ছাপা বই, ই-বই
মাঝে মাঝে কিছু সেলসম্যান আসে।
ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংকের ডেপোজিট, কক্সবাজার বান্দরবন ট্যুর প্যাকেজ এসব।
প্রায়ই আসে বই বিক্রেতা। সমস্যা হলো, বইয়ের বৈচিত্র্য নেই। এ পর্যন্ত যতজন বই বিক্রি করতে এসেছে - তার বেশিরভাগ বিক্রি করতে আসে ডিকশনারী, হ্যারি পটার, রিপ্লি'স বিলিভ ইট অর নট, অ্যানিমেল ডিকশনারী; এগুলো। দুয়েকজন আসে - 'স্কিলস ফর ম্যানেজার, মোটিভেশন, লিডারশীপ' বিষয়ে টোটকা বই নিয়ে।
গত সপ্তাহে দুজন এলেন ইম্পাল্স নামের একটা কোম্পানী থেকে। হাতে অক্সফোর্ড ডিকশনারী। সেলসম্যান চলনে বলনে - প্রশিক্ষিত। জানালো, চল্লিশ হাজার নাকি আশি হাজার শব্দ নিয়ে এ এডিশন, সামনে বাজারে রিলিজ হলে অরিজিনাল কপি দাম পড়বে তিন হাজার আটশ' টাকা, এখন স্পেশাল অফার চলছে - মাত্র ষোলশ' টাকা, সাথে রিপ্লি'স বিলিভ ইট অর নট ফ্রি।
সেলসম্যানদের সাথে কথা বলি নিজস্ব আগ্রহে, তাদের টার্গেট গ্রুপ কারা, কেমন বিক্রি হয়, ট্রেনিং'এ কী শেখায় - এসব জানতে চাই। তারপর বই নেবো কি নেবো না - কেন নেবো না তা জানাই।
এবারের ডিকশনারী সেলসম্যানকে জানালাম - ডিকশনারীর জন্য আমি ঠিক টার্গেট গ্রুপ না। আমি ছাত্রজীবনের একটা ধাপ পেরিয়ে এসেছি। তাছাড়া, ছাপা ডিকশনারী কবে উল্টিয়েছি মনে পড়ে না। হাতের মোবাইল নিয়ে দেখালাম - আমার মোবাইলে ডিকশনারী আছে, গুগল আছে। যখন যে শব্দের দরকার ইন্টারনেটে সার্চ করে নিই।
সেলসম্যান আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে - এটা নতুন এডিশন, ভালো কোয়ালিটির ছাপা।
আমি বললাম, আমার বাসায় এমনিতে ইংলিশ টু ইংলিশ এবং ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারী আছ। এখন এটা নেয়া মানে - শো পিস হওয়া।
এবার বললো, কাউকে গিফট করেন।
বললাম, গিফট করার কেউ নেই।
এ'ও বললাম, অফিসে অফিসে না ঘুরে আপনি বরং প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে স্কুলের সামনে অপেক্ষমান বাবা মা'দের ধরতে পারেন। তারা ডিকশনারী কেনার সম্ভবনা বেশি।
আমার প্রস্তাব মেনে নিলো, তবে আপত্তি জানালো - ছাপা ডিকশনারীর সাথে মোবাইল ডিকশনারীর তুলনা হয় নাকি?
হেসে জানালাম, তুলনা হয়ই না। অনলাইনের ডিকশনারী অনেক বিস্তারিত, এবং উচ্চারণের অডিও ও আছে। সাথে যোগ করলাম, এখন আমি খুব কমই ছাপা পত্রিকা পড়ি, মোবাইলে অনলাইন ভার্সন পড়ার পরে ছাপা পত্রিকায় পড়ার আর কিছু থাকে না।
রুম থেকে প্রায় বের হয়ে যাচ্ছিল সেলসম্যান, ফিরে তাকিয়ে বললো - স্যার প্রথম আলো কিন্তু ষাট লাখ কপি বিক্রি হয় প্রতিদিন ছাপা কাগজে।
আমি বললাম, ভুল তথ্য - আপনি সম্ভবতঃ বিলবোর্ডে দেখেছেন - ষাট লাখ লোক প্রতিদিন প্রথম আলো পড়ে।
একটু ঘাবড়ে গেল সে। দ্বিধান্বিত চেহারায় উপদেশের স্বরে বললো - স্যার কম্পিউটারে মোবাইলে কম পড়বেন, চোখ ভালো থাকবে।
হাসলাম, বললাম - এই যে আমার হাতে মোবাইল সেট, এটায় বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে এ মোবাইলে এখন প্রায় অর্ধশত ই-বুক আছে।
সেলসম্যান চলে গেল।
ভাবছিলাম, নিজের জন্য কোনোদিন কি আর ছাপা ডিকশনারী কেনা হবে কিনা!
বাংলা ব্লগ পড়ার ও এখানে লেখার কারণে - কম্পিউটার মোবাইলে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আমার স্যামসাং গ্যালাক্সী পকেট মোবাইল ফোন সেটের স্ক্রীণ দুই দশমিক আট ইঞ্চি। ছোট এ পর্দায় - রেগুলার ব্লগ-পত্রিকা পড়ি, ফেইসবুকিং করি। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বেশ কিছু ই-বুকও পড়ে ফেলেছি।
ক'দিন ভাইবারে কথা হচ্ছিল কনফুসিয়াসের সঙ্গে।
আলাপে আলাপে উঠে এলো - ই-বুক জনপ্রিয় হচ্ছে প্রতিদিন। ইবুক রিডার, স্মার্ট ফোন-এ নিজের মত করে পেজ সেট আপ করে নেয়ার সুবিধার কারণে বাংলা ইবুকও জনপ্রিয় হবে। ছাপার বইয়ের দিন হয়তো ফুরাবে না খুব দ্রুত। তবে পাঠক ছাপা বইয়ের পাশাপাশি ই-বুকে অভ্যস্ত হবে। কনফু এ বিষয়ে সচলে লিখেছিলেন আগে।
গত সপ্তায় সেলুনে গিয়ে দেখি আমার আগে দুজন লাইনে। অপেক্ষা করতে হবে আধ ঘন্টার মতো। মোবাইল ফোনে পড়া শুরু করলাম - 'দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা'। আমার মোবাইল ফোনে দেখাচ্ছে ১৩৬ পৃষ্ঠা। একটানা পড়ে ফেললাম ৪৭ পৃষ্ঠা, তখন ডাক পড়লো। পড়তে মোটেও অস্বস্তি হলো না।
এ সপ্তায় যানজটে পড়লাম - ইলিয়াসের ঘোড়া।
ছোট স্ক্রীণে দ্রুত পাতা উলটানো যায় বলে মনোযোগ হারায় না; মোবাইলে ইবুক পড়তে গিয়ে এটা আমার প্রথম অনুভূতি।
হিমু ভাই আর কনফুসিয়াস থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমিও চেষ্টা করলাম নিজের ইবুক বানানোর। স্ম্যাশওয়ার্ডসে কাজটা মোটামুটি সহজেই করা যায়। ফলাফল - বানোয়াট গল্প। যদিও কারিগরী দিক থেকে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে এখনো।
স্ম্যাশওয়ার্ডে পেলাম অন্ততঃ আরো ডজনখানেক বাংলা ই-বুক। ফ্রি। পড়তে মন্দ লাগছে না।
ধারণা করছি - অনুমতিবিহীন এবং নিম্নমানের স্ক্যানড করা বই পড়ার দিন সামনে ফুরিয়ে যাবে। বাংলা ই-বুকের জয়জয়কার হবে আগামীদিনে।
ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংকের ডেপোজিট, কক্সবাজার বান্দরবন ট্যুর প্যাকেজ এসব।
প্রায়ই আসে বই বিক্রেতা। সমস্যা হলো, বইয়ের বৈচিত্র্য নেই। এ পর্যন্ত যতজন বই বিক্রি করতে এসেছে - তার বেশিরভাগ বিক্রি করতে আসে ডিকশনারী, হ্যারি পটার, রিপ্লি'স বিলিভ ইট অর নট, অ্যানিমেল ডিকশনারী; এগুলো। দুয়েকজন আসে - 'স্কিলস ফর ম্যানেজার, মোটিভেশন, লিডারশীপ' বিষয়ে টোটকা বই নিয়ে।
গত সপ্তাহে দুজন এলেন ইম্পাল্স নামের একটা কোম্পানী থেকে। হাতে অক্সফোর্ড ডিকশনারী। সেলসম্যান চলনে বলনে - প্রশিক্ষিত। জানালো, চল্লিশ হাজার নাকি আশি হাজার শব্দ নিয়ে এ এডিশন, সামনে বাজারে রিলিজ হলে অরিজিনাল কপি দাম পড়বে তিন হাজার আটশ' টাকা, এখন স্পেশাল অফার চলছে - মাত্র ষোলশ' টাকা, সাথে রিপ্লি'স বিলিভ ইট অর নট ফ্রি।
সেলসম্যানদের সাথে কথা বলি নিজস্ব আগ্রহে, তাদের টার্গেট গ্রুপ কারা, কেমন বিক্রি হয়, ট্রেনিং'এ কী শেখায় - এসব জানতে চাই। তারপর বই নেবো কি নেবো না - কেন নেবো না তা জানাই।
এবারের ডিকশনারী সেলসম্যানকে জানালাম - ডিকশনারীর জন্য আমি ঠিক টার্গেট গ্রুপ না। আমি ছাত্রজীবনের একটা ধাপ পেরিয়ে এসেছি। তাছাড়া, ছাপা ডিকশনারী কবে উল্টিয়েছি মনে পড়ে না। হাতের মোবাইল নিয়ে দেখালাম - আমার মোবাইলে ডিকশনারী আছে, গুগল আছে। যখন যে শব্দের দরকার ইন্টারনেটে সার্চ করে নিই।
সেলসম্যান আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে - এটা নতুন এডিশন, ভালো কোয়ালিটির ছাপা।
আমি বললাম, আমার বাসায় এমনিতে ইংলিশ টু ইংলিশ এবং ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারী আছ। এখন এটা নেয়া মানে - শো পিস হওয়া।
এবার বললো, কাউকে গিফট করেন।
বললাম, গিফট করার কেউ নেই।
এ'ও বললাম, অফিসে অফিসে না ঘুরে আপনি বরং প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে স্কুলের সামনে অপেক্ষমান বাবা মা'দের ধরতে পারেন। তারা ডিকশনারী কেনার সম্ভবনা বেশি।
আমার প্রস্তাব মেনে নিলো, তবে আপত্তি জানালো - ছাপা ডিকশনারীর সাথে মোবাইল ডিকশনারীর তুলনা হয় নাকি?
হেসে জানালাম, তুলনা হয়ই না। অনলাইনের ডিকশনারী অনেক বিস্তারিত, এবং উচ্চারণের অডিও ও আছে। সাথে যোগ করলাম, এখন আমি খুব কমই ছাপা পত্রিকা পড়ি, মোবাইলে অনলাইন ভার্সন পড়ার পরে ছাপা পত্রিকায় পড়ার আর কিছু থাকে না।
রুম থেকে প্রায় বের হয়ে যাচ্ছিল সেলসম্যান, ফিরে তাকিয়ে বললো - স্যার প্রথম আলো কিন্তু ষাট লাখ কপি বিক্রি হয় প্রতিদিন ছাপা কাগজে।
আমি বললাম, ভুল তথ্য - আপনি সম্ভবতঃ বিলবোর্ডে দেখেছেন - ষাট লাখ লোক প্রতিদিন প্রথম আলো পড়ে।
একটু ঘাবড়ে গেল সে। দ্বিধান্বিত চেহারায় উপদেশের স্বরে বললো - স্যার কম্পিউটারে মোবাইলে কম পড়বেন, চোখ ভালো থাকবে।
হাসলাম, বললাম - এই যে আমার হাতে মোবাইল সেট, এটায় বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে এ মোবাইলে এখন প্রায় অর্ধশত ই-বুক আছে।
সেলসম্যান চলে গেল।
ভাবছিলাম, নিজের জন্য কোনোদিন কি আর ছাপা ডিকশনারী কেনা হবে কিনা!
বাংলা ব্লগ পড়ার ও এখানে লেখার কারণে - কম্পিউটার মোবাইলে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আমার স্যামসাং গ্যালাক্সী পকেট মোবাইল ফোন সেটের স্ক্রীণ দুই দশমিক আট ইঞ্চি। ছোট এ পর্দায় - রেগুলার ব্লগ-পত্রিকা পড়ি, ফেইসবুকিং করি। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বেশ কিছু ই-বুকও পড়ে ফেলেছি।
ক'দিন ভাইবারে কথা হচ্ছিল কনফুসিয়াসের সঙ্গে।
আলাপে আলাপে উঠে এলো - ই-বুক জনপ্রিয় হচ্ছে প্রতিদিন। ইবুক রিডার, স্মার্ট ফোন-এ নিজের মত করে পেজ সেট আপ করে নেয়ার সুবিধার কারণে বাংলা ইবুকও জনপ্রিয় হবে। ছাপার বইয়ের দিন হয়তো ফুরাবে না খুব দ্রুত। তবে পাঠক ছাপা বইয়ের পাশাপাশি ই-বুকে অভ্যস্ত হবে। কনফু এ বিষয়ে সচলে লিখেছিলেন আগে।
গত সপ্তায় সেলুনে গিয়ে দেখি আমার আগে দুজন লাইনে। অপেক্ষা করতে হবে আধ ঘন্টার মতো। মোবাইল ফোনে পড়া শুরু করলাম - 'দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা'। আমার মোবাইল ফোনে দেখাচ্ছে ১৩৬ পৃষ্ঠা। একটানা পড়ে ফেললাম ৪৭ পৃষ্ঠা, তখন ডাক পড়লো। পড়তে মোটেও অস্বস্তি হলো না।
এ সপ্তায় যানজটে পড়লাম - ইলিয়াসের ঘোড়া।
ছোট স্ক্রীণে দ্রুত পাতা উলটানো যায় বলে মনোযোগ হারায় না; মোবাইলে ইবুক পড়তে গিয়ে এটা আমার প্রথম অনুভূতি।
হিমু ভাই আর কনফুসিয়াস থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমিও চেষ্টা করলাম নিজের ইবুক বানানোর। স্ম্যাশওয়ার্ডসে কাজটা মোটামুটি সহজেই করা যায়। ফলাফল - বানোয়াট গল্প। যদিও কারিগরী দিক থেকে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে এখনো।
স্ম্যাশওয়ার্ডে পেলাম অন্ততঃ আরো ডজনখানেক বাংলা ই-বুক। ফ্রি। পড়তে মন্দ লাগছে না।
ধারণা করছি - অনুমতিবিহীন এবং নিম্নমানের স্ক্যানড করা বই পড়ার দিন সামনে ফুরিয়ে যাবে। বাংলা ই-বুকের জয়জয়কার হবে আগামীদিনে।
0 মন্তব্য::
Post a Comment