08 August, 2012

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন

  • বিজ্ঞাপন ছাড়া ব্যবসা করা মানে হচ্ছে, আপনি কোনো এক অন্ধকার ঘরে সুন্দরী এক তরুণীর দিকে তাকিয়ে হাসছেন। কেবল আপনিই জানছেন আপনি কী করছেন। অপরপক্ষ কিছুই জানছে না।
  • বিজ্ঞাপনে সত্য কথা বলুন, কিন্তু বলুন খুব আগ্রহ-উদ্দীপক ভাবে, যাতে যে শুনছে সে মনোযোগ দেয়। ("মূল ইংরেজীটা এরকম - টেল দ্য ট্রুথ, বাট টেল দ্য ট্রুথ ইন অ্যা ফ্যাসিনেটিং ওয়ে।")
  • বিজ্ঞাপনে এমন কিছু লিখবেন না, যেটা আপনি আপনার পরিবারকে পরিজনকে পড়তে দেবেন না।
এগুলো হলো বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু জনপ্রিয় কথা।
ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞাপন বিষয়ে অল্পস্বল্প পড়ালেখা করেছি। বিভিন্ন সময়ে নজর রাখার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে। (এইটুকু পড়ে বিজ্ঞাপন-পেশায়-জড়িত প্রিয় পান্থ রহমান রেজা তেড়ে না আসলেই হলো!)
আল রাইজ আর জ্যাক ট্রাউট যেমন বলেন, আমরা একটা ওভার কম্যুনিকেটেড সমাজে বসবাস করছি। এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা হচ্ছে। ফলে শব্দ এবং অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে। এই ব্যাপক কোলাহলে দর্শক-শ্রোতা-পাঠক মনোযোগ রাখছে না। এক গবেষণায় (তথ্যসুত্রটা খুঁজে পেলে পরে দেবো) দেখা গেছে টেলিভিশনের দর্শক গত রাতে দেখা মাত্র ৬% বিজ্ঞাপন পরদিন স্মরণ করতে পারে, বাকী ৯৪% বিজ্ঞাপন মানুষ ভুলে যায়।
আগে কোনো এক পোস্টে লিখেছিলাম, বিলবোর্ড আমাদের শহরকে নোংরা করে ফেলেছে। শক্তি কবিও সম্ভবতঃ লিখেছেন, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। পত্রিকার পাতা ভর্তি বিজ্ঞাপন। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে চলছে সংবাদ-বিনোদন।

যাক, কথা না বাড়িয়ে শিরোনামে আসি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন কেমন হওয়া উচিত। ঔচিত্যের প্রসঙ্গে যদি আপত্তি থাকে তবে প্রস্তাবনা রাখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে কী থাকলে ভালো হয়।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞাপন দেয় কেন?
আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো - কখনো বিজ্ঞাপন দিয়ে বলে না, "এসো এসো আমার ক্লাসে এসো।"
বিজ্ঞাপন দেয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বিক্রেতার সংখ্যা বেড়ে গেলে, ক্রেতার নজর আকর্ষণে সজোরে চিৎকার করতে হয়। জানাতে হয় পণ্যের কথা, পণ্যের গুণের কথা। প্রতিদ্বন্ধী বিক্রেতার পণ্যের তুলনায় আমার পণ্য কেন ভালো - সেটাও বলতে হয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা/জ্ঞান কতোটুকু সৃষ্টি করছে, আর কতোটুকু বিপনন করছে - সে তর্ক এখন থাক।
প্রায় পাঁচ ডজন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য ভর্তিচ্ছু ছাত্র; সব মিলিয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মন্দ নয়। বাজার প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে, তাই বিজ্ঞাপনও দিতে হচ্ছে হরহামেশা। বছর তিনেক আগেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিজ্ঞাপন দিতো - ভর্তি চলছে। সেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ের সাথে নামকরা প্রফেসরদের, যারা ওখানে পড়ান তাদের, নামের তালিকা ছাপানো হতো। থাকতো ক্রেডিট ট্রান্সফার, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি; এসব প্রসঙ্গ। এগুলো থাকতো মূলত ছাপা সংবাদপত্রে।
যতোটুকু মনে পড়ে, ২০০২-০৩ এর দিকে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে নজর কাড়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমনও হয়েছে, দেখেছি - এক চ্যানেলে এক ঘন্টায় ৭/৮বার স্ট্যামফোর্ডের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। অনুষ্ঠান স্পনসরও করেছে তারা।
এরপর হুট করে ছাপা বিজ্ঞাপনে আসে, মেধাবীদের জন্য স্কলারশীপ, ওয়েভার; এসব। কিন্তু, কিছুদিন পরে এ শব্দগুলো হয়ে যায় - ডিসকাউন্ট!
এ যেন পণ্য বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন, ডিসকাউন্ট ফর সিবলিংস, ডিসকাউন্ট ফর ফিমেইল স্টুডেন্টস!! হায়!!!
আরো পরে যোগ হয় - ফ্রি ল্যাপটপ।

এভাবেই চলছিল।
বছর খানেক বা তারও একটু আগে গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এক টিভি বিজ্ঞাপনে আবার চমক দেখায়। ভবিষ্যৎ পেশার লোভনীয় অফার। আপত্তি ছিল, বিজ্ঞাপনের মডেল নির্বাচনে। হয়তো, তারা সঠিক টার্গেট মার্কেটকেই নির্বাচন করেছে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বললে আমাদের মনোজগতে যে চেহারা ভাসে, বিজ্ঞাপনের ছাত্রটি মোটেও সেরকম নয়। বরং উঠতি ডিজুস জেনারেশনের আদর্শ প্রতিচ্ছবি। আর ছাত্রীটি? ক্লাস সেভেন নাকি এইট? বড়বড় বিলবোর্ডে তাদের ছবি দেখা যায়। তিন পর্বের ধারাবাহিক টিভি বিজ্ঞাপনগুলো দেখুন এখানে-



এ প্রসঙ্গে, আরেকটু যোগ করি। অল্প কিছুদিন বিদেশে থাকার সুবাদে সেখানকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনও দেখেছি। তবে বিজ্ঞাপনগুলো ছিলো - চাকরির বাজার সংক্রান্ত তথ্য সমৃদ্ধ। যেমন একটা কলেজের বিজ্ঞাপনে দেখেছিলাম, ওরা বলেছে - " পাশ করার পরে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা গড়ে ছয় মাসের মধ্যেই চাকরী পায়।" আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয়তা দিচ্ছিলো, এমবিএ করার পরে ১ বছরের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে ২৫% বেশি বেতনের চাকরি পাওয়া যাবে, নইলে সব টিউশন ফি ফেরত দেয়া হবে।

আজ ভাবনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠলো বনানীস্থ ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার দুটো বিজ্ঞাপন দেখে। একটা ছাপা হয়েছে প্রথম আলোয়। ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পরে একজন গাড়ি কিনেছেন। বিজ্ঞাপনে গাড়ির সাথে সুন্দরী নারীও আছে।



অন্যটি ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারে। বলা হচ্ছে, সৌলফ্রেন্ড পাওয়া যাবে ওখানে -


দেখে ভাবছি, শিক্ষা-গবেষণা কিংবা ক্যারিয়ার নয়, এবার ফ্রয়েড রাজত্ব শুরু করলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে।

0 মন্তব্য::

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP