অণুগল্পঃ দৈনন্দিন
গুজব হিসেবে কথাটা আগেও কানে এসেছিলো, কিন্তু আজ সকালে পাশের বাসার নঈম চাচা হাতেনাতে ধরার পর আমরা ব্যাপারটি নিয়ে ভাবি। মেজো ভাইয়া বলছে, ‘এক মুহূর্তও দেরি করার দরকার নেই, এক্ষুণি বিদায় করে দাও।’ বড় ভাইয়া কিছুটা নমনীয় হয়ে বললেন, ‘বেশি হৈ-হল্লা করো না, কিছু ধমক দিয়ে শাসিয়ে দাও।’ আমিও বুঝতে পারি, এরকম করিৎকর্মা লোক পাওয়া সহজ না। তবুও - গত দু’মাস ধরে শুনছিলাম আমাদের বাসার দারোয়ান মাসুদের ঘরে মেয়েছেলে আসে মাঝরাতে এবং খুব ভোরে চলে যায়। নঈম চাচার চিল্লাচিল্লিতে আজ পাশের তিন বাসার লোক জড়ো হয়েছে। বড় ভাবী লজ্জায় রুম থেকে বেরই হচ্ছেন না। ভদ্র এলাকার ভদ্র বাড়ির সম্মান আর থাকলো না! আমি সরাসরি বলে এলাম, ‘সন্ধ্যায় এসে যেনো মাসুদের চেহারা না দেখি, দরকার হলে আমি রাতে বাসা পাহারা দেবো।’
রুবার আঙুলগুলো ছুঁয়ে আমি ক্রমশ শিশু হয়ে উঠি। তার হাত দুটো নিয়ে আমার চোখে-মুখে, ঘ্রাণ নিই। এরকম প্রায়ই হয়, সপ্তায় একবার কিংবা মাসে পাঁচবার অথবা তারও বেশি। আজ রুবা চুপচাপ, বলছিল, ওর বাবার হেমোডায়ালাইসিসের মাত্রা বাড়বে আগামী মাস থেকে, বাড়বে খরচও। তখন আমার নাক রুবার চিবুক পেরিয়ে গলায়, খানিক নিচে। অফিসে প্রতিদিন নয়টা-পাঁচটা কাঁচের ওপাশের রুবা, সিল্কের শাড়ির স্বচ্ছতায় ফরসা পেট, মৃদু পারফিউম - সব আমার হাতের নাগালে এলে আমি শিশু থেকে দানব হয়ে উঠি। ব্যাচেলর অনুপের নিরাপদ বাসা-বিছানা-বাতি ক্রমশঃ আপন হয়ে আসা পরিবেশে আমি দূরন্ত পারঙ্গম কৌশলী পুরুষ। রুবার হয়তো দমবন্ধ লাগে, তাই চোখ বুঁজে থাকে। এভাবেই অল্প সময়টুকু শেষ হয় দ্রুত। ...আরও পরে মাথা নিঁচু করে রুবা বলে, ‘এবারও এক হাজার?’ আমি বিরক্তি নিয়ে মানিব্যাগ থেকে একশ’ টাকার একটি মলিন নোট তুলে দিই রুবার হাতে।
মাসুদকে তাড়ানো হয়নি। শেষে নঈম চাচার সুপারিশেই ক্ষমা করা হয়েছে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়াও মাফ করে দিয়েছেন। রাতে মাসুদ আমার পা ধরে মাফ চাইলে আমার মেজাজ চরমে উঠে যায়, কষে চড় মেরে বলি, ‘আর যদি একবার এসব শুনি... ব্যাটা হারামজাদা, বদমায়েশ!’
.
.
.
সচলায়তন অণুগল্প সংকলন "দিয়াশলাই"-এ প্রকাশিত।
.
.
0 মন্তব্য::
Post a Comment