গল্পের চরিত্র, লেখকের দায়
রমজান আসতেই পর্দা পুষিদা বেড়ে গেছে।
বিটিভি এবং এটিএনের সংবাদ পাঠিকার মাথায় ঘোমটা উঠেছে। ঘোমটা টেনেছে রাস্তার পাশের দোকানগুলো। হাড্ডি জিরজিরে শরীরের শ্রমজীবি মানুষ কলা পাউরুটি পানি খেয়ে তাঁবুর ভেতর থেকে বেরুচ্ছে। ঘামে লেপ্টে যাওয়া শার্টের জীর্ণ শার্টের বোতাম খুলে রিক্সায় প্যাডেল মারছে। মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে ১১ নম্বরের দিকে যেতে ফায়ার সার্ভিসের পাশের ফুটপাথ।
পুরনো বইয়ের ভ্রাম্যমান দোকান।
চোখ বুলিয়ে দেখলাম, সেবা প্রকাশনীর পেপার ব্যাক বইয়ের সংখ্যা কমছে। গতবার আরো বেশি দেখেছিলাম। এবার বেড়েছে নীলক্ষেত প্রিন্টে শংকর, সুনীল, শীর্ষেন্দু, আশাপূর্ণাদেবী আর ইসলামী বইয়ের বাহার। স্কুল কলেজের বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। ধীর গতিতে দেখছি, আশেপাশে আরো কাস্টোমার আসছে, যাচ্ছে। কয়েক কিশোর কিশোরীকে দেখলাম টেস্ট পেপার খোঁজ করছে। এক তরুণ-তরুণী জুটি জোকসের বই চাচ্ছে।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'পদশব্দ' পেলাম ভালো কন্ডিশনে। শাহরীয়ার শরিফের সায়েন্স ফিকশন, বেপরোয়া, নিলাম। কোনো এক সামিয়াকে লেখক অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন হাতে আঁকা কার্টুনসহ। বইটি উৎসর্গও করা হয়েছে সামিয়াকে। এক অথবা অভিন্ন মানুষ।
চোখ আঁটকালো, 'তালাক' নামের বইয়ে, লেখা আছে 'এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর আত্মকথা'। লেখকের নাম দেখে উলটে পালটে দেখলাম।
গত সপ্তাহে ফেসবুকে এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে আলাপ দেখছিলাম এ বইয়ের। ফ্ল্যাপে লেখা ভূমিকা পড়ে আগ্রহ জাগলো। বইয়ের কাগজ বেশ ভালো, এর আগে হয়তো একবার বা দুবার পড়া হয়েছে এ বই, এমনই ঝকঝকে অবস্থা। দরদাম করে বেশ সস্তায় পেয়ে গেলাম।
বাসায় এসে পড়া শুরু করলাম। ২০০৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত। এর আগে নাকি এ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে এক ট্যাবলয়েড দৈনিকে ছাপা হয়েছে ২০০৪এর অগাস্টের দিকে। তারপরেই নাকি তোলপাড় হয়ে গেছে। পাঠকের চিঠি ফোনে বাংলাদেশের প্রকশনার ইতিহাসে নাকি এক অভূতপূর্ব কান্ড ঘটে গেছে। প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটা চিঠিও শেষে ছাপা হয়েছে, নির্ঘন্টে জানানো হয়েছে - সব লেখা ছাপালে বইয়ের দাম বেড়ে যেতো।
যাক, পড়া শুরু করলাম। গদ্যরীতি খুব সাদামাটা। অখন্ড মনোযোগ দেয়ার মতো কিছু নেই। তাই চোখ বুলিয়ে দ্রুত পড়ে ফেলা যায়।
বইয়ের পরিচিতিতে বলা হয়েছে - এক সেলিব্রিটি লেখক উচ্ছৃঙ্ক্ষল জীবন যাপন করতে গিয়ে ত্রিশ বছরের সংসার ভেঙে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিচ্ছেন। সেই স্ত্রীর আত্মকথার ছায়া অবলম্বনে লেখা।
হায়, আত্মকথা! হায় ছায়া!!
পাতার পর পাতা - গুল-ই-স্তান, হিমালয়, ঢা/বি-র শিক্ষক, তিন কন্যা, এক পুত্র, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, লেখকের ২ ভাই, ৩ বোন, কলোনীর বাসা থেকে বিতাড়ন, বাদল দিনের কদম ফুল, কোথাও কেউ নেই, আনিস, আবুল খায়ের, শাল্মলী পল্লী, এবং শাওন্তী।
এটা কি আর ছায়া থাকে?
হুমায়ূনের বিভিন্ন আত্মকথা টাইপ বইগুলো থেকে কাহিনী ধার করে, এর পরে সদ্য ডিভোর্সী স্ত্রীর মুখে ইচ্ছামতো কথা বসিয়ে গল্প ফাঁদা!!!
হুমায়ূন আহমেদ এতটাই নন্দিত এবং নিন্দিত যে তার বিগত স্ত্রী হয়তো কোনো এক কালে নিজের স্মৃতিকথা লিখতেন! সে দায়িত্ব নিজের কাঁধে কী করে নিলেন মিলান ফারাবী?
শুনেছি, মানবজমিনে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হওয়ার সময় নাকি গুজব রটেছিল গুলতেকিনই লিখছেন ছদ্মনামে। অথচ 'তালাক'এ এমন অনেক শব্দ এবং সংলাপ উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো শুনলে গুলতেকিনও হয়তো অস্বস্তিবোধ করবেন।
ছায়া অবলম্বনে বলে- লেখক কতোটা দায় এড়াতে পারবেন জানি না। তবে অন্য মানুষের, বিশেষ করে আলোচিত মানুষদের, স্মৃতিকথা কেউ এভাবে রঙ মিশিয়ে লেখার স্বাধীনতা পান কিনা সেটা বড় প্রশ্ন।
পাঠক হিসেবে বলবো, গল্পের মানুষগুলো এভাবে পুরোটা চেনাজানা হয়ে গেলে ছায়া সরে যায়। লেখকের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন আসে সামনে।
বিটিভি এবং এটিএনের সংবাদ পাঠিকার মাথায় ঘোমটা উঠেছে। ঘোমটা টেনেছে রাস্তার পাশের দোকানগুলো। হাড্ডি জিরজিরে শরীরের শ্রমজীবি মানুষ কলা পাউরুটি পানি খেয়ে তাঁবুর ভেতর থেকে বেরুচ্ছে। ঘামে লেপ্টে যাওয়া শার্টের জীর্ণ শার্টের বোতাম খুলে রিক্সায় প্যাডেল মারছে। মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে ১১ নম্বরের দিকে যেতে ফায়ার সার্ভিসের পাশের ফুটপাথ।
পুরনো বইয়ের ভ্রাম্যমান দোকান।
চোখ বুলিয়ে দেখলাম, সেবা প্রকাশনীর পেপার ব্যাক বইয়ের সংখ্যা কমছে। গতবার আরো বেশি দেখেছিলাম। এবার বেড়েছে নীলক্ষেত প্রিন্টে শংকর, সুনীল, শীর্ষেন্দু, আশাপূর্ণাদেবী আর ইসলামী বইয়ের বাহার। স্কুল কলেজের বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। ধীর গতিতে দেখছি, আশেপাশে আরো কাস্টোমার আসছে, যাচ্ছে। কয়েক কিশোর কিশোরীকে দেখলাম টেস্ট পেপার খোঁজ করছে। এক তরুণ-তরুণী জুটি জোকসের বই চাচ্ছে।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'পদশব্দ' পেলাম ভালো কন্ডিশনে। শাহরীয়ার শরিফের সায়েন্স ফিকশন, বেপরোয়া, নিলাম। কোনো এক সামিয়াকে লেখক অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন হাতে আঁকা কার্টুনসহ। বইটি উৎসর্গও করা হয়েছে সামিয়াকে। এক অথবা অভিন্ন মানুষ।
চোখ আঁটকালো, 'তালাক' নামের বইয়ে, লেখা আছে 'এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর আত্মকথা'। লেখকের নাম দেখে উলটে পালটে দেখলাম।
গত সপ্তাহে ফেসবুকে এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে আলাপ দেখছিলাম এ বইয়ের। ফ্ল্যাপে লেখা ভূমিকা পড়ে আগ্রহ জাগলো। বইয়ের কাগজ বেশ ভালো, এর আগে হয়তো একবার বা দুবার পড়া হয়েছে এ বই, এমনই ঝকঝকে অবস্থা। দরদাম করে বেশ সস্তায় পেয়ে গেলাম।
বাসায় এসে পড়া শুরু করলাম। ২০০৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত। এর আগে নাকি এ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে এক ট্যাবলয়েড দৈনিকে ছাপা হয়েছে ২০০৪এর অগাস্টের দিকে। তারপরেই নাকি তোলপাড় হয়ে গেছে। পাঠকের চিঠি ফোনে বাংলাদেশের প্রকশনার ইতিহাসে নাকি এক অভূতপূর্ব কান্ড ঘটে গেছে। প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটা চিঠিও শেষে ছাপা হয়েছে, নির্ঘন্টে জানানো হয়েছে - সব লেখা ছাপালে বইয়ের দাম বেড়ে যেতো।
যাক, পড়া শুরু করলাম। গদ্যরীতি খুব সাদামাটা। অখন্ড মনোযোগ দেয়ার মতো কিছু নেই। তাই চোখ বুলিয়ে দ্রুত পড়ে ফেলা যায়।
বইয়ের পরিচিতিতে বলা হয়েছে - এক সেলিব্রিটি লেখক উচ্ছৃঙ্ক্ষল জীবন যাপন করতে গিয়ে ত্রিশ বছরের সংসার ভেঙে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিচ্ছেন। সেই স্ত্রীর আত্মকথার ছায়া অবলম্বনে লেখা।
হায়, আত্মকথা! হায় ছায়া!!
পাতার পর পাতা - গুল-ই-স্তান, হিমালয়, ঢা/বি-র শিক্ষক, তিন কন্যা, এক পুত্র, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, লেখকের ২ ভাই, ৩ বোন, কলোনীর বাসা থেকে বিতাড়ন, বাদল দিনের কদম ফুল, কোথাও কেউ নেই, আনিস, আবুল খায়ের, শাল্মলী পল্লী, এবং শাওন্তী।
এটা কি আর ছায়া থাকে?
হুমায়ূনের বিভিন্ন আত্মকথা টাইপ বইগুলো থেকে কাহিনী ধার করে, এর পরে সদ্য ডিভোর্সী স্ত্রীর মুখে ইচ্ছামতো কথা বসিয়ে গল্প ফাঁদা!!!
হুমায়ূন আহমেদ এতটাই নন্দিত এবং নিন্দিত যে তার বিগত স্ত্রী হয়তো কোনো এক কালে নিজের স্মৃতিকথা লিখতেন! সে দায়িত্ব নিজের কাঁধে কী করে নিলেন মিলান ফারাবী?
শুনেছি, মানবজমিনে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হওয়ার সময় নাকি গুজব রটেছিল গুলতেকিনই লিখছেন ছদ্মনামে। অথচ 'তালাক'এ এমন অনেক শব্দ এবং সংলাপ উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো শুনলে গুলতেকিনও হয়তো অস্বস্তিবোধ করবেন।
ছায়া অবলম্বনে বলে- লেখক কতোটা দায় এড়াতে পারবেন জানি না। তবে অন্য মানুষের, বিশেষ করে আলোচিত মানুষদের, স্মৃতিকথা কেউ এভাবে রঙ মিশিয়ে লেখার স্বাধীনতা পান কিনা সেটা বড় প্রশ্ন।
পাঠক হিসেবে বলবো, গল্পের মানুষগুলো এভাবে পুরোটা চেনাজানা হয়ে গেলে ছায়া সরে যায়। লেখকের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন আসে সামনে।
0 মন্তব্য::
Post a Comment