাদেশে বিন্দুমাত্র গেলেও নতুন সরকার কীভাবে সামলাবে। জনসংখ্যার বিকাশমান বা বিস্ফোরন্মুখ যুব অংশের কর্মসংস্থান কোথায় কীভাবে করা হবে সেটা হয়তো দেখার বিষয় হবে। কে জানে, হয়তো আরো একজন শাহাবুদ্দিন প্লেনের চাকায় চড়ে বিদেশ যেতে চাইবে, অবৈধ পথে ইউরোপ পাড়ি দিয়ে গিয়ে মাঝ সমুদ্রে পথ হারাবে মুন্সীগঞ্জের সোলায়মান, স্বপ্নভূক হয়ে মারা যাবে তারা, এবং আরও অনেকে। কুয়েতে ন্যুনতম মজুরী চাওয়া শতশত শ্রমিককে আধা রুটি খেতে দিয়ে রোদের মধ্যে পাথরে দাঁড় করিয়ে রাখবে, প্লেন ভর্তি করে রক্তাক্ত জামায় এসব মিসকিনদের ফেরত পাঠানো হবে স্বদেশে। এসব দেখে আমাদের নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র পুরনোর মতোই নির্বিকার থাকবে। পাঁচতারার বলরুমে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে প্রকাশিত প্রচারিত হবে - এবারও জিডিপি গ্রোথ সেভেন পার্সেন্ট। ধুমপান ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ বাড়বে। এক কিশোরী তার ফেসবুক প্রোফাইলে পলিটিক্যাল ভিউ লিখবেঃ All Sux। তখন বিভিন্ন চ্যানেলে তরুণদের আইকন সাজবেন একজন ভুঁড়িওলা বিগত বিতার্কিক। চল্লিশ ছোঁয়া হাল্কা সাদা হওয়া চুলে কলপ লাগিয়ে তরুণদের জায়গাটি তিনি দখল করে নিবেন। পরিপাটি গোঁফে, মেক-আপে স্যুটে বুটে, তিনি বলবেন, 'প্রিয় তরুণ বন্ধুরা, তোমরা হয়তো জানো, এডমান্ড বার্ক বলেছিলেন...'।

.
.
.

Read more...

08 December, 2008

গরুর খোঁজে, ফেইসবুকে

বিকেলে পাশের বাড়ীতে খানিক চাপা হৈ-হল্লা পড়ে গেলে তৌসিফ দ্রুত বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসে। এমন সমবেত চিৎকার সাধারণতঃ এ বাড়ির কারো কানে আসে না। কিন্তু তৌসিফ এ আওয়াজ শুনলো। কারণ, জানালা খোলা রাখার কারণে পাশের বাড়ীর বারান্দায় কী কী আলাপ হয়, বাড়ীর মালিক মতিন চাচা উঁচু স্বরে চাচীকে কী কী বলেন সব তার কানে চলে আসে। এরচেয়েও বড়ো কারণ কখন আকাঙ্খিত সে ডাক শোনা যাবে – ‘মা আমি বাইরে গেলাম, দরজা লাগিয়ে দাও’। এ ডাক শোনার পরে তৌসিফ দ্রুত জিন্সে পা গলায়, আরও দ্রুত জামায় এক্সাইট স্প্রে করে। তারপর হুড়হুড়িয়ে মোড়ের রাস্তা ধরে – ‘সুমাইয়া, কলেজে যাচ্ছো?’

ঈদের ছুটিতে সুমাইয়ার কলেজ বন্ধ, প্রাইভেটেও যায় না। বরং আজ দুপুরের পর থেকে সুমাইয়ার সিডি প্লেয়ারে বাজছিলো – ‘চাঁদের আলো যদি ভালো লাগে, কাল হয়ে যায় ঝাপসা, আমার এ তরী যদি চলে যায়, ফিরে আর আসবে না’। দূর থেকে ভেসে আসা অস্পষ্ট গানে কান পেতে তৌসিফ আনন্দআলো’র চলতি সংখ্যায় ‘অপি করিমের আয়নাঘর’ পড়ছিলো আর ভাবছিলো আগামীকাল কীভাবে সুমাইয়াদের বাসায় যাওয়া যায়। এর মাঝে আচমকা এমন হৈ-হল্লায় সে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।

মতিন চাচা হন্তদন্ত হয়ে কথা বলছেন। পেছনে চাচী। সুমাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না। মতিন চাচা কোনদিকে যাবেন সেটাও ভেবে পাচ্ছেন না, ডান-বাম করছেন। চাচীও অস্থির। শেষে চাচা পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে ডান দিকে রওনা দিলে তৌসিফ চাচীকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। চাচীর কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম জমেছে। অস্থিরতায় জড়ানো গলায় যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে কুরবানীর গরু হারিয়ে গেছে। কীভাবে হারালো, কোথায় হারালো, কখন হারালো এসব প্রশ্নের সাথে দারোয়ান মাসুদ কই ছিলো সে প্রশ্ন চলে আসে। আর জানা যায়, গরুর সাথে সাথে মাসুদও নাই। মাসুদ কোথাও গেলো আর এই ফাঁকে চোর গরু নিয়ে হাওয়া হলো, নাকি মাসুদ নিজেই গরু নিয়ে হাওয়া হলো সে প্রশ্নের উত্তরে চাচীও দ্বিধাগ্রস্থ। কেবল বলেন, দেখো তো তোমার চাচা আবার কোনদিকে গেলো।

মতিন চাচা গরুর খোঁজে রাস্তায় হন্য হয়ে ঘুরছে, চাচী গেটে দাঁড়ানো; তখন তৌসিফের ছাদে যেতে ইচ্ছে করে। ‘এই ছাদে আমি আর ঐ ছাদে তুমি’ স্টাইলে সুমাইয়ার সাথে ইটিশপিটিশ করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চাচীর উৎকন্ঠা ‘দেখো তো, তোমার চাচা কোনদিকে গেলো’ তৌসিফকে দায়িত্বশীল করে তোলে। তার মনে হয় এ-ই সুযোগ, চাচার সাথে গরুর খোঁজে বের হয়ে খানিক প্রিয় হওয়া যাবে। এসব ভেবে তৌসিফ দৌড়ে ডান দিকের রাস্তায় যায়। অনেক দৌড়ে মতিন চাচার কাছাকাছি আসতেই চাচা ঘাঁড় বাঁকিয়ে একবার তাকান। যখন দেখে তৌসিফও সমান তালে লম্বা লম্বা পা ফেলছে তখন মতিন চাচা জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি আমার সাথে কোথায় যাচ্ছো?’
‘আমিও যাই চাচা, গরু খুঁজি’।
‘তোমাকে কে বলেছে আমাদের গরু খুঁজতে?’
তৌসিফ এবার চুপ থাকে। তবে পা চলা বন্ধ করে না।
‘এই ছেলে, কথা শোনো না কেনো? যা-ও বলছি।‘
তৌসিফ এবার থামে। বলে, ‘চাচা, আমি তাহলে ঐদিকটাই খুঁজি?’
মতিন চাচা কথার জবাব দেন না। আগের মতোই ছুটতে থাকেন। তৌসিফ তখন লীফা কনফেকশনারীর সামনে এসে খানিক জিরোয়। সেন্টু-জাহিদদের খোঁজ করে। সবাই মিলে খূঁজলে হয়তো গরু পাওয়া যাবে। পরের মুহুর্তেই মতিন চাচার খিটখিটে আচরণ মনে পড়ে। তার মনে হয়, কোনো দরকার নেই খোঁজার, গরু হারিয়েছে বেশ হয়েছে। তখন তৌসিফের কল্পনায় ভেসে উঠে সারা বিকেল সন্ধ্যা রাত ঘুরেও মতিন চাচা তার গরু খুঁজে পাবে না। ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরবে ঘাম নিয়ে। তৌসিফ আজ রাতে এসএমএস এ সুমাইয়াকে বলবে – ‘কী আর করবে, আমাদের বাড়ী চলে এসো, গোশত কেটে দিও। এক কসাইয়ের টাকা দেব, ব্যাগ ভর্তি গোশত দিবো, চাইলে কলিজা-চর্বি দেবো।‘ সুমাইয়া কী বলবে সেটা ভাবার সুযোগ হয় না। সামনে মোটরবাইক থামায় অয়ন ভাই, কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি।
হাত তুলে ‘স্লামালাইকুম ভাইয়া’ বলতেই অয়ন ভাই ডাক দেয়, ‘কী করিস? এদিকে আয়, বাইকে উঠ।‘

কোথায় যাবে সে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে জানা যায় সামনের ইলেকশনের এমপি ক্যান্ডিডেট আসাদ ভাই এলাকায় এসেছে। ঈদে সবার সাথে দেখা সাক্ষাত করছে, মূল কাজ নির্বাচনী প্রচারণা তো আছেই। তৌসিফ জানে না এইসব জায়গায় তার কী কাজ থাকতে পারে, তবুও অয়ন ভাইয়ের সাথে উদ্দেশ্য-কারণ-জিজ্ঞাসায় যায় না। ঠান্ডা বাতাসে মোটরবাইকে শীতশীত ভাব লাগছে আর কেনো জানি সুমাইয়াকে মনে পড়ছে।

ঝিলের পাড় ব্রিজের উপরে মোটর বাইক উঠলে অয়ন দেখে দূরে মাঠ দিয়ে মাসুদ হেটে যাচ্ছে, সুমাইয়াদের দারোয়ান মাসুদ। হাতে রশি ধরা গরু। তৌসিফের মনে হয় – আর্কিমিডিসের মতো ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার দেয়। অয়ন ভাই মোটর বাইক থামিয়ে কাহিনী শুনলে দ্রুত দুইজন মাঠে নেমে যায়। মাসুদ খানিক থতমত খেলেও বলে, ২দিনে গরুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে, তাই সে ভেবেছে – এদিকটায় এনে ঘাস খাওয়ালে ভালো হবে। আর যাই হোক কাল সকালেই এই গরুর জীবন শেষ। মাসুদের এ গল্প নিতান্তই বানোয়াট মনে হয়। বোঝা যায় – গরু নিয়ে ভাগছিলো সে। নয়তো কাউকে না বলে কয়ে এতো দূরে এনে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর কী দরকার হলো। মাসুদ কথার পিঠে কথা বললে অয়ন ভাই মাসুদের শার্টের কলার চেপে ধরে, বলে – ‘তুই কোন স্কুলে পড়ছোস?’
এরকম কথা কাটাকাটি শেষে অয়ন ভাই তৌসিফকে দায়িত্ব দেয় গরু এবং মাসুদ দুইটাকে নিয়ে সুমাইয়াদের বাসায় পৌঁছে দিতে। আসাদ ভাইয়ের মিটিং্যের দেরী হয়ে যাবে তাই অয়ন ভাই মোটর বাইকে টান দেন। ওদিকে গরু আর মাসুদকে সামনে রেখে তৌসিফ রাস্তা ধরে।

পথে পথে মাসুদ নানা বাহানা দেয়। বলে তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো না, চুরি তো নয়ই, ক্ষুধার্ত গরুর জন্য তার মায়া চুপসে চুপসে পড়ে। তখন তৌসিফের মাথায় অংক খেলে। দুয়ে দুয়ে আর আর দুই দু’গুনে চার মিলে যায়। মাসুদকে হাত করার এই সুযোগ, সামনে নানান কাজে তাকে দরকার হতে পারে। আর আজ এই মুহুর্তে মাসুদকে চোর প্রমাণের চেয়েও নিজেকে হিরো বানানোর বড়ো দরকার। আর সে সুযোগ যখন হাতের কাছে চলে এলো তখন বৃথা হেলা করা কেনো!

খানিক ধমকের পরে মাসুদকে বুঝানো হয়, তাকে চোর বলা হবে না। বরং বলা হবে সে’ও হঠাৎ বিকেলে গেটের কাছে গরু না দেখে খুঁজতে বের হয়েছিলো। ভয়ে কাউকে বলেনি কিছু। তবে শেষমেশ গরু খুঁজে পেয়েছে তৌসিফ। ঝিলের পাড় ব্রিজের অন্য পাশে দড়ি ছেড়া গরু দেখে তৌসিফ ভেবে নিয়েছে এটাই সুমাইয়াদের গরু। গরু নিয়ে আরেকটু সামনে আসতেই মাসুদের সাথে দেখা, তখন মাসুদ সনাক্ত করে এটাই তাদের গরু। এ গল্পের ফরম্যাট ঠিক হয়ে গেলে দুজনেই খুশি হয়ে সুমাইয়াদের বাসার গেটে কড়া নাড়ে।

তখন সন্ধ্যা নেমেছে। টিভিতে দু’জন মডেল সেলিব্রিটি আর একজন নাট্যকার মিলে খাসির শাহী কোর্মা রান্না শিখাচ্ছে। মতিন চাচা গরু দেখে উল্লাসে ফেটে পড়লেন। মাসুদ তুই কই ছিলি জিজ্ঞাসার পরে যখন তিনি জানতে পারেন সব কৃতিত্ব তৌসিফের তখন তিনি তৌসিফের মাথায় হাত বুলান। বেঁচে থাকো বাবা, বলে বিকেলের রাগী কথার জন্য একটু লজ্জিতও হন – ‘বুঝো তো বাবা, ঈদের আগের দিন গরু হারানো। কাল বাসায় এসো বাবা, তোমার বাবা মা’কেও আসতে বলো’।
তৌসিফ তখন সুমাইয়ার দিকে তাকায়। নোকিয়া এন সিরিজের নতুন সেটে গরুর ছবি তুলছে সে, আর এমন ভাব করছে যেনো তৌসিফকে চিনেও না সে।

তৌসিফের নিজেকে কেমন যেনো সুপার হিরো মনে হয়। মনে হয় এরচেয়ে বেশি আনন্দের ঈদ হতে পারে না। সুমাইয়ার উপর একটু অভিমান হয়। কী এমন ক্ষতি ছিলো একটু কথা বললে। সুমাইয়া এক কাপ চা খেয়ে যেতে বললে চাচা-চাচী কি বাধা দিতো আজ? এ অভিমানে তৌসিফ সুমাইয়াকে ফোন করে না সে। আরও খানিক পরে ফেসবুকে লগ ইন করলে নোটিফিকেশনে দেখে ‘সুমাইয়া মতিন ট্যাগড ইউ ইন ওয়ান ফটো'।
তৌসিফের বুকটা ধক করে উঠে। তবে কি গোপনে সুমাইয়া তখন তার ছবিও তুলে নিয়েছে! স্লো ইন্টারনেটে আস্তে আস্তে পেজ ওপেন হয়। কিংবা অতি উৎসাহে তৌসিফের মনে হয় পেজ ওপেন হতে দেরী হচ্ছে খুব। শেষে একটা গরুর ছবি আসে, দেখা যায় ছবির নাম – ‘আমাদের কোরবানীর গরু, আজ হারিয়ে গিয়েছিলো’। গরুর পেটে ট্যাগ করা – তৌসিফ রহমান। রাগে তৌসিফের দাঁত কিড়মিড় করে। তখন মোবাইল ফোনে রিং হয়। সুমাইয়ার ফোন – ‘কী খবর, হলি কাউ- পবিত্র গরু?’
তৌসিফ চুপ করে থাকে।
সুমাইয়া জিজ্ঞেস করে – ‘কাল বাসায় আসবে তো? পরশু সকালে ফ্রি আছো? ঘুরতে যাবে?’
তৌসিফ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না। মনে হয় এর জবাব গরু খোঁজার চেয়েও কঠিন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তৌসিফ টাইপ করে –
‘আগামীকাল সুমাইয়া গরুর গোশত খাবে’।

.
.
.

Read more...

25 September, 2008

এই এলিজি আমি লিখতে চাইনি

জানি না, কেনো মনে গেঁথে ছিলো সেই নাম, ‘মুহম্মদ’ বানানের ভিন্নতা নাকি আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসা পূর্ণাঙ্গ নামের জন্য, নাকি লেখার বিষয় – ভাষার বিন্যাস, আজ কিচ্ছু মনে নেই। শুধু মনে পড়ে – যুগান্তরে মুহম্মদ জুবায়ের’এর কলাম আমার নিত্যপাঠ্য হয়ে উঠেছিল সে সময়। আরও বছর পরে ব্লগে দেখি ‘চন্দ্রবিন্দুরা সব গেলো কোথায়?’, মন্তব্য-প্রতি মন্তব্য। এবং তার সূত্র ধরে ক্রমশঃ আপন হয়ে আসে মুহম্মদ জুবায়ের, আমাদের সহব্লগার জুবায়ের ভাই, প্রিয় জুবায়ের ভাই।

ব্লগে ২০ পর্বের একটি সিরিজ লিখেছিলাম একবার। সিরিয়াস পাঠক হয়ে জুবায়ের ভাই সব পর্ব পড়ে কমেন্ট করেছিলেন, দিয়েছিলেন আমার এ যাবতকালের ব্লগিংয়ে পাওয়া হীরন্ময় কিছু মন্তব্য। যেমন পেয়েছি, অনুগল্প সংকলন ‘দিয়াশলাই’ শেষে। বিনয় করে একেবারে শুরুতেই চেয়ে নিয়েছি ‘আপনি’র বদলে ‘তুমি’ সম্বোধন। ব্লগিং ইন্টারএকশনে বারবার বুঝেছি, বয়স-অভিজ্ঞতার-প্রজ্ঞার সীমানা পেরিয়ে এমন আপন হয়ে উঠেন খুব কম মানুষ, অথবা কেবল জুবায়ের ভাই। সে জন্যই সিরিয়াস পোস্ট কিংবা চটুল সিনেরিভিউতেও জুবায়ের ভাই সরব থাকতেন সবসময়।

আমার একটি ‘সংবেদনশীল বিষয়ের’ লেখা পড়ে জুবায়ের ভাই মনোকষ্ট পেয়েছিলেন, বলেছেন – এমনটা তিনি আশা করেননি। আমি দৃঢ় ছিলাম লেখার অবস্থানে, যেমনটি ছিলেন আরও প্রিয় কিছু মানুষ, তবুও সাহস পাইনি গিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে। কমেন্ট না করে পালিয়ে বেড়িয়েছি সচেতনভাবে। কারণ, তিনি জুবায়ের ভাই। উলটো আবদার জানিয়েছি নানান বিষয়ে, নানান ব্যস্ততায় দেখিনি সে আবদার পূরণ, তাই মেইলে লিংক দিয়ে বলেছেন – ‘তোমার ফরমায়েশে লেখা, আর তুমিই ক'দিন ধরে নিখোঁজ!’
অথবা পালটা মেইলে জবাব – ‘শিমুল, সালাম-টালাম পেলে নিজেকে খুব বুড়ো-বুড়ো লাগে। বয়সে যদিও বুড়োই, সেটা মনে রাখতে চাই না। হলে কী হবে, আজকাল শরীরও ঘন ঘন জানান দেয়।‘
হায়, সময়! লাল ম্যাপেল পাতার ভিসার দৌড়ে গিয়ে গিয়ে আমার আর কমেন্ট করা হলো না।

প্রিয় জুবায়ের ভাই,
ব্লগে দেয়া আপনার উপন্যাস ‘চুপকথা’ একটি সাপ্তাহিকের আর্কাইভে খুঁজে পেয়ে মেইল করার পর বলেছিলেন – ‘সম্পূর্ণটা যে কবে লিখে উঠতে পারবো জানি না। হয়তো এ জনমে হবেও না। কারণ, পুরনো লেখার কাছে ফিরে যাওয়া এবং বিশেষত তা নতুন করে লেখা খুব দুরূহ কাজ বলে আমার মনে হয়। তা ছাড়া, লেখাটার জন্যে আরো কিছু মাল-মশলা দরকার যা দেশে গিয়ে আমাকেই সংগ্রহ করতে হবে। অন্য কাউকে দিয়ে করা সম্ভব নয় এইজন্যে যে আমি ঠিক কী চাই তা বোঝাতেই পারবো না।

একই প্রসঙ্গে ব্লগে কমেন্টে বলেছিলেন, ‘দেরি হলেও 'চুপকথা'-বৃত্তান্তও খুঁজে পেয়েছো। এখন থেকে বলতে হবে 'শকুনচোখ, থুক্কু, শিমুল হইতে সাবধান'!’

জুবায়ের ভাই – আপনি কতোটা সাবধান থাকতে পারবেন জানি না। আমি কান্না শেষে এখন আরো ধারালো চোখে আপনাকে খুঁজবো। আমি খুঁজবো ব্লগের পাতায়, লেখায়-কমেন্টে, উপন্যাসের লাইনে – ‘আমাদের অমল’এ। আমার জি-মেইলে। আপনার কাছে আমার এখনো অনেক আবদার বাকী রয়ে গেছে। খিচুড়ির দাওয়াতের কথা, একসাথে কফি খাওয়ার কথা; আপনি কী করে ভুলে গেলেন! কী করে ভুলে গেলেন আপনার পা ছুঁয়ে আমার আশীর্বাদ নেয়ার স্বপ্ন?

আপনি জনম কীভাবে হিসেব করেন আমি জানি না। জানতে চাই না। আজ এই মুহুর্তে ভেজা চোখে, গলায় জমাট কান্নায়, অস্পষ্ট কী-বোর্ডে আঙুল টিপে বলি - আমি আপনাকে ঠিকই খুঁজে নেবো অন্য কোথাও, অন্য কোনো পাড়ে। অন্য জনমে। সেদিন আমি আপনার হাত ধরে কঠিনভাবে জিজ্ঞেস করবো, ‘কেনো আমাদের ছেড়ে এলেন আচমকা?’
তারপর আপনি খিচুড়ি নিয়ে আসবেন, আমি কফি বানাবো।
শুনতে চাইবো, না শোনা চুপকথা।

এইসব এলিজি বয়ান নয়,
জুবায়ের ভাই - আপনাকে খুব দরকার ছিলো আগামী দিনগুলোয়, আমাদের প্রয়োজনে।
এভাবে কি পালানো যায়?
কী করে পালাবেন আপনি! কোথায়!!!

.
.
.

Read more...

30 August, 2008

ইদানিং দ্রুত সন্ধ্যা নামে

গত রাতের বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা হয়ে গেছে। দশ নম্বর গোল চক্করে কাদায় থকথক। আলতো করে পা ফেলে গুটি গুটি করে আগাই। যাবো গুলশান। মিশুক ড্রাইভার 'একদাম একশ' টাকা' বলে ফিরে তাকালো না। আমিও সামনে যাই। বনানী কাকলীর জন্য মানুষের দৌড়। শাদা মাইক্রো কাকলী কাকলী বলে ডাকলে আমি দৌড়ে উঠি, সাথে আরো ৬ জন। ক্যান্টনমেন্টে প্রচন্ড জ্যাম। শনিবারে এত গাড়ী হবে ভাবিনি।

এ পথ আমার অনেক চেনা। জলপাই সাম্রাজ্যের মইনুল রোড।
অনেক সকাল দুপুরের আনন্দ বেদনা গন্তব্য।
জীবনের শ্রেষ্ঠতম এক দৃশ্য দেখেছিলাম এ রাস্তায়।
গোধুলির আলোয় মোটর বাইকে প্রেমিকের পিঠে প্রেমিকার নির্ভার আস্থা।
"তখন আমার একুশ বছর বোধ হয়।"

সৈনিক ক্লাব এগিয়ে গাড়ী সামনে যায়, কাকলী মোড়ে জ্যাম।
আমার ডান পাশে সিএনজি। ঘনিষ্ট তরুণ, উঠতি তরুণী।
চোখ পড়ে যাওয়ায় কিংবা আড়চোখে দেখার বিষ্ময় কাটিয়ে দেখি, মেয়েটি হু হু করে কাঁদছে।
হাত জোড় করে মাফ চাইছে।
ছেলেটি কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কপালে চুমু খাচ্ছে ।
মেয়েটি আরো আবেগী হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা চাইছে হয়তো।

সামনে সিগনাল ছাড়ে না। আমার চোখ লোভী হয়ে উঠে। আবার তাকাই।
হাঁটুর নিচ থেকে পা কাটা এক জোয়ান ভিক্ষা চায় সিএনজির ডানে দাঁড়িয়ে। তাদের নজর নেই ভিক্ষুকের দিকে। রোড ডিভাইডারে জোয়ান বসে পড়ে। এবার এক থুরথুরে বৃদ্ধ। হাত এগিয়ে ভিক্ষা চাচ্ছে, কী কী জানি বলছে - হয়তো প্রেমীদের সংকট মোচনের দোয়া করছে। বসে থাকা জোয়ান এবার বৃদ্ধের হাত ধরে টান দেয়, শরীরি ভাষায় বলে, এখন ভিক্ষা চেয়ে লাভ হবে না। আবার হাসেও। সি এন জির অন্য দরজায় আরেক বুড়ি ভিক্ষুক। এবার হাত পেতে নয়। তারা নাটক দেখছে।

মেয়েটি ছেলের বুকে মাথা রেখে আছে।
ফোঁসফাস করে কাঁদছে। পা ধরছে।

আমিও ভিক্ষুক হয়ে যাই।
গল্প বানাইঃ
- মেয়েটি বলছে - প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলো, প্লিজ। আমার বাসায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলেটি বলছে, এই তো আর কটা দিন। তার পর টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন।

অথবা,
- মেয়েটি বলছে - প্লিজ তুমি আমাকে ঠকিও না, অনন্তার সাথে ঘুরো না, আমার কী নেই যা ওর কাছে আছে? ছেলেটি বলছে - ও সবই গুজব...

অথবা,
- মেয়েটি পা ধরে বলছে - 'আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি, ভালোবেসে শুয়েছি। প্লিজ, সিডিটা আমাকে দিয়ে দাও।'

এবার আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
নষ্ট ভাবনারা ঘুরঘুর করে। হঠাৎ এ মেয়েটির সাথে কফি খেতে ইচ্ছে হয়। চোখ মুছে বলতে ইচ্ছে করে, 'মেয়ে কেঁদো না'।
দেখি, আশেপাশের অনেক চোখ এখন ঐ সি এন জি তে।

সিগনালের সবুজ বাতি জ্বলে উঠে।
সেদিন ছোট ভাইয়া বলছিল - ছিনতাই ঠেকাতে সিএনজির কাভার ট্রান্সপারেন্ট করা হবে।
ভাবছিলাম, সিক্রেসি অফ লাইফ কোথায় যাবে?
এবার আমি আমার নিজেকে গল্পে নিয়ে আসি। নিজের সাথে নিজের লুকোচুরি। মানুষের মাঝে গল্প খুঁজি, আর সিক্রেসীর দোহাই দিই। শালা, আমি হিপোক্রেট।

দুপুরে দাওয়াতে বসি আজন্ম অদেখা মানুষের টেবিলে।
"বুঝলেন লিখতে গিয়ে ধর্মের বিরোধী হবেন না, এমন কিছু লিখবেন যাতে করে ইমানী মুসলমান দু ফোটা চোখের পানি ফেলে, দোয়া করে।"
আমি আবারও গল্প বানাই। জানি এসব লেখা হবে না।

ইচ্ছে ছিলো, নাজমুল ভাইয়ের বাসায় যাবো। তার আগে আদনানের বাসায় এক ঢু, মিলটনকে ফোন দিয়ে ডেকে মিতুর অফিসে এক মিনিট। বিকেল ঘনায় দ্রুত। আদনানের বাসায় গপ্পে গপ্পে ছ'টা বাজে। মিল্টন বাসার বাইরে যাবে না। ফোনে জানি নাজমুল ভাই গলফ ক্লাবে যাবেন, তাই বলি - 'আজ আমি বাসায় চলে যাবো'।
মিতুর সাথে আর দেখা হবে না। হাজবেন্ডের সাথেও না।
শোনা হবে না, 'তুই আর মানুষ হইলি না'।

মানুষের ভীড়ে গুলশান এক নম্বর চক্কর।
গাড়ী নেই।
নীল ক্যাবে একজন দরাদরি করছে, ড্রাইভার বলছে - মিটারের চেয়ে ১০টাকা বাড়িয়ে দিয়েন।
আমি বলি - মীরপুর যাইবেন?
একজন বলে, চলেন তাইলে দুইজন মিলে যাই, আমিও মিরপুর যাব।
অবিশ্বাসে আমি সামনে ড্রাইভারের সাথে বসি।
মহাখালী পার হলে আর জ্যাম নাই। ক্যান্টনমেন্টে ফ্রি রাস্তা।
পেছনের জন ফোনে গদগদ আলাপ করছে - 'কী বলো, তুমি আমাকে এখনো বিশ্বাস করো না? এতোদিনেও চিনলা না?... আচ্ছা তুমি ডায়ানোসর দেখেছো?"
এখানেও গল্প ভর করে। আমি কি ডায়ানোসর দেখেছি?
সকালের প্রেমী দুজনের কথা মনে পড়ে।
মানুষের সম্পর্ক এখন খুব বেশি ইনসিকিউরড।
"কেউ দেবে নিরাপত্তা, কেউ বিশ্বাস, আসলে সবাই চায় জিততে।"

দশ নম্বরে নেমে রিক্সা করে বাসায় ফিরি।
সময় সোয়া সাতটা।
মাইকে হারানো বিজ্ঞপ্তি। ১২ বছরের কালো মেয়ে হারিয়ে গেছে।
রাস্তার পাশে সারিসারি ভ্যান, তাল - কলা - বই; নেয়ামুল কোরান, নবজাতকের সুন্দর নাম।
হোটেলে বড় কড়াইয়ে মোগলাই পরোটা ভাজা হচ্ছে।
কোলাহলের মাঝে নাকে ঘ্রাণ ভর করে।

আমি পলায়নপর।
দেশের বাইরে গেলে গল্পের প্লট খুঁজি। নিত্য।
এখন গল্প আর লেখা হয় না।

এই দ্রুত সন্ধ্যা নামাটা এখনকার বড় গল্প।

-
-
-

Read more...

16 August, 2008

৬ষ্ঠ পাতার বিজ্ঞাপন

'ইত্তেফাকের ৬ষ্ঠ পাতায়
বিজ্ঞাপনে ছিলো পাত্রী চাই,
বর্ণনাতে ছিলো মিল-
ঠিক আমি চেয়েছি যা তাই।'


৯০/৯১ সালের দিকে তুমুল জনপ্রিয় গান, আদনান বাবুর এলবাম - রং নাম্বার।

সময়ের সাথে আদনান বাবু ক্রেজ হারিয়েছে। নতুন নতুন শিল্পীর কন্ঠ শ্রোতা প্রিয় হয়েছে। ইত্তেফাকের ৬ষ্ঠ পাতার বিজ্ঞাপনের এ গানও আর শোনা যায় না এখন। নেটে ঘেঁটেও পেলাম না। তবে ইত্তেফাকের পাশাপাশি আরও পত্রিকা এসেছে নানান রঙে।
কোনো এক অদ্ভুত কারণে ৬ষ্ঠ পাতার বিজ্ঞাপনে রয়ে গেছে মিল।

ক'দিন আগে কিচ্ছু করার নাই। হাতের কাছে দৈনিক যুগান্তর। প্রথম পাতা, শেষ পাতা, খেলার পাতা, চিঠিপত্র কলাম শেষ। গেলাম ৬ষ্ঠ পাতায়, বিজ্ঞাপনে ভর্তি।

পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে আছেঃ

"ইতালীর সিটিজেন, সেটেল্ড। +৩৬, সংগত কারণে ডিভোর্সড। ইতালীতে নিজের জুয়েলারী ব্যবসা। পাত্রীর পিঠে টিউমারের চিকিৎসায় স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকায় অবস্থান। ইতালী যেতে আগ্রহী সদ্বংশের রুচিশীল অবিবাহিত পাত্র, +৪০ দাঁড়িতে আপত্তি নাই। শেষ জীবনের সংগী পাত্রকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। যোগাযোগ করুন - মোবাইলঃ ০১৭*******"

_
লে হালুয়া।
পাত্রী ইতালীর সিটিজেন, নিজের জুয়েলারী ব্যবসা আছে। এরপরেও টিউমারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হলো?
এখন পাত্রী সদবংশের ৪০ বছরের পাত্র বিয়ে করে ইতালী নিয়ে যাবেন, আর পাত্র যদি পাত্রীর শেষ জীবন পর্যন্ত সংগী হয়ে থাকতে পারে তাহলে আর্থিক সাহায্য করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে - পাত্রীর যখন শেষ জীবন, পাত্রের তখন কোন জীবন?
দাঁড়িতে আপত্তি নাই? আপত্তি থাকে নাকি!!!

প্রথম আলো এখন বিজ্ঞাপনে সয়লাব।
আদনান বাবুর গানের ৬ষ্ঠ পাতার মুক্তি নাই। বাড়ী ভাড়া, পাত্র-পাত্রী, পড়াব, বিক্রয়, কোরিয়ান ভাষা, সাইপ্রাসে পড়াশোনা হেন কোন বিষয় নাই যে নাই। নিউজ যেমন ১ম পাতা থেকে জাম্প করে - বাকী অংশ ১৫ পাতায়, তেমনি এসব বিজ্ঞাপনও ৬ষ্ঠ পাতায় শেষ হয় না - "শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের বাকী অংশ দেখুন ১৪ নং পৃষ্ঠায়"।

গত ২-৩ দিনের প্রথম আলো থেকে বাছাই করা কিছু পাত্র-পাত্রী চাই।

পাত্রীঃ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একটি কোম্পানীতে ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত (বয়স ৪৫) পাত্রের জন্য সংস্কারমুক্ত পাত্রী চাই।
সরাসরিঃ ০০৪৪৭৮*********।


সংস্কারমুক্ত পাত্রী জিনিসটা কী রকম?
_

পাত্রীঃ মাস্টার্স, ভদ্র মুসলিম অবিবাহিত ৫'-৪"-৩৫, প্রতিষ্ঠিত কোং-তে কর্মরত পাত্রের জন্য চাকুরীজীবি/আবাসিক সুবিধা আছে এমন সুশ্রী ভদ্র পাত্রী চাই। বিবাহিত-অবিবাহিত বিবেচনাযোগ্য। ব্যাংকার অগ্রাধিকার। মিডিয়া নয়ঃ ০১১৯৫******।

বাহ! পাত্রী চাকুরীজীবি এবং ব্যাংকার হইলে অগ্রগণ্য। তবে পাত্রীর আবাসিক সুবিধা থাকতে হবে। এটা কি বলে কয়ে ঘরজামাই হওয়ার বিজ্ঞাপন?

_

পাত্রীঃ কলেজ টিচার। (৫'-৮"+৩৬) দীনদার ফর্সা পাত্রের জন্য দীনদার পরিবারের লম্বা সুশ্রী পাত্রী চাই। সরাসরি অভিভাবক# ।

পাত্র দীনদার। পাত্রীর পরিবার দীনদার হইতে হবে। পাত্রী দরকার লম্বা সুশ্রী। পাত্রীর দীনদার হওয়ার দরকার নাই?
_

পাত্রীঃ ঢাকায় অভিজাত এলাকায় বসবাসরত বিবিএ (আইইউবি) যুক্তরাজ্যের গ্লামারগন বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং-য়ে মাস্টার্স অধ্যয়নরত সুদর্শন পাত্রের (২৫/৫'-১১") জন্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিতা সুন্দরী পাত্রী। বর্তমানে পাত্র গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ঢাকায় আছেন। শুধু পাত্রীর অভিভাবকগণ দয়া করে সরাসরি যোগাযোগ করুন # ।

আচ্ছা, বিয়েটাও কি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য?
_

পাত্রঃ ভদ্র শিক্ষিত পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার স্বল্পকালীন বিবাহ বিচ্ছেদকৃত শিক্ষিত সুন্দরী কন্যার (৩২) (বিবাহের ৫ মাসে জীবন রক্ষার্থে অন্তঃস্তত্বাকালীন ডিভোর্স প্রদানকৃত) প্রফেশনাল, শিক্ষিত, চাকরীজীবি পাত্র (৩৫-৪০) চাই। সরাসরি#

"বিবাহের ৫ মাসে জীবন রক্ষার্থে অন্তঃসত্তাকালীন ডিভোর্স প্রদানকৃত"; এই লাইনের মাজেজা কী?
_

পাত্রীঃ বিয়ের দুই মাস পর অস্ট্রেলিয়া। এইচ এস সি তে কমপক্ষে ৩.৫ পেতে হবে। আইইএলটিএস- ৫.৫ প্রাপ্ত হলে ভালো হয়। আরেক ভাই বিয়ের পর আমেরিকা নিয়ে যাবে। সিটিজেন বিধবা ডিভোর্সী হলে চলবে। মিডিয়া নয়, সরাসরি বিকেল ৫টা ৩০মিনিটের পর #

হা হা। এইটা তো মনে হয় চাকরীর বিজ্ঞাপন। এইচ এস সি ৩.৫। আইইএলটিএস ৫.৫। আবার বিয়ের দুই মাস পরে অস্ট্রেলিয়া।
লারে লাপ্পা। "আরেক ভাই বিয়ের পর আমেরিকা নিয়ে যাবে"। কাকে নিয়ে যাবে? এই পাত্রীকে? সর্বনাশ - ২ ভাই মিলে এক পাত্রীকে বিয়ে!!!
_

পাত্রীঃ ধার্মিক ডাক্তার পাত্রের জন্য সম্পূর্ণ পর্দানশীন, সৎ ধার্মিক পরিবারের পাত্রী চাই। যোগাযোগঃ#

এই ধার্মিক ডাক্তার পাত্র নিজে কতোটা পর্দানশীন? সম্পূর্ণ নাকি আংশিক?
_

পাত্রীঃ শ্যামলা, চুল কম, মধ্যবিত্ত পাত্রের জন্য নম্রভদ্র সাংসারিক মনের বিবাহিত/অবিবাহিত সুশ্রী পাত্রী চাই। যোগাযোগ #

চুল কম? নাকি টাক মাথা?

_


পাত্রীঃ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন চল্লিশোর্ধ পাত্রের পঁয়ত্রিশ সুশীলা। সরাসরি #

একজনের আছে মানবিক মূল্যবোধ, চাইতেছে সুশীলা। জয়কার সুশীল সমাজ।

_

পাত্র চাইঃ উচ্চ বংশীয় দ্বীনদার, পি এইচ ডি (ইংল্যান্ড) ডিগ্রীধারী, নিঃসন্তান পাত্রীর (৩৫) জন্য উপযোক্ত পাত্র চাই। যোগাযোগ #

হুম। যেমন তেমন পাত্র না। 'উপযোক্ত' পাত্র।

_

পাত্রঃ ডাক্তার (৩৮+৫'-৪") বিচ্ছেদকৃত ঢাকায় লাক্সারিয়াস গাড়ীবাড়ি সুদর্শনা নারীর জীবনসংগীর সন্ধানে #

সুদর্শনার জীবনসংগী দরকার। কারণ, সাথে আছে লাক্সারিয়াস গাড়ীবাড়ি। বিচ্ছেদকৃত ঢাকায়? মানে ঢাকার সাথে বিচ্ছেদ???
_

পাত্রঃ এমকম সুন্দরী। বুনিয়াদী পরিবার (৫'-৩"+৩০) হাই অফিসিয়াল পিতা। মাল্টি ন্যাশনালে সম্মানজনক পদে পাত্রীর জন্য, যোগাযোগ#

ওজন আছে। যেমন তেমন সুন্দরী না; এমকম সুন্দরী, বুনিয়াদী পরিবার, হাই অফিসিয়াল পিতা!!!
_

প্রথম আলোর পাতা খুঁজে ঘটক পাখী ভাইকে পেলাম না।
আদনান বাবুর গানের মতো পাখি ভাইও হয়তো হারিয়ে গেছে।
তবে ছোট্ট করে আছে মনিকা পারভিনের বিজ্ঞাপনঃ
_

পাত্র-পাত্রীঃ সুন্দর পরিবেশ, সাথে চা। গোপনীয়তার সাথে চলবে বিয়ের কথা। আসুন মনিকাস বাঁধনে। মনিকা পারভিন #

সুন্দর পরিবেশ, সাথে চা। বিয়ের কথা চালাবে মনিকা!!!
_

ক'দিন ধরে ইচ্ছা ছিলো S@ifur's এর বিজ্ঞাপন নিয়ে লিখবো।
এথিকসের বিন্দু মাত্র ধার না ধরে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্ধীদের আক্রমণ করে S@ifur's প্রতিদিন এক একটা অসভ্য বিজ্ঞাপন দেয়।
আরো আজব লাগে যখন বিজ্ঞাপনে দেখিঃ মানিকগঞ্জের/ছাগলনাইয়ার সাবেক এম-পি অমুকের ভাগিনা তমুক এখন S@ifur's এর এই ব্রাঞ্চে। আইইএলটিএস বিষয়ে সরাসরি জানুনঃ #

১৪ আগস্টের প্রথম আলোর ৬ষ্ঠ পাতায় S@ifur's এর একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আঁটকালো।
উপরে বড় করে লেখা "সুন্নত পোষাক"।

মূল বিজ্ঞাপনঃ

সুন্নত পোষাকের কারণে চাকরি পেতে সমস্যায় জর্জড়িতরা ফ্রি পরামর্শের জন্য ফোন করুন ঢাবি থেকে মাস্টার্স করা মুরাদ ভাইয়ের (০১৭২০০৪****) সাথে

সুন্নতী পোশাকের বিজ্ঞাপন দেখে আদনান বাবুর আরেকটা গান মনে পড়লো। কথাগুলো -

'সালোয়ার কামিজ পড়া
লিপস্টিক ঠোঁটে মাখা
বাঁকা চুল, চুলে রং করা
নেইলপলিশ নখে ভরা,
ও মুখে তাকিয়ে নিজেকে
নিজেকে হারাই,
আমি যে খুন হয়ে যাই...'

পাত্রীর এতো এতো বিজ্ঞাপনে এরকম কিছু একবারও দেখলাম না!

-
-
-

Read more...

23 July, 2008

মত প্রকাশঃ সুমন রহমান হয়তো গল্পই লিখতে চেয়েছিলেন

বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন সাইট দেখা যাচ্ছে না। ব্যাপারটি কারিগরী ত্রুটি নাকি কারিগরী রোধ, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো’র কলাম১ এ ছোট্ট নিউজ, এরপর একই পত্রিকায় ২১ জুলাইয়ে পল্লব মোহাইমেনের লেখা, এবং ২২ জুলাইয়ে ছাপা হয়েছে ‘কবি, কথাসাহিত্যিক’ সুমন রহমানের মত প্রকাশ ‘সচল থাকুক সচলায়তন’।

গতকাল লেখার শিরোনাম দেখে ভেবেছিলাম কারিগরী ত্রুটি কিংবা রোধ’এর রহস্যময়তা কাটিয়ে সচলায়তন পাতা বাংলাদেশে উন্মুক্ত হোক (অথবা না হোক), এমন কিছু চাইছেন সুমন রহমান। কিন্তু না; এ লেখায় সুমন রহমান নানান প্রাসংগিক-অপ্রাসংগিক বিষয় টেনে এনে রহস্যময়তার জাল আরো বিস্তৃত করেছেন, কিংবা চেষ্টা করেছেন কিছু ধোঁয়া উড়াতে। এ ধোঁয়ার কুন্ডলীতে তিনি ব্লগের উত্তর-আধুনিকতার ধারণা কপচিয়েছেন। ২০০৮ এর ব্লগ যদি উত্তরাধুনিক হয়, মনে প্রশ্ন জাগে, কাল-ধারণার এ মানদন্ডে ‘প্রায় দশক পুরোনো’ ব্লগ কবে আধুনিক, মধ্যযুগ বা প্রস্তর যুগ পেরিয়েছে? তার সময় সীমানা কতো সাল থেকে কতো সাল? শিরোনামের বক্তব্যের বাইরে গিয়ে সুমন রহমান যদি বৈশ্বিক বা বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে ব্লগের ধারণা-চরিত্র বা ইতিহাস নিয়ে তার নিজস্ব যুক্তি-দর্শন তুলে ধরতেন, তারপর সচলায়তনকে ন্যায়-অন্যায় কিংবা মানদন্ডের থার্মোমিটারে নিয়ে পারদ কতোটুকু ওঠানামা করলো তা বলতেন; সেটাও মেনে নিতাম।

কিন্তু, সুমন রহমান সেসব কিছুই করেননি।
বাংলা ভাষার জনবহুল সাইটটির প্রসংগ টেনে সুমন রহমান ক্রমাগতঃ অসত্য প্রলাপ বকে গেছেন, পলেস্তারা লাগিয়েছেন ভাষার কারুকার্যে। সুমন রহমান বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে কতোটা চোখ বুলান, সে সন্দেহ রাখছি প্রথমেই। নয়তো তার জানার কথা, বাংলা ব্লগ হিসেবে পরিচিত সব সাইটে প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য নীতিমালা-নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সারা আলোচনায় সচলায়তন ও সা.ইন ছাড়া অন্য কোন ব্লগ কিংবা ফোরামের ছায়াও তিনি মাড়াননি। অথচ অদ্ভুতভাবে ব্লগ বিষয়ক তত্বকথায় অসম তুলনা করে গেছেন চোখ বুঁজে। সুমন রহমানের সম্ভবত ধারণা নেই, তাঁর উল্লেখিত পনের হাজার সদস্যের ব্লগটিতেও ভালো লেখা দিয়ে প্রথম পাতায় আসার ও অন্যের লেখায় মন্তব্য করার অনুমতি পেতে হয়, সেটা কতোটা কার্যকর তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে নিয়ন্ত্রণের এ বাস্তবতা সচলায়তনে তো শুরু থেকেই ছিলো! আর সচলায়তন যেখানে ঘোষিত ‘ক্লোজড গ্রুপ’, জনবাহুল্য কিংবা কোলাহলের মোহ নেই - সেখানে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারের তকমা নিয়ে টানাটানি কেনো?

তৃতীয় প্যারায় সুমন রহমান বলেছেন, ‘...সচলায়তন মূলত সামহোয়ারইনব্লগ ভাঙা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, আকারে অনেক ছোট এবং এখানে লেখক হিসেবে ঠাঁই পেতে হলে রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা করতে হয়।‘
সচলায়তন অন্য কোনো সাইটের ভাঙা গোষ্ঠী কিনা সে আলাপ নতুন করে করা মানে সুমন রহমানকে বাংলা ব্লগিং এর আদিম যুগ অধ্যায়ে চোখ বুলাতে বলা। সচলায়তনের ১ম দিকের পোস্ট এবং গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় অপর্ণার লেখার মন্তব্য ঘরে কিছু রসদ পাওয়া যেতে পারে। ‘উত্তরাধুনিক ব্লগ মাধ্যম’এর পর্যবেক্ষক সুমন রহমান সে সব পোস্ট লিংক নিজেই খূঁজে পাবেন, এমনটিই ধারণা করছি।
কিন্তু তাঁর সৃষ্ট ধোঁয়ার একটা জায়গায় ফু না দিয়ে পারছি না।
‘এখানে লেখক হিসেবে ঠাঁই পেতে হলে রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা করতে হয়।‘ এ কথাটি কতোটুকু সত্য? এটা ঠিক যে নিয়মিত লিখে কমেন্ট করে সচলায়তনে সদস্য হতে হয়, খানিক সময় লাগে। কিন্তু এর জন্য কে বা কারা ‘রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা’ করলেন সেটা কি সুমন রহমান বলবেন? সচলায়তনের ১ম বর্ষ পূর্ণ হলো সপ্তাহ কয়েক আগে। এর মধ্যে বর্ষব্যাপী সাধনা করলেন কে কে? গত এক বছর সচলায়তনে চোখ বুলিয়ে এমন সাধক কাউকেই তো পেলাম না! গল্পকার সুমন রহমান গল্পের পুকুরে আগুন লাগিয়ে, পুকুরের মাছ গাছে তুলে, গাছে বসে থাকা ছাগলের সাথে মাছের পীরিতালাপের পুঁথি রচনা করলে ২০০৮ সালে পাঠকের করুণাই পাবেন, আর কিছু না। কারণ ‘মিথ্যা’কে সুশীল মোড়কে যতই ‘অসত্য’ বলিনা কেনো, সেটা মিথ্যা। ভাষার কারুকার্যে ও ক্রমাগত চাতুর্য্যে লেখায় ভার হয়, ধারও হয়; মিথ্যাকে সত্য করা যায় না।

‘লোহার বাসর বানালে ছিদ্র সেখানে থাকেই’, ৬ষ্ঠ প্যারার শুরুতে বলেছেন সুমন রহমান, ‘সচলায়তনের সহিংস বিক্ষোভ হয়তো সেই ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে’।
কবি, কথাসাহিত্যিক সুমন রহমানের এ শব্দবিন্যাসে চমক আছে, রূপক আছে। হয়তো শুনতেও ভালো লাগে। কিন্তু নেই, বাস্তবতার ছিটেফোটা।
পড়ে মনে হতে পারে, সচলায়তন বোধ হয় ভীষণ গোপন কোনো সাইট বা গ্রুপ যার চালুনির ফুটো দিয়ে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ জনচোখে এসে পড়েছে। সুমন রহমান কি জানেন না, সদস্য না হয়েও সচলায়তন পড়া যায়, লেখা যায়, কমেন্ট করা যায়?
সচলায়তন কিংবা অন্য ব্লগ সাইট নিয়ে সুমন রহমানের ধারণা-অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহটা তাই আবারও তুললাম। আর জানতে চাই ইন্টারনেটে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ জিনিসটা আসলে কী? সচলায়তনে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ কখন কীভাবে হলো যে ‘নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্য’ নিয়ে তাঁকে ভাবতে হচ্ছে!

এবার তাঁর লেখার একেবারে শেষ দুটি কথায় নজর দিই।
‘সচলায়তনকে কোনো বিপ্লবী গোষ্ঠী বা কঠোর গ্রুপ বলে মনে হয়নি কখনোই। ...গোষ্ঠীগত অহম বা আভিজাত্যবোধ আছে ওদের, সে অন্য প্রসঙ্গ। ...আমি মনে করি, তাদের যে ভুল তা স্রেফ শিক্ষানবিশির ভুল, এর ফলে তাদের যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে, তবে তা লঘুপাপে গুরুদন্ড হয়ে গেছে। অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া যেত। আমরা বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি তরুণদের পরষ্পরের সঙ্গে কথা বলার, একে অপরের মাঝে দেশকে খুঁজে ফেরার এ প্রয়াসটিকে চলতে দিলেই সুবুদ্ধির পরিচয় দেব।‘

সুমন রহমানের লেখার এ অংশটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। কারণ, শুরু থেকে ইতস্ততঃ জল ঘোলা করে লেখার এখানে এসে তিনি একটি দাগ টেনেছেন যার এক পাশে আছে ‘ওরা’ (অহম/আভিজাত্যবোধ সম্পন্ন সচল দল), অন্য পাশে আছেন ‘আমরা’ (যাঁরা সচলের প্রয়াসটিকে চলতে দিয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় দিতে চান।)
বুঝলাম, ওরা = সচলায়তনে যারা লিখেন, কমেন্ট করেন।
কিন্তু, আমরা = ?
সুমন রহমান এই ‘আমরা’র মাঝে আছেন। কিন্তু সাথে কে/কারা কাছেন? কোন দল বা নীতি নির্ধারণী সংঘের প্রতিনিধিত্ব তিনি করছেন যে, ‘আমরা’ হয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন?

বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন দেখার সমস্যা যখন রহস্যময় হয়ে রয়েছে তখন সুমন রহমান কোন ‘শিক্ষানবিশি ভুল’এর প্রতি ফোকাস করলেন? কোন ‘লঘুপাপ’ এর শাস্তি হিসাবে ‘অন্য কোন ব্যবস্থা’রও প্রস্তাব করলেন? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে, বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন না দেখার রহস্য সমাধানও হয়তো হতো। নাকি ধরে নেবো, সুমন রহমান আসলে এ বিষয়ে একটি গল্পই লিখতে চেয়েছিলেন, ভুলে মত প্রকাশ কলাম হয়ে গেছে...!!!

ডুমুর খেয়ে শায়লার দিকে যেতে যেতে গরিবি অমরতার গল্পকথা নয়, আগামীতে মত প্রকাশে সুমন রহমান তথ্য ও সত্যের আশ্রয়ী হবেন; এমনটিই কামনা করছি।

সবাই ভালো থাকুন।

-
-
-

Read more...

07 May, 2008

অবশেষে মঈণ - মিলা

-
হাসানের সাথে আজ আবার অনেকদিন পরে জি-টকে কথা হয়। শুরুতেই আমরা দুই দোস্ত মন খারাপ করি এই ভেবে যে, যাযাদি থেকে মি. রেহমান পদত্যাগ করেছে, গতকাল এক লেখায় গুডবাই-বিদায় বলে গেছে।

ব্যাপারটি এমন নয় যে, মি. রেহমানের লেখার আমরা বড় ফ্যান, এমনও নয় যে – দিনের পর দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, তবে এটা নিশ্চিত – হাতের কাছে পেলে শুরুতেই একেবারে শেষ প্যারায় বলা গল্পটা পড়ে ফেলতাম। তারপরে প্রেমলীলা। রেহমানের কাছে আমরা এ জন্য ঋণী; ঐসব গল্প বন্ধুদের আড্ডায় বলে আমরা বাহবা কুড়াতাম।

আমাদের মধ্য কৈশোরে যায়যায়বিদ্যুৎ সংখ্যা এবং আরো পরে ক্যামেরা বা শাড়ী সংখ্যা আমরা অতি গোপনে পড়তাম, একটু বড় হয়ে গেছি ভাবতাম মনে মনে।

দৈনিক হওয়ার আগে মি. রেহমান বলেছিলেন – দৈনিক যাযাদি’র কাজ হবে মানুষকে প্রাপ্তমনষ্ক করা। হ্যাঁ, আমরা প্রাপ্ত মনষ্ক হয়েছি – দেখেছি কীভাবে মেটামরফসিস হয়, রঙ-চঙা শার্ট পড়ে একদা আপোষহীন সম্পাদক কীভাবে ট্রেন্ডি জুলফি নিয়ে লাল গুলাপী হয়। মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, এবার একটি – ম্যুভি ক্লিপ। এরপর খালি ম্যুভি ক্লিপ। পতনের তোড়ে এয়ারপোর্টে বিব্রতকর মুহুর্তগুলো বাংলা ইংরেজী তর্জমায় ছাপা হয়। সেটাও ম্যুভি ক্লিপ হয়ে যায়।

আজ আমি আর হাসান এসব আলাপ করি।
মঈণ-মিলার ফোনালাপ অথবা পরকীয়ার পরিণতি কী হবে সেটা নিয়ে ভাবি। তবে এতোদিনের ফোন বিল কতো এসেছিল, কতোটুকু বিল শোধ করা হয়েছিল সে জল্পনা কল্পনা করি। মি. রেহমান অন্য কোন পত্রিকায় মঈন মিলাকে ডিজুস কানেকশন সেট করে দিবেন বলেও ধারণা করি। কারণ, দেশের পোলাপাইনকে প্রেম পরীক্ষা অথবা জীবন জিজ্ঞাসার গাইড হিসাবে ঐ বিশেষ সংখ্যাগুলোর বিকল্প নেই। (ব্লগে এক মন্তব্যে বিখ্যাত ধুসর গোধুলীও এ ঋণ স্বীকার করেছেন)।

মঈণ-মিলাকে আমরা কতোদিন মিস করবো – আপাততঃ সেটা না জানলেও আজ হাসানের বলা গল্পটা এখানে বলে যাইঃ

“অনেকদিন পরে ফোনালাপের ক্লান্তি পেরিয়ে মঈন-মিলা লাভ রোডের অফিসে দেখা করে। একে অন্যের দিকে তাকায়।
কতোদিন পরে দেখা।
‘চোখ দুটো গেছে ক্ষয়ে গাল দুটো গেছে ঝুলে নিয়মিত অবহেলায়।‘
তবে মিলা অবহেলা করে না, ফৃজ থেকে শ্যাম্পেন নিয়ে এগিয়ে দেয়।
মঈন হাত নাড়ে, বলে – ‘নাহ, ওসব ছেড়ে দিয়েছি’।
মিলা অবাক, ‘কীভাবে’?
‘পাওয়ার অব উইল।‘ মঈণ চোখ উলটে জবাব দেয়।
এবার মিলা বলে, ‘তাহলে চলো – ড্রাইভে যাই। তোমার প্রিয় আশুলিয়া।‘
মঈণ এবারো হতাশ করে, বলে – ‘লং ড্রাইভে যাই না।‘
মিলা জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলো, তোমার মতো ড্রাইভিং পৃয় মানুষ, কীভাবে ছাড়লে?’
মঈণ আগের মতোই বলে – ‘পাওয়ার অব উইল’।
মিলা হতাশ হয়। দেখে পুরনো সে-ই মঈণ আর নেই। ক্যামন যেন বদলে গেছে।
অনেক ভেবে চিন্তে মিলা এদিক ওদিক দেখে। কুক জন নেই। কোণায় লিভিং রূম সাজানো গুছানো। মিলা সেদিকে ইশারা করে - ইংগিতে বলে, ‘লেটস গো’।
মঈণ এবার মাথায় ঝোকায়।
মিলা জিজ্ঞেস করে – ‘সে কী! এটা ছাড়লে কী করে? এটাও পাওয়ার অব উইল?’
মঈণ জুলফিতে আঙুল বুলায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘নাহ, দ্যাটস ফেইল্যুর অব অ্যাবসল্যুট পাওয়ার।‘

-

Read more...

23 April, 2008

আগামীর আলুময় জীবনে যখন যাবতীয় সম্ভবনা, তখন...

-
তর্ক-বিতর্ক যা-ই হোক, এবার আর উপায় নেই। চালের দাম কমবে, কমবে মানে আগের মতো ১৬-২০ টাকা হবে ব্যাপারটি হাবিবুল বাশার সুমন আবার ফর্মে এসে টানা সেঞ্চুরি করে আশরাফুলের পজিশন কেড়ে নিয়ে, অধিনায়ক হয়ে, ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে চ্যাম্পিয়ন করে দিবে; একই পর্যায়ের। এ দুটি স্বপ্ন আপাততঃ একই রাতে একই ঘুমে দেখা সম্ভব। এবং মাঝ রাতে অথবা সকালে ঘুম ভেঙে ঐ স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন বলে মেনে নেয়া যাবে চোখ না কচলে, ‘সোলেমানি খাবনামা ও তাবীর’ না দেখে।

চালের দামের ধাক্কা বিশ্ব অর্থনীতিতে কী কী প্রভাব ফেললো সেটা নিয়ে বিদেশি মিডিয়া রমরমা। ধনী-গরীব অনেক দেশে চালের সংকট। তাই বলে তারা কি বসে আছে? তারা কি ভাত খাবো-ভাত দাও-চালের দাম কমাও বলে কান্না করছে? মোটেই না। সুব্লগার সুবিনয়ের দেয়া লিংকে ক্লিক করে দেখি – আফ্রিকার কালো মানুষ কী মজা করে স্প্যাগাটি খাচ্ছে। (আচ্ছা spaghetti বাংলায় ক্যামনে লিখে? ভাতের কসম লাগে, আমি স্প্যাগাটি কোনোদিন খাই নাই, ছবি যা-ও দেখছি; মনে হয় নুডুলসের মতো কিছু একটা হবে। কারণ, আমি ভাতের হোটেলেই বেশি গেছি। অথবা হোটেলে গেলে ভাত বেশি খাইছি।)

তবে নুডুলস ক্যামন জানি খাইতে অসুবিধা, হাঁস যেমন কিলবিল করে কেঁচো খায়, তেমন করে নুডুলস খাওয়ার স্টাইলটা সুবিধার মনে হয় না। এই ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত খাবার হিসাবে আলু ঠিক আছে। ঠিক আছে মানে পুরা ঠিকাছে। আমাদের দেশীয় শস্য, ফলন ভালো হয়। ডাক্তারেরা বলে পুষ্টিমান ভালো, ভাতের চেয়েও নাকি ভালো। ইতোমধ্যে যারা টুকটাক আলুভ্যাস করে ফেলছেন, তাদের কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, আলু খেলে শরীর হাল্কা লাগে, পেট ভারী লাগে না, রাতে ভালো ঘুম হয়, হুদামিছা আমরা ভাতের জন্য পাগল হয়ে থাকি। বন্ধু কমলকান্ত বললো – রিকি পন্টিং নাকি জীবনেও ভাত খায় নাই, তাহলে – হাবিবুল বাশারের জন্য গোপন একটা রহস্যও উন্মোচিত হলো।

তাহলে আসুন, আলুর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে টপাটপ কিছু রেসিপি দেখিঃ

পোড়া আলুঃ
এটা মূলতঃ পোড়া কপাইল্যা মানুষের খাবার।
বিবিসিনিউজ সাইটে বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোফাইল যেটা দেয়া আছে, সেখানে বলা আছে দেশের অর্ধেকের মতো মানুষ ডেইলী ১ ডলারের কম আয় করে। গত তিন বছরে এই বাক্যটা পালটানো হয় নাই। আবার ইকনোমিস্টরা বলে – বাংলাদেশে অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। বছরান্তে হিসাব উলটাপালটা হতে পারে। তবে অতি নিন্ম আয়ের মানুষ, যারা আগে এক/দুইবেলা ভাত খেতো তাদের জন্য এ মেন্যু। পোড়া আলু প্রস্তুত প্রণালী খুব সহজ কাঠ-কয়লার আগুনে আলু পোড়ানো হবে, এবং ৫ মিনিট পরপর কাঠি দিয়ে গুতিয়ে দেখা হবে কেমন পুড়লো। তারপরে বাতাসে রেখে আলু একটু ঠান্ডা করে মুখে পুরে দিতে হবে। কেউ কেউ বলেন –আলুর খোসায় কি একটা বিশেষ পুষ্টি আছে, সুতরাং খোসাসহ খান। পেট শান্তি, জগত শান্তি।

__

সিদ্ধ আলুঃ
আয়-রোজগার একটু ভালো আছে, নিন্ম/মধ্যবিত্ত ট্যাগ লাগানো মানুষদের জন্য এ পদ্ধতি।
আলু পোড়ানোর চেয়ে সিদ্ধ করলে দেখতে ফরসা লাগে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মনে হয়। গ্যাস-হিটারের চুলায় আলু পোড়ানো খানিক ঝামেলা, তাই পানির পাত্রে আলু সিদ্ধ করতে হবে। খুন্তি অথবা চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে দেখতে হবে – কেমন নরম হলো।
হয়ে গেলে পানি থেকে আলুকে আলাদা করে রাখুন, একটু ঠান্ডা হোক।
তারপরে বিটিভিতে সংগীতানুষ্ঠান বাঁশরী/মালঞ্চ, সাধ্যে কুলালে জিটিভি তে ‘ঘর কা লক্সমি বেটিয়া’ অথবা ‘কাসম সে’ দেখতে দেখতে আলুর খোসা ছিলে ফেলুন।
তারপর আলুতে সামান্য লবণ, কাঁচা মরিচ (গূড়া মরিচও চলবে), পিয়াজ অর্ধেক মিশিয়ে নিন। তবে মাসের প্রথম সপ্তায় বেতন হাতে থাকার দিনগুলোয় সিদ্ধ আলুর সাথে টমেটো কেচাপ মিশিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আলু সেদ্ধ করার আগে খোসা ছিলে নিতে হবে।

বিশেষ নোট -
খোসা ছিলায় স্বামী/স্ত্রী দু’জন অংশ নিতে পারেন।
রান্নার কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে নারী-পুরুষের সাম্য সৃষ্টি হবে। আলুর খোসা ছিলতে ছিলতে মিল-মহব্বত-পেয়ারের খুনসুটি হবে। রোমান্স ঘন হয়ে ওঠবে, এবং আলু ভোজনের পরে তা উতলিয়ে যাবে।
নারী নীতি নামক কাগুজে ব্যাপারকে আঙুল দেখিয়ে আলু প্রমাণ করে দিবে – ‘অর্ধেক খোসা ছিলিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’।

__

ব্যুফে পটেটো এট ফাইফ ফিফটি ফাইভঃ
নিচের মেন্যুগুলো শহরের আলোকিত চটকদার মানুষদের জন্য।
এরা সাধারণতঃ পাঁচ তারার শেফের রান্না খেয়ে অভ্যস্ত। প্রয়োজনে পারিবারিক আয়োজনে রেডিসন-শেরাটনের শেফ ডেকে ছাদের উপরে পটেটো নাইট করতে পারে। এছাড়াও – এরিস্টোক্রেট, ই-ফেস, নিনফার্জ, আট্রিয়াম, ব্লু ওশান, মেস্কিট গ্রিল রেস্টুরেন্টগুলোয় ব্যুফে থাকবে, পটেটো এট ফাইভ ফিফটি ফাইভ। পাঁচশ পঞ্চান্ন টাকায় প্যাকেজ, সাথে সার্ভিস চার্জ – ভ্যাট থাকবে।
সিদ্দিকা কবীরের বইয়ে এসব খাবার বানানোর টেকনিক নাই।
ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, তবে বাংলা অনুবাদে সমস্যা। নেটে পেলাম পটেটো গ্রাটিন (Potato Gratin) রান্না করতে লাগে 15 garlic cloves, smashed / 4 large thyme sprigs /2 bay leaves/ teaspoon freshly grated nutmeg। এগুলার বাংলা নাম কী?
তবে ছবিতে দেখি, কোনটা কী। (কৃতজ্ঞতা গুগুল মিঞা)
__
এটার নাম নাকি ক্রিমি পটেটো গ্রাটিন:


__
ম্যাশ পটেটো:

__
হয়তো দিশি পটেটো কারী:

___

এবার দেখি, আলুর অন্য প্রভাব কেমন পড়বে?

।। বৌ ভাত নামক অনুষ্ঠান বদলে যাবে, নতুন নাম – বৌ আলু

।। নবান্ন উৎসব হবে নবালু উৎসব

।। দৈনন্দিন জীবনের সংলাপ হবেঃ

অতিথি আপ্যায়নঃ কী বলেন, এই ভর দুপুরে না খেয়ে যাবেন? একটা আলু খেয়ে যান...

পাড়াবেড়ানো আলাপঃ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো ভাবী, চুলায় আলু দিয়ে এসেছি...

ফোনালাপঃ শুনো, আমার আসতে দেরী হবে, ফ্রিজে আলু আছে, ওভেনে গরম করে নিও।

মেয়েদের আড্ডাঃ ইশিতার আম্মু না, যা ভালো আলু রান্না করে না – পুরা জোসস। আর চুমকিদের বাসার আলু যা তা - জঘন্য। এ-ই, শোন, এটা আবার বলে দিস না। নে, আলুর চাটনি খা, ভাবী বানালো আজ।

বয়স্কদের আলাপঃ বয়েস বেড়ে যাচ্ছে, কিছু খেতে ইচ্ছে করে না, ঐ আলু সেদ্ধটাই একটু ভালো লাগে।

শিশুতোষ আলাপঃ তুমি বাল্লো না, তুম্মি পঁচা, আমি ভালু- আমি আলু খাই।

।। দৈনিক পত্রিকার স্বাস্থ্য কলামঃ
‘ভালো থাকুন’, নাম পালটে হবে – “দিন শুরু হোক আলু দিয়ে।“ এতে সাত সকালে এক গ্লাস পানির সাথে কোন টাইপের আলু খেলে কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য কমে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হবে।

___

।। নতুন গানের এলবাম ।।

শিরিনের - লাল আলুওয়ালা

হাবিব ওয়াহিদের - এসো তবে আলু পোড়াই

মিলার - রূপভানে নাচে আলু খাইয়্যা

শুভ্রদেবের - আমি হ্যামিলনের সেই আলুওয়ালা

জেমস আইয়ুব বাচ্চু (ডুয়েট) - আলু ৫০০ মিলিগ্রাম

___

।। বই মেলায় নতুন বই।।

হুমায়ুন আহমেদের – হিমুর হাতে কয়েকটি কাঁচা আলু

তসলিমা নাসরিনের – তুমি আমায় ডেকেছিলে আলুর নিমন্ত্রণে

আনিসুল হকের – তোর জন্য, আলু ভর্তা

রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা সিরিজ – আলু উধাও

কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজ – আলুর খামার ১-২-৩

এবং
মাহবুব লীলেনের – আলুর চোকলাবাছা দিন

___

বাজারে হরেক রকম আলুর ব্রান্ড আসবে।
রেডিও টিভিতে বিজ্ঞাপন হবে।
_
বিজ্ঞাপন - ০১
সুদর্শন তরুণ-তরুণীরা নেচে গেয়ে বলবে – ‘আলু খাই দিনে, আলু খাই রাতে, অনেকে আলু খাই ভোর দুপুরে। এটাই তো দেশ সেরা প্রিয় খাবার, প্রিয় আলু – সেএএ আছে ভালু, যে রোজ খায় শুধু আলু।
আমরা তো খাচ্ছি আলু – তোমাদের কী খবর বলো?
ভালো থাকার ইচ্ছে হলে, আমাদের সঙ্গে চলো।
পেট ভর হয়ে যায় আলুয় আলুয়, নানা মুনির মতে কী আসে যায়?
মেদ নিয়ে টেনশন আর করি না, প্রোটিন মেশানো আছে – আর নেই ভাবনা।
আলু আলু আলু বাংলামিল্কআলু, আমরা আছি ভালু – তোমাদের কী খবর বলো?
বাংলামিল্কআলু – এখন মিনি প্যাকেও পাওয়া যাচ্ছে।
_

বিজ্ঞাপন – ০২
টিভি টক শোর জনপ্রিয় উপস্থাপক মাইক্রোফোন হাতে – আমি এখন এসেছি খুলনায়, মিসেস রহমান আপনি কোন আলু খান?
মিসেস রহমান হাসি দিয়ে বলবেন, কেনো – মেরিলালু?
এখন এসেছি রাজশাহীতে – 'মিসেস আহমেদ আপনার প্রিয় আলু কোনটি?'
জবাবে- ‘আলু? আমি তো চোখ বন্ধ করে মেরিলালু খাই’।
মেরিলালু, একটি স্কয়ার প্রোডাক্টস।
_

বিজ্ঞাপন - ০৩
স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান।
প্রধান শিক্ষক মাইকের সামনে ঘোষণা করছেন – ‘আমাদের এবারের সেরা ছাত্র...’
এরপর শুনসান নীরবতা।
ক্যামেরা চলে যাবে দর্শক সারিতে। উদ্বিগ্ন অভিভাবক সারি।
চশমা খুলে প্রধান শিক্ষক আবার বলবেন, ‘এবার শতভাগ নম্বর, শতভাগ উপস্থিতি, এবং সব স্পোর্টসে প্রথম হয়েছে –‘
আবার দর্শক সারি। ছাত্রছাত্রীদের বড় বড় চোখ। টেনশন।
প্রধান শিক্ষক ঘোষণা করবেন – ‘এবার সেরা ছাত্র হয়েছে – পাপ্পু’!
পাপ্পুর বাবা-মা পাপ্পুকে নিয়ে হাত উঁচু করে দাড়াবেন।
পাপ্পুর মা’কে পাশের মহিলা জিজ্ঞেস করবেন, ‘এই ধুলা-ধোঁয়ার শহর, বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে, সেখানে পাপ্পু একদিনও এবসেন্ট না? শতভাগ মার্ক? কীভাবে?’
পাপ্পুর বাবা – টিফিন বক্স থেকে আলু সেদ্ধ বের করে বলবেন – ‘নিন খান, আলু খান, পরীক্ষা পাসের আলু’।
চারদিক থেকে সবাই বলবে – ‘আলু? কোন আলু?’
বিজ্ঞাপন কন্ঠ ঘোষণা দিবে – ‘স্টারালু, সাফল্যের শতভাগ নিশ্চয়তা, মতি-আনাম ব্রাদার্স, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।‘
_

চলমান আলু সমাজ, চলমান বাংলাদেশঃ
থামাথামি নেই।
এখন থেকে মিস্টার চৌধুরী আলু খাবেন, মিসেস চৌধুরীও কম যাবেন না।
আলাল খাবে, দুলাল খাবে।
রাজু আর রিংকী তো এখন সারাক্ষণ আলু খাওয়া খাওয়ি করবে।
এমন কী মোটকু মফিজ? সেও এখন আলু খাবে।
আমাদের রুমা খাবে, সোমা খাবে।
জিপিএ ফাইভ বল্টু, সে-ও আলু খাবে।
হ্যাঁ ভাই, চালের দাম বাড়তিতে আলুর দাম কমেছে।

এখন তো সারা বাংলাদেশ আলু খাবে।

-

Read more...

14 April, 2008

অণুগল্পঃ দৈনন্দিন

গুজব হিসেবে কথাটা আগেও কানে এসেছিলো, কিন্তু আজ সকালে পাশের বাসার নঈম চাচা হাতেনাতে ধরার পর আমরা ব্যাপারটি নিয়ে ভাবি। মেজো ভাইয়া বলছে, ‘এক মুহূর্তও দেরি করার দরকার নেই, এক্ষুণি বিদায় করে দাও।’ বড় ভাইয়া কিছুটা নমনীয় হয়ে বললেন, ‘বেশি হৈ-হল্লা করো না, কিছু ধমক দিয়ে শাসিয়ে দাও।’ আমিও বুঝতে পারি, এরকম করিৎকর্মা লোক পাওয়া সহজ না। তবুও - গত দু’মাস ধরে শুনছিলাম আমাদের বাসার দারোয়ান মাসুদের ঘরে মেয়েছেলে আসে মাঝরাতে এবং খুব ভোরে চলে যায়। নঈম চাচার চিল্লাচিল্লিতে আজ পাশের তিন বাসার লোক জড়ো হয়েছে। বড় ভাবী লজ্জায় রুম থেকে বেরই হচ্ছেন না। ভদ্র এলাকার ভদ্র বাড়ির সম্মান আর থাকলো না! আমি সরাসরি বলে এলাম, ‘সন্ধ্যায় এসে যেনো মাসুদের চেহারা না দেখি, দরকার হলে আমি রাতে বাসা পাহারা দেবো।’

রুবার আঙুলগুলো ছুঁয়ে আমি ক্রমশ শিশু হয়ে উঠি। তার হাত দুটো নিয়ে আমার চোখে-মুখে, ঘ্রাণ নিই। এরকম প্রায়ই হয়, সপ্তায় একবার কিংবা মাসে পাঁচবার অথবা তারও বেশি। আজ রুবা চুপচাপ, বলছিল, ওর বাবার হেমোডায়ালাইসিসের মাত্রা বাড়বে আগামী মাস থেকে, বাড়বে খরচও। তখন আমার নাক রুবার চিবুক পেরিয়ে গলায়, খানিক নিচে। অফিসে প্রতিদিন নয়টা-পাঁচটা কাঁচের ওপাশের রুবা, সিল্কের শাড়ির স্বচ্ছতায় ফরসা পেট, মৃদু পারফিউম - সব আমার হাতের নাগালে এলে আমি শিশু থেকে দানব হয়ে উঠি। ব্যাচেলর অনুপের নিরাপদ বাসা-বিছানা-বাতি ক্রমশঃ আপন হয়ে আসা পরিবেশে আমি দূরন্ত পারঙ্গম কৌশলী পুরুষ। রুবার হয়তো দমবন্ধ লাগে, তাই চোখ বুঁজে থাকে। এভাবেই অল্প সময়টুকু শেষ হয় দ্রুত। ...আরও পরে মাথা নিঁচু করে রুবা বলে, ‘এবারও এক হাজার?’ আমি বিরক্তি নিয়ে মানিব্যাগ থেকে একশ’ টাকার একটি মলিন নোট তুলে দিই রুবার হাতে।

মাসুদকে তাড়ানো হয়নি। শেষে নঈম চাচার সুপারিশেই ক্ষমা করা হয়েছে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়াও মাফ করে দিয়েছেন। রাতে মাসুদ আমার পা ধরে মাফ চাইলে আমার মেজাজ চরমে উঠে যায়, কষে চড় মেরে বলি, ‘আর যদি একবার এসব শুনি... ব্যাটা হারামজাদা, বদমায়েশ!’
.
.
.
সচলায়তন অণুগল্প সংকলন "দিয়াশলাই"-এ প্রকাশিত।
.
.

Read more...

14 February, 2008

দ্বীনের পর দ্বীন

ইদানিং ঢাকায় শীত পড়েছে।
সাথে বৃষ্টি।
টিপ টিপ টিপ।
গতকাল পহেলা ফাগুন ছিল।
এমন সময়ে বৃষ্টি হওয়া তেমন স্বাভাবিক না।
লাভ-ক্ষতি রোডের অফিসে বসে মুইন ভাবছিল জীবনের বছরগুলো কতো দ্রুতই না চলে যায়। কানের লতির কাছে আনা ট্রেন্ডি জুলফিতে আঙুল বোলাতে বোলাতে কতো কথা মনে পড়ে যায়। ল্যাপটপে গান বাজছিল -
"প্রেম নদীতে ঝাপ দিও না
সই গো সাতার না জেনে,
তুমি প্রাণে নাহি বাঁচিবা,
ডুবিয়া মরিবা ভাসিয়া যাইবা
শেষে স্রোতের তোড়ে"।
শিরিনের পাঞ্জাবিঅলা।
কুক জোশেফ পরশু নন্দন থেকে তরমুজ কিনেছে।
মুইন ভাবছিল তরমুজের জুস খাওয়া যায়।
বরফকুচি দিয়ে তরমুজের জুসে চুমুক দিয়ে ১২৮ পৃষ্ঠার হায়হায়রাত পড়া যেতে পারে।

ঠিক তখনি মোবাইলে নীলার ফোন
- হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন
- সেম টু ইউ।
- কি করছো?
- শিরিনের গান শুনি। ভাবছি তরমুজের জুস খাবো একটু পরে।
- ঠান্ডা পড়েছে কিন্তু বেশ।
- হুমম, গলাটাও বসে গেছে। তুমি কি করছো?
- কিছু করছি না, বাসায় পিয়াকে পাহারা দিচ্ছি আজ।
- কেন পাহারা দেয়ার কি হলো?
- আর বলো না, ইদানিং ছেলেদের সাথে বেশি বন্ধুত্ব তার। আজ আবার ভ্যালেন্টাইন ডে, কোথায় কি অঘটন ঘটিয়ে বসে - - -
- ও-নো-ও, গিভ হার ফৃডম।
- আরে না, পাগল নাকি? তুমি হায়হায়রাতে কি সব উল্টা পাল্টা গল্প লিখো। ছেলেপেলের মাথা খেয়েছো।
মুইনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বলতে ইচ্ছে করে - 'তুমি প্রাণে নাহি বাচিবা, ডুবিয়া মরিবা'।
মুইন প্রসংগ ঘুরিয়ে বলে - 'একরাম কোথায়?'
- অফিসে গেছে।
- বইমেলায় গিয়েছিলে এবার?
- এখনো যাইনি। দেখি একুশের পরে একবার - - -। রাজনীতি নিয়ে কি ভাবছো? ইলেকশন হবে?
মুইনের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ল্যাপটপের স্কৃনসেভারে বেগম সাহেবা আর ছোটসাহেবের ছবি। কতোদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই। এবার দুই ঈদে সালাম করা হলো না। সালামীও পাওয়া গেলো না। এসব ভাবনার মাঝে মুইন বলে - 'রাজনীতি বাদ দাও। রান্নার কি খবর? আজ ভ্যালেন্টাইন মেনু কি?'
নীলা তড়পড়িয়ে ওঠে - 'ভালো কথা মনে করেছো, চুলায় খিচুড়ি দিয়ে এসেছি। একরাম আজ বাসায় লাঞ্চ করবে। এখন রাখি।'
মুইনের রাখতে ইচ্ছে করে না।
শেষ বয়সে ব্যবসাপাতির সব কিছু ক্যামন যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। মুইন নীলাকে বলে - 'তোমার কাছে ফাগুন চেয়েছে কৃষ্ণচূড়া। একটা জোকস শুনবে?'
নীলা বিরক্ত হয় - 'ভাড়ামি ছাড়ো। এক পা কবরে গেছে, এবার আল্লা-খোদার নাম নাও'। খটাস করে ফোন রেখে দেয়।
মুইনের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।
প্রেম পীরিতের এমন হাল, কত ধানে কত চাল।

অ্যাপয়ন্টমেন্ট ডায়েরীতে দেখে সন্ধ্যায় ইটিয়েন চ্যানেলে লাইভ শো। বিশেষ ভ্যালেন্টাইন প্রোগ্রাম। কী বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতে মুইনের ঝিমুনি আসে।

বিশাল সিংহাসনে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন বসে আছে। সামনে জমায়েত অসংখ্য তরুণ-তরুণী। মুইনের হাত পেছনে বাধা। সমবেত মানুষের চিৎকারে মনে হচ্ছে কানের পর্দা ফেটে যাবে। পাশের দুজন রক্ষী মুইনকে সামনে নিয়ে যায়। লম্বা চুলের একজন আইনজীবি মুইনকে জেরা করে - 'আপনি অস্বীকার করবেন, আপনি এসব ছেলেপেলের মাথা খারাপ করেন নি?'
মুইন নিশ্চুপ।
আইলাভইউ টি-শার্ট পরা একজন তরুণ চিৎকার দেয় - 'এই লোকটি আমাদের ভুল ভালোবাসা শিখিয়েছে।'
আরেকজন তরুণী এগিয়ে আসে - 'এই লোকটি একজন কিশোরীকে অহেতূক রমনী ভাবতে শিখিয়েছে। '
একজন সৌম্য অধ্যাপক আওয়াজ তোলেন - 'সমাজ বিনির্মানের নামে এই লোকটি সামাজিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করেছে।'
এবার মানুষ চেনা যায় না। চারপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে - "এই লোকটি পরকীয়া প্রমোট করেছে। এই লোকটির আয়োজন অনাকাঙ্খিত প্ররোচনা শিখিয়েছে। এই লোকটি দিনের পর দিন - - -"

এরকম চিৎকার অসহ্য হয়ে উঠলে ঘুম ভেঙে যায়। ঝিমুতে ঝিমুতে মুইনের ঘুম পেয়েছিল খুব। আবার ফোন বাজে - 'মুইন সাহেব বলছেন?'
- ইয়েস
- আমি বাংলাভাই বলছি জান্নাতুল ফেরদাউস থেকে, হায়হায়রাতে এসব কী ছাপাইছেন ভাই। মানুষকে দ্বীনের পথ থেকে সরানোর এ চেষ্টা থামাবেন কবে?
রিসিভার ধরে মুইন কাপতে থাকে।

একে দু:স্বপ্ন, তার উপর এই ফোনালাপ। মুইনের গলা শুকিয়ে যায়।
তরমুজ-জুসের তৃষ্ণাটা জেগে ওঠে আবার।
মুইন তাড়াতাড়ি ল্যাপটপে টাইপ শুরু করে - 'দ্বীনের পর দ্বীন'।

(কাল্পনিক)

.
.
.

Read more...

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP