সম্প্রীতির সন্দেশ
ডিসি অফিসে বছরের এই সময়ে এরকম একটা মিটিং হয়। মকসুদআলী আর শাহাবুদ্দির পাশাপাশি নারায়ণ নাথ-কেও বসতে হয়। এবারো অমনটা হলো।
ডিসি খায়রুজ্জামান কিছুটা তৃপ্তির হাসি হাসেন
- বুঝলেন নারাণবাবু, ঘটনা তেমন কিছু না। গত ক’বছর ধরে এমনটা হচ্ছে। রোজা-পূজা একসাথে। এবারো উপরের অর্ডার আসছে - সেহরী, তারাবীর নামাজ আর ইফতারের সময় বাদ্য-বাজনা-মাইক বাজানো যাবে না।
-জ্বী স্যার, বুঝতে পারছি। নারাণ সম্মতি দেয়।
পাশ থেকে মকসুদআলী চোখ ঘুরিয়ে বলে - কেবল আপনি বুঝলে তো হইবো না বাবু, পোলাপাইনেরেও বুঝাই কইয়েন। শয়তান কিছু আছে - তারাবীর জামাতের সময় মসজিদের পাশে গিয়া পটকা ফুটায়।
- ওসব কিন্তু মুসলমানের পোলাপাইনও করে। নারাণ জবাব দেয়।
শাহাবুদ্দি কম যায় না - আমি কইলাম ধরতে পারলে এইবার খতনা করাই ছাড়বো। গতবার হারাণের পোলারে ধরছিলাম না!
নারাণ আমতা আমতা করে - সাথে কিন্তু আপনের ভাগিনাও ছিল।
ডিসি এবার থামায় সবাইকে।
- দেখেন আপনারা হইলেন এলাকার গণ্যমান্য লোক। আপনারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেন, উতসবগুলো সমস্যা ছাড়া কেটে যাক। সামনে ইলেকশন আছে। এ সময় ঝামেলা যত কম হবে, তত ভালো।
- আমরা তো সবসময় শান্তিই চাই। কেবল এই পূজার কয়েকটা দিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তা দরকার। কিছু পোলাপাইন এবারো সমস্যা করতে পারে।
শাহাবুদ্দি গলা খাকারি দেয় - নারাণবাবু, আপনেরা সহজ বিষয়টা জটিল করে ফেলেন। পোলাপাইন চা-নাস্তার জন্য কিছু চাইলে দিয়া দিয়েন...
-ঐটা তো প্রতি বছর দিই।
- তাইলে আর চিন্তা কইরেন না, আমরা তো আছি। কোন গন্ডগোল হইবো না। খালি ঢোল বাজনাটা একটু হিসাব কইরা কইরেন। মকসুদমিয়া সাহস দেয়।
নারাণবাবু এবার হাত কচলায় - আরেকটা কথা ছিল, ডিসি স্যার।
বলেন নারাণবাবু, বলেন।
- সেহরীর সময় তো মাইকে হুজুরেরা ডাকে। মোটামুটি সবার ঘরে অ্যালার্মঅলা ঘড়িও আছে। এরপরও কিছু ছেলেপেলে গেইটে এসে পিটাপিটি করে। ওরা তো জানে -এইটা হিন্দু বাড়ী । এরপরও পিটাপিটি না করলে হয় না? বাড়ীতে অসুস্থ বুড়া মানুষজন আছে। বাচ্চাকাচ্চা আছে...
মকসুদমিয়া চেয়ার নেড়ে বসে - এর লাইগা কয়, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। সামান্য ক’টা রাত - কী এমন ডিস্টার্ব হয়? একটু সহ্য করবার পারেন না?
শাহাবুদ্দি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়ে - পোলাপাইনরে ক্ষেপায়ে লাভ আছে? ক’টা দিন সহ্য করে যান। আপনেরা ভালো থাকেন। আমরাও ভালো থাকি।
...ভালো থাকাটা খুব দরকার।
ডিসি সাহেব সবাইকে চা-সিঙ্গাড়া খাইয়ে মিটিং শেষ করেন।
পরদিন সংবাদপত্রেঃ
... গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আসন্ন রোজা ও পূজা শান্তিপূর্নভাবে পালনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়...।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৬
0 মন্তব্য::
Post a Comment