কয়েক দিন আগে আয়নার সামনে যখন ব্যাপারটা চোখে পড়লো, তখনও সাত্তার মামা তেমন গুরুত্ব দেননি। মাথার হাজার হাজার চুলের মাঝে দু'য়েকটা সাদা হয়ে গেলে কী-ই বা এমন ক্ষতি হয়! বরং দুপাশে জুলফির ওপরে সাদা চুল ঘন হয়ে আসলে খানিকটা আভিজাত্য আসে। ক্ষণিক সময়ে সাত্তার মামা ভাবছিলেন - আরো কিছু চুল সাদা হয়ে উঠুক, চশমার কালো ফ্রেমের সাথে মিলিয়ে নতুন গেট আপ মন্দ হবে না একেবারে। এ বয়সে স্মিত-সৌম্য চেহারা নিয়ে প্যাকেজ নাটকে নায়ক হওয়া যাবে না, বাংলালিংকের আপার ক্লাস প্যাকেজের মডেল হওয়া যাবে না, প্রমিত উচ্চারণে বিটিভি'র টক শো ও করা যাবে না। তবুও অন্তত: অফিসে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ধরে রাখা যাবে। পাশের ডেস্কের ত্রিশোর্ধ্ব লতিফ সাহেব যখন নীলক্ষেত থেকে কেনা ডেল কার্নেগী কিংবা ম্যালকম গ্লাডোয়েলের বাংলা সংস্করণ পড়ে সাফল্যের দরজা খুঁজছে, তখন সাত্তার মামা নিজেই কার্নেগী, কিংবা আরও বেশি কিছু হবেন। অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে কল মানি রেট কিংবা এল সি নিয়ে আলোচনায় নিজস্ব মতামত শেষে চশমায় ধাক্কা দিয়ে সাদা চুলগুলোর উজ্জ্বল্য ফুটিয়ে তোলা যাবে। মনে হবে - সাদা চুলগুলো মোটেও বয়সের চিহ্ন নয়, বরং অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ছাপ। অথচ মামার সমস্ত ভাবনাকে তুচ্ছ করে দিলো সেদিন মারিয়ার ছোট্ট একটি কথা।
মামা যে ব্যাংকে চাকরী করেন মারিয়া সেখানে ইন্টার্ণ। জানুয়ারী-মে-সেপ্টেম্বর মাস ধরে ধরে এরকম ইন্টার্ণরা আসে, চলে যায়। কারো কারো শেখার আগ্রহ, কারো টাইম পাস, আবার কারো কাছে ইন্টার্ণ কোর্স করতে হবে বলে করা। গত তিন বছরে মামার ব্রাঞ্চে ইন্টার্ণ হিসেবে মেয়েদেরই প্রাধান্য। বিভিন্ন প্রাইভেট য়্যূনিভার্সিটির ছেলে-মেয়েরা আবেদন করে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছোটোখাটো ইন্টারভিউতে-ও বসেন। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে বাছাই করেন। এ প্রক্রিয়ায় সাত্তার মামা কখনোই নিজেকে জড়াতে চাননি, প্রোবেশনারী পিরিয়ডের জুনিয়র অফিসারদের মতো উথাল-পাথাল আগ্রহ নিয়েও ইন্টার্ণদের দিকে তাকাননি। মনের ভেতর একটা ধারণা ছিলো - ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের বুদ্ধি সুদ্ধি ভালো আছে। তুলনামূলকভাবে স্মার্ট মেয়েদের ইন্টার্ণ হিসেবে নিয়ে একদিকে অফিসের সৌন্দর্য্য বাড়ছে, আবার ঝিমুনিঅলা স্টাফরা মোটিভেটেড হচ্ছে। যেমন - লতিফ সাহেবের কথাই ধরা যাক, সকাল নয়টায় অফিস শুরু অথচ তিনি কখনো নয়টা দশের আগে আসতে পারেন না। হেলেদুলে যাও আসেন, নেক টাই পরিমাণে লম্বা অথবা বিশ্রী রকম খাটো হয়ে যায়। অনেক বলাবলিতেও লতিফ সাহেবের পরিবর্তনের লক্ষণ ছিলো না, অথচ - ইন্টার্ণ আসার সাথে সাথে লতিফ সাহেব ন'টা বাজার দশ মিনিট আগে অফিসে, পরিপাটি চুল, গায়ে ইদানিং খানিকটা ইনফিনিটিও মাখেন মনে হয়! আর প্রোবেশনারী পিরিয়ডের ম্যানেজমেন্ট ট্রেনীরা লাঞ্চ ব্রেকের সময় কমিয়ে মন দিয়ে কাজ করে, কথাবার্তায়ও পরিমিত-মার্জিত হয়ে ওঠে। এতোদিন দূর থেকে মামা এগুলো দেখে নিজের মাঝে নিজে নানান বিশ্লেষণ করে আমোদিত হয়েছেন কেবল। কিন্তু এবার মারিয়া আসার পর মামাকেও জড়িয়ে পড়তে হলো। ফিন্যান্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কনসেন্ট্রেশনের মারিয়া কাজ করছে ইন্টার-ব্যাংক লোন রেট আর ফরেন কারেন্সী ম্যানেজমেন্টের উপর। সিনিয়র ব্যাংকার হিসেবে মামার উপরেই সব ঘাপলা। একটু পরপর মারিয়া এটা সেটা প্রশ্ন নিয়ে মামার ডেস্কে ঘেঁষে আসে। তত্ত্বীয় অনেক বিষয় ভুলে গেলেও মামা মোটামুটি জবাব দিয়ে কাজ সারতে পারেন। তবে ইদানিং প্রফেসর এম এ মান্নানের 'ব্যাংকিং যুগে যুগে' বইয়ে চোখ বুলান সামান্য। সাত্তার মামা আর মারিয়ার এ সংশ্লিষ্টতা কিংবা ঘনিষ্টতা নিয়ে অফিসে বেশ ফিসফাস গুজগুজ শোনা যায়। তরুণরা এ ব্যাপারে খানিকটা অস্থির কিংবা হিংসা বোধ করতেই পারে, সেটা সাত্তার মামার কাছে জটিল কিছু নয়। বরং লতিফ সাহেব যখন ইনিয়ে বিনিয়ে মামার বয়সের ব্যাপারটা আলোচনায় নিয়ে আসে, তখন মেজাজ আসলেই চড়ে ওঠে। এই যেমন সেদিন, ডলারের উর্ধ্বগতির সাথে বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক এবং সময়ের সাথে ব্যবসা বিধির পরিবর্তন নিয়ে মামা যখন মারিয়াকে চমৎকার জ্ঞান দিচ্ছিলেন, পাশ থেকে লতিফ সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে অহেতূক জিজ্ঞেস করে - "সাত্তার ভাইয়ের ম্যাট্রিক তো বোধ হয় দেশ স্বাধীনের আগে, নাকি?"
সাত্তার মামা কিছু বলার আগেই মারিয়া বলে ওঠে - "সাত্তার ভাই তাহলে আমার ড্যাডিদের ব্যাচের হবেন।"
তখনি কোণার ডেস্ক থেকে সাকিল টিপ্পনী কাটে - "সাত্তার ভাইকে দেখলে সেরকম বয়েসী মনেই হয় না!"
এসব বিদ্রুপকে সাত্তার মামা নিতান্তই পরশ্রীকাতরতা ভাবেন। বরং লাঞ্চ আওয়ারে মারিয়ার সাথে একত্রে খেতে বসে হতভাগা তরুণদল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী লাতিফ সাহেবের দিকে মুচকি হাসি ছুঁড়েন। খাবার টেবিলে মারিয়ার সাথে টুকটাক আলাপ হয়। ব্যাংকিং সেক্টর, ক্যারিয়ার, জেনারেশন গ্যাপ কিংবা রাজনীতির পাশাপাশি শাড়ী-গহনার আলাপও জমে ওঠে। মারিয়া ইদানিং সাত্তার মামার টিফিন বক্সে হাত বাড়াচ্ছে। মামীর রান্না করা মিক্সড ভেজিট্যাবলের মৌতাত ঘ্রাণে মারিয়া লোভ সামলাতে পারে না। মামাও আগ্রহ নিয়ে কয়েক চামচ সব্জিভাজি তুলে দেন। বিনিময়ে মারিয়ার প্লেট থেকে মুরগির রান পাওয়া যায়।
মামীর রান্নার প্রতি মারিয়ার এ মুগ্ধতা মামা গোপন রাখতে পারেন না। বাসায় ফিরে মামীর কাছে মারিয়ার কথা ওয়ার্ড-টু-ওয়ার্ড গল্প করেন। প্রথম প্রথম মামী তার স্বভাব সুলভ নম্রতায় 'কী আর এমন রান্না' বলে উড়িয়ে দিতো। প্রশংসায় গদগদ হয়ে পরে বেশ কয়েক দিন মামার টিফিন বক্সে মারিয়ার জন্য পরোটা-সব্জি পাঠিয়েছে। মামাও সন্ধ্যায় ফিরে এসে মারিয়ার গল্প বলেছেন নিয়মিত। মামার মুখে ক্রমাগত মারিয়ার গল্প শুনতে শুনতে মামীর সন্দেহ বোধটা জেগে ওঠে একদিন। সেদিন অফিসে মারিয়া সবুজ প্রিন্টের-কালো পাড়ের বালুচূড়ি কাতান শাড়ী পড়ে এসেছিল, রাপা প্লাজার যার দাম হাজার দুয়েকের মতো। মামীকে সেরকম একটি শাড়ী কিনে দেয়ার কথা বলার পর, মামীর মুখে যে উজ্জ্বল হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা নিমিষেই উধাও হয়ে যায় মামার এক সম্পূরক মন্তব্যে - 'মারিয়াকে শাড়ীতে আসলেই ভালো লাগছিল'। মামার এ প্রশংসা বাক্য মামীর কাছে আরও বেশী কিছু মনে হলো, এবং মারিয়া নামটা নিমিষেই এক ঘোর শত্রু-শব্দে রূপ নিলো। এ নিয়ে মামী কথা আগালো না, তবে সে রাতে ঘুমও ভাঙলো বেশ কয়েকবার। মাঝ রাতে এপাশ ওপাশ করতে করতে মামা অস্ফুট শব্দে 'মারিয়া' বললো নাকি 'মা রে' বললো সেটা মামী ঠিক নিশ্চিত হতে পারলো না। এ দু:শ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে পরদিন সকালে মামীর মাথা ব্যথা দেখা দিলো, বিছানা ছাড়তে দেরী হলো, এবং মামা সকালের নাস্তা না করে - টিফিন না নিয়ে বাসা থেকে বেরুলেন।
মামীর মাথা ব্যথার ব্যাপারটিকে সাত্তার মামা একেবারে তুচ্ছ মনে করলেন না। বিশ-বাইশ বছরের সংসার জীবনে মামা খেয়াল করেছেন, কোনো কিছু গড়বড় হলেই মামীর মাথা ব্যথা হয়, এবং সেটা প্রায়শই অভিমান-অনুযোগ-রাগ থেকে সৃষ্টি। গতকাল এমন কিছু হয়নি যে মামীর মাথা ব্যথাটা চড়ে উঠবে! মামার আরও অবাক লাগে - বালুচুড়ি কাতান শাড়ি কেনার ব্যাপারে মামী কোনো আগ্রহই দেখালো না! মামীর এ ভিন্ন আচরণে মামার মনে হলো দিনটাই মাটি হবে। এসব অস্থির ভাবনায় দুপুরে বাইরে খেতে যাওয়ার সময় মারিয়া ডাক দেয় - 'বাইরে যেতে হবে না, আমি আপনার জন্য খাবার এনেছি আজ।' মামা আশেপাশে তাকিয়ে দেখেন সাকিল-লতিফরা কেউ শুনলো কিনা। মারিয়া সেদিন স্যান্ডউইচ আর কিমা পরোটা এনেছিল। খেতে খেতে নাটক সিনেমা নিয়ে গল্প হয়। গল্প হয় - সুচিত্রা সেনের সাম্প্রতিক অসুস্থতা নিয়ে। মারিয়া আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে চোখ রাখছে নিয়মিত। মামাও তার এক সময়কার স্বপ্নকণ্যা সুচিত্রা সেনের সিনেমা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আনমনে নিজেকে আবার উত্তম কুমার মনে হয়। মামার চুলের স্টাইলটা এখনো সেরকম আছে অবিকল। ভাবনার ডানা প্রশাখা গড়িয়ে জুলফির উপরের সাদা চুলে যেতেই মারিয়া বলে উঠে - "সাত্তার ভাই, চুলে কালার করেন না কেনো?"
সাত্তার মামার মনে হলো কেউ যেনো তার দু'গালে চটাস চটাস করে দুটো চড় মেরে বসেছে। চোখ-কান গরম হয়ে আসে। তবুও হাসি দিয়ে সাত্তার মামা বলেন - "পাকা চুল কই? অল্প দুয়েকটা চোখে পড়ে!"
মারিয়া এবার হাসি দেয়, মনে হয় চরম বিদ্রুপের হাসি - "আয়নায় তাকিয়ে দেখেন, দুপাশের সব পাকা চুল উঁকিঝুকি দিচ্ছে, হি হি হি।"
জুলফির ওপরের পাকা চুল নিয়ে মামা যে আভিজাত্য ভাবনায় ডুবে ছিলেন কিছুদিন আগে, সেটা তুচ্ছ করে দিলো মারিয়ার এ ছোট্ট একটি কথা। আশেপাশে কেউ নেই, তবুও সাত্তার মামার মনে হয় - অফিসের সবাই এ কথা শুনে গেলো, এরপর সাকিল-লতিফরা কথায় কথায় পাকা চুলের কথা টেনে আনবে, মামাকে অপমান করবে।
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে সাত্তার মামার মন ভীষণ খারাপ হয়ে থাকে। সকালে মামীর মাথা ব্যথা, দুপুরে মারিয়ার বিদ্রুপ সব মিলিয়ে বাজে একটি দিন গেলো। বাসাবো মোড়ে বাস থেকে নেমে কেনো জানি - সুচিত্রা সেনের কথা মনে পড়ে বারবার। মামীও উত্তম-সুচিত্রা জুটির ফ্যান। ভেবে চিন্তে মামা ঢুকলেন মিউজিক প্যালেসে। উত্তম সুচিত্রার তিনটি সিনেমার সিডি কিনে বাসার পথে রওনা দেন। মনটা উড়ুউড়ু হয়ে ওঠে মুহুর্তে। এ উড়ন্ত মনকে আরেকটু চটকে দেয় কাঁচঘেরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কংকন হেয়ার ড্রেসিং। মারিয়ার বিদ্রুপ ঢাকতে মামা সেলুনে ঢুকে চুলে কালার করান। নাপিত ছোকড়া যখন জুলফির ওপরে কালো রঙ করছিল, তখন মামার মনটাও রঙীন হয়ে উঠে।
বাসায় ফিরে মামীর কাছে চুল কালারের ঘটনা চেপে যান এবং মামীর মাথা ব্যথা সেরে গেছে জেনে মন আরও ভালো হয়ে যায়। মামীও উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখার আগ্রহে সন্ধ্যায় বাসার পুলি-পিঠা বানায়। সারাদিনের মন খারাপের মেঘ কেটে সাত্তার মামার মনের আকাশে রোদের ঝলকানি লাগে। রাতের খাবার শেষে আগ্রহ নিয়ে দু'জন সিনেমা দেখতে বসে। প্রথমে 'ইন্দ্রাণী'; মামীর প্রিয় ছবি।
এক পর্যায়ে সুচিত্রা সেন বলছে - 'বাড়ীটা একটু ছোটো হয়ে গেলো'।
উত্তম কুমার জানালার কাছে দাড়ানো। গুনগুন করে নায়ক গান শুরু করে - "নীড় ছোটো, ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়ো"।
সুচিত্রা সেন ঘাঁড় ফিরিয়ে উত্তম কুমারের দিকে তাকায়। মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ঠোঁটের দুপাশে হাসি আস্তে আস্তে বিস্তৃত হয়। সাত্তার মামার মনে হয় - যৌবনের সে-ই বুক ধুপধুপটা আবার শুরু হবে আজ!
মামা রি-ওয়াইন্ড করে আবার দেখেন, সুচিত্রার ভুবনজয়ী হাসি।
মামীকে বলেন - "দেখো, হাসিটা খুব দারুণ না!"
মামী চুপচাপ।
মামা পাশে তাকিয়ে দেখেন, মামী দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
গায়ে হাত দিয়ে মামা আস্তে করে ধাক্কা দেন - "কি হলো? সিনেমা দেখছো না? ঘুমাচ্ছো নাকি?"
- "খুব মাথা ধরেছে, ভালো লাগছে না"। মামীর এ মৃদূ জবাবে মামা কোনো পলেস্তারা খুঁজে পেলেন না। মামীর মাথা ধরার কারণ সন্ধানে না গিয়ে মামা আপাত: উত্তম-সুচিত্রার গভীর প্রেমের সংলাপে ডুবে যান। পছন্দ মতো রি-ওয়াইন্ড/ফরওয়ার্ডও করেন।
আরও সময় পরে, সিনেমা প্রায় শেষের দিকে যখন, মামা শুনতে পান - মামী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। হঠাৎ কান্নার কি হলো? মামীর কপালে হাত রেখে মামা জিজ্ঞেস করেন - "কী হলো, দু:স্বপ্ন দেখছো?"
মামী এক ঝাপটায় মামার হাতটা দূরে সরিয়ে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে - "পোড়া মিনসে, আমি সকালে এক্সট্রা পরোটা-সব্জি বানিয়ে দিই - আর সন্ধ্যায় উনি জামায় কাজলের দাগ নিয়ে ঘরে ফিরেন!"
মামা থতমত খান।
মামীর ফোঁসফোস কান্নাটা বেড়ে চলেছে।
মামা টিভি বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
.
.
. *****************************************
২০১৪ এডিটেড
কয়েক দিন আগে আয়নার সামনে
যখন ব্যাপারটা চোখে পড়লো, তখনো তেমন গুরুত্ব দেননি সাত্তার মামা। মাথার হাজার
হাজার চুলের মাঝে দু'য়েকটা সাদা
হয়ে গেলে কী-ই বা এমন
ক্ষতি হয়! বরং দুপাশে জুলফির ওপরে
সাদা চুল ঘন হয়ে এলে খানিকটা আভিজাত্য আসে। তাই সাত্তার মামা
ভাবছিলেন, আরো কিছু চুল সাদা হয়ে উঠুক, চশমার কালো ফ্রেমের সাথে
মিলিয়ে নতুন গেট আপ মন্দ হবে না একেবারে। এ বয়সে স্মিত-সৌম্য চেহারা
নিয়ে প্যাকেজ নাটকে নায়ক হওয়া যাবে না, আকাশ-ঢাকা
বিলবোর্ডে হাস্যজ্জ্বোল মডেল হওয়া যাবে না, প্রমিত উচ্চারণে টেলিভিশনের মধ্য রাতের টক-শোও করা যাবে
না। তবুও, অন্তত: অফিসে নিজেকে
অন্যদের থেকে আলাদা করে ধরে
রাখা যাবে। পাশের ডেস্কের ত্রিশোর্ধ্ব লতিফ সাহেব যখন নীলক্ষেত থেকে কেনা ডেল
কার্নেগী কিংবা ড্যান ব্রাউনের বাংলা সংস্করণ পড়ে সাফল্যের দরজা খুঁজছে, তখন সাত্তার মামা নিজেই
কার্নেগী, কিংবা আরো বেশি
কিছু হবেন। অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে কল মানি রেট কিংবা লেটার অভ ক্রেডিট নিয়ে আলোচনায় নিজস্ব মতামত
শেষে চশমায় ধাক্কা দিয়ে সাদা চুলগুলোর ঔজ্জ্বল্য ফুটিয়ে তোলা যাবে। মনে
হবে - সাদা চুলগুলো মোটেও বয়সের চিহ্ন নয়, বরং অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ছাপ।
অথচ মামার সমস্ত ভাবনাকে তুচ্ছ করে দিলো সেদিন মারিয়ার ছোট্ট একটি কথা।
মামা যে ব্যাংকে চাকরী
করেন মারিয়া সেখানে ইন্টার্ণ। জানুয়ারী-মে-সেপ্টেম্বর
মাস ধরে ধরে এরকম ইন্টার্ণরা আসে, চলে যায়। কারো কারো শেখার আগ্রহ, কারো কাছে হাজিরা
দেয়াটাই মূল। গত তিন বছরে মামার ব্রাঞ্চে ইন্টার্ণ হিসেবে মেয়েদেরই
প্রাধান্য। বিভিন্ন
প্রাইভেট য়্যূনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা আবেদন করে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছোটোখাটো
ইন্টারভিউতেও বসেন। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে বাছাই করেন। এ প্রক্রিয়ায় সাত্তার মামা
কখনোই নিজেকে জড়াতে চাননি। প্রোবেশনারী পিরিয়ডের জুনিয়র অফিসারদের মতো
উথাল-পাথাল আগ্রহ নিয়েও
ইন্টার্ণদের দিকে তাকাননি। মনের ভেতর
একটা ধারণা ছিলো, ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের বুদ্ধি সুদ্ধি ভালো
আছে। তুলনামূলকভাবে
স্মার্ট মেয়েদের ইন্টার্ণ হিসেবে নিয়ে একদিকে অফিসের সৌন্দর্য্য বাড়ছে আবার ঝিমুনিঅলা স্টাফরা
মোটিভেটেড হচ্ছে। যেমন - লতিফ সাহেবের কথাই
ধরা যাক, সকাল নয়টায়
অফিস শুরু অথচ তিনি কখনো নয়টা দশের আগে আসতে পারেন না। হেলেদুলে
যা-ও আসেন, নেক টাই আকারে বিশ্রী রকম লম্বা অথবা
খাটো হয়ে যায়। অনেক বলাবলিতেও লতিফ সাহেবের পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল না। অথচ ইন্টার্ণ আসার সঙ্গে
সঙ্গে লতিফ সাহেব ন'টা বাজার দশ মিনিট আগে অফিসে আসেন। পরিপাটি চুল, গায়ে ইদানিং খানিকটা পারফিউমও মাখেন! আর
প্রোবেশনারী পিরিয়ডের
ম্যানেজমেন্ট ট্রেনীরা লাঞ্চ ব্রেকের সময় কমিয়ে মন দিয়ে কাজ করে, কথাবার্তায়ও পরিমিত-মার্জিত হয়ে
ওঠে।
এতদিন দূর থেকে এগুলো দেখে সাত্তার মামা আপন মনে নানান
বিশ্লেষণ করে আমোদিত হয়েছেন কেবল। কিন্তু এবার মারিয়া আসার পর মামাকেও
জড়িয়ে পড়তে হলো। ফিন্যান্স
অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কনসেন্ট্রেশনের মারিয়া কাজ করছে ইন্টার-ব্যাংক লোন রেট আর
ফরেন কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের
ওপর। সিনিয়র ব্যাংকার
হিসেবে মামার উপরেই সব ঘাপলা। একটু পরপর মারিয়া এটা সেটা প্রশ্ন নিয়ে মামার ডেস্কে
ঘেঁষে আসে। তত্ত্বীয় অনেক
বিষয় ভুলে গেলেও মামা মোটামুটি জবাব দিয়ে কাজ সারতে পারেন। তবে ইদানিং প্রফেসর এম এ মান্নানের 'ব্যাংকিং যুগে যুগে' বইয়ে চোখ বুলান টুকটাক।
সাত্তার মামা আর মারিয়ার
এ সংশ্লিষ্টতা কিংবা ঘনিষ্টতা নিয়ে অফিসে বেশ ফিসফাস গুজগুজ শোনা যায়। তরুণ সহকর্মীরা এ ব্যাপারে
খানিকটা অস্থির কিংবা হিংসা
বোধ করতেই পারে, সেটা সাত্তার
মামার কাছে জটিল কিছু নয়। বরং লতিফ সাহেব যখন ইনিয়ে বিনিয়ে মামার বয়সের ব্যাপারটা আলোচনায়
নিয়ে আসে, তখন মেজাজ আসলেই চড়ে ওঠে মামার। এই যেমন সেদিন, ডলারের উর্ধ্বগতির সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক এবং
সময়ের সাথে ব্যবসা বিধির পরিবর্তন নিয়ে মামা যখন মারিয়াকে চমৎকার জ্ঞান
দিচ্ছিলেন, পাশ থেকে লতিফ
সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে অহেতূক জিজ্ঞেস করে, ‘সাত্তার
ভাইয়ের ম্যাট্রিক তো বোধ হয় দেশ স্বাধীনের আগে, নাকি?’
সাত্তার মামা
কিছু বলার আগেই মারিয়া বলে ওঠে, ‘সাত্তার ভাই
তাহলে আমার ড্যাডিদের ব্যাচের হবেন।’ তখনি কোণার
ডেস্ক থেকে ছোকড়া সাকিল টিপ্পনী কাটে, ‘সাত্তার ভাইকে
দেখলে সেরকম বয়েসী মনেই হয় না!’
এসব বিদ্রুপকে সাত্তার
মামা নিতান্তই পরশ্রীকাতরতা ভাবেন। বরং লাঞ্চ আওয়ারে মারিয়ার সঙ্গে এক
টেবিলে খেতে
বসে হতভাগা তরুণদল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী লাতিফ সাহেবের দিকে মুচকি
হাসি ছোঁড়েন। খেতে খেতে মারিয়ার সঙ্গে
বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বিষয়ে আলাপ করেন সাত্তার মামা। ব্যাংকিং
সেক্টর, ক্যারিয়ার, জেনারেশন গ্যাপ কিংবা
রাজনীতির পাশাপাশি শাড়ী-গহনার আলাপও
জমে ওঠে। মারিয়া ইদানিং সাত্তার মামার টিফিন বক্সে হাত বাড়াচ্ছে। মামীর রান্না করা মিক্সড ভেজিট্যাবলের
মৌতাত ঘ্রাণে মারিয়া লোভ
সামলাতে পারে না। মামাও আগ্রহ নিয়ে কয়েক চামচ সব্জিভাজি তুলে দেন। বিনিময়ে মারিয়ার
প্লেট থেকে মুরগির রান পাওয়া যায়।
মামীর রান্নার প্রতি
মারিয়ার এ মুগ্ধতা মামা গোপন রাখতে পারেন না। বাসায় ফিরে মামীর কাছে মারিয়ার
কথা ওয়ার্ড-টু-ওয়ার্ড গল্প
করেন। প্রথম প্রথম মামী তার স্বভাব সুলভ নম্রতায় 'কী আর এমন রান্না' বলে উড়িয়ে দিতেন। প্রশংসায় গদগদ হয়ে পরে বেশ কয়েক
দিন মামার টিফিন বক্সে মারিয়ার জন্য পরোটা-সব্জি পাঠিয়েছেন
মামী। মামাও সন্ধ্যায় ফিরে এসে
মারিয়ার গল্প বলেছেন নিয়মিত। মামার মুখে ক্রমাগত মারিয়ার গল্প শুনতে
শুনতে মামীর সন্দেহ বোধটা জেগে ওঠে একদিন। সেদিন অফিসে মারিয়া সবুজ
প্রিন্টের-কালো পাড়ের বালুচূড়ি
কাতান শাড়ী পড়ে এসেছিল, রাপা প্লাজার যার দাম সাত হাজার টাকার মতো। মামীকে
সেরকম একটি শাড়ী কিনে দেয়ার
কথা বলার পর, মামীর মুখে যে
উজ্জ্বল হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নিমিষেই উধাও
হয়ে যায় মামার এক সম্পূরক মন্তব্যে - 'মারিয়াকে শাড়ীতে আসলেই ভালো লাগছিল'। মামার এ
প্রশংসা বাক্য মামীর কাছে আরো বেশী কিছু মনে হলো এবং মারিয়া নামটা নিমিষেই
এক ঘোর শত্রু-শব্দে রূপ নিলো। এ নিয়ে
মামী কথা বাড়ালেন না। তবে সে রাতে মামীর ঘুম ভাঙলো
বেশ কয়েকবার। মাঝ রাতে এপাশ ওপাশ করতে করতে মামা অস্ফুট শব্দে 'মারিয়া' বললো নাকি 'মা রে' বললো সেটা মামী ঠিক নিশ্চিত হতে পারলেন না। এ নিয়ে দু:শ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার
ঘেরাটোপে পরদিন সকালে মামীর মাথা ব্যথা দেখা দিলো, বিছানা ছাড়তে দেরী হলো, এবং মামা সকালের নাস্তা না করে - টিফিন না নিয়ে
বাসা থেকে বেরুলেন।
মামীর মাথা ব্যথার
ব্যাপারটিকে সাত্তার মামা একেবারে তুচ্ছ মনে করলেন না। বিশ-বাইশ বছরের
সংসার জীবনে মামা খেয়াল করেছেন, কোনো কিছু
গড়বড় হলেই মামীর মাথা
ব্যথা হয়, এবং সেটা
প্রায়শই অভিমান-অনুযোগ-রাগ থেকে
সৃষ্ট। গতকাল এমন কিছু হয়নি যে মামীর মাথা ব্যথাটা চড়ে উঠবে! মামার আরও
অবাক লাগে - বালুচুড়ি কাতান শাড়ি কেনার ব্যাপারে মামী কোনো আগ্রহই
দেখালো না! মামীর এ ভিন্ন আচরণে
মামার মনে হলো আজ দিনটাই মাটি হবে। এসব
অস্থির ভাবনায় দুপুরে বাইরে খেতে যাওয়ার সময় মারিয়া ডাক দেয় - 'বাইরে যেতে হবে
না, আমি আপনার জন্য খাবার এনেছি আজ।'
মামা আশেপাশে তাকিয়ে
দেখেন সাকিল-লতিফরা কেউ শুনলো কিনা। মারিয়া
সেদিন স্যান্ডউইচ আর কিমা পরোটা এনেছিল। খেতে খেতে নাটক সিনেমা নিয়ে গল্প হয়।
গল্প হয় - সুচিত্রা সেনের প্রয়ান,
রহস্যময় জীবন এবং এ নিয়ে বিভিন্ন গুজব নিয়ে। মারিয়া আনন্দবাজার পত্রিকার
অনলাইন সংস্করণ থেকে পড়ে শোনাচ্ছিল সেদিন। মামাও তার এক সময়কার স্বপ্নকন্যা
সুচিত্রা সেনের সিনেমা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আনমনে নিজেকে আবার উত্তম কুমার
মনে হয়। মামার চুলের স্টাইলটা এখনো সেরকম আছে অবিকল। ভাবনার ডানা
প্রশাখা গড়িয়ে জুলফির উপরের সাদা চুলে যেতেই মারিয়া বলে উঠে – ‘সাত্তার ভাই, চুলে কালার করেন না কেন?’
সাত্তার মামার মনে হলো
কেউ যেনো তার দু'গালে চটাস
চটাস করে দুটো চড় মেরে বসেছে। চোখ-কান গরম হয়ে
আসে। তবুও হাসি দিয়ে সাত্তার মামা বলেন – ‘পাকা চুল কই? অল্প দুয়েকটা চোখে পড়ে!’
মারিয়া এবার হাসি দেয়, মনে হয় চরম বিদ্রুপের হাসি – ‘আয়নায় তাকিয়ে দেখেন, দুপাশের সব পাকা চুল
উঁকিঝুকি দিচ্ছে, হি হি হি।'
জুলফির ওপরের পাকা চুল
নিয়ে মামা যে আভিজাত্য ভাবনায় ডুবে ছিলেন কিছুদিন আগে, সেটা তুচ্ছ করে দিলো
মারিয়ার এ ছোট্ট একটি কথা। আশেপাশে কেউ নেই, তবুও সাত্তার মামার মনে হয় - অফিসের সবাই এ
কথা শুনে গেল। এরপর সাকিল-লতিফরা কথায় কথায়
পাকা চুলের কথা টেনে আনবে, মামাকে অপমান
করবে।
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে
সাত্তার মামার মন ভীষণ খারাপ হয়ে থাকে। সকালে মামীর মাথা ব্যথা, দুপুরে মারিয়ার বিদ্রুপ
সব মিলিয়ে বাজে একটি দিন গেলো। বাসাবো মোড়ে বাস থেকে নেমে সুচিত্রা সেনের কথা মনে পড়ে
বারবার। মামীও উত্তম-সুচিত্রা
জুটির ভক্ত। ভেবে চিন্তে
মামা ঢুকলেন মিউজিক প্যালেসে। উত্তম সুচিত্র জুটি
অভিনীত সিনেমার ডিভিডি কিনে বাসার
পথে রওনা দেন। মনটা উড়ুউড়ু
হয়ে ওঠে মুহূর্তে। এ উড়ন্ত মনকে
আরেকটু চটকে দেয় কাঁচঘেরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কংকন হেয়ার ড্রেসিং। মারিয়ার বিদ্রুপ
ঢাকতে মামা সেলুনে ঢুকে চুলে
কালার করান। নাপিত ছোকড়া যখন জুলফির ওপরে কালো রঙ করছিল, তখন মামার মনটাও রঙীন হয়ে
উঠে।
সাত্তার
মামা বাসায় ফিরে মামীর কাছে চুল কালারের ঘটনা চেপে যান এবং মামীর
মাথা ব্যথা সেরে গেছে
জেনে মন আরও ভালো হয়ে যায়। মামীও উত্তম-সুচিত্রার ছবি
দেখার আগ্রহে
সন্ধ্যায় বাসায় পুলি-পিঠা বানায়।
সারাদিনের মন খারাপের মেঘ কেটে সাত্তার মামার
মনের আকাশে রোদের ঝলকানি লাগে। রাতের খাবার শেষে আগ্রহ নিয়ে দু'জন সিনেমা দেখতে বসে। প্রথমে
'ইন্দ্রাণী'; মামীর প্রিয় ছবি।
এক পর্যায়ে সুচিত্রা সেন
বলছে – ‘বাড়ীটা একটু ছোটো হয়ে গেল’।
উত্তম কুমার জানালার কাছে
দাঁড়ানো। গুনগুন করে নায়ক
গান শুরু করে - ‘নীড় ছোটো, ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়ো’।
সুচিত্রা সেন ঘাঁড় ফিরিয়ে
উত্তম কুমারের দিকে তাকায়। মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ঠোঁটের দুপাশে হাসি আস্তে
আস্তে বিস্তৃত হয়। সাত্তার মামার মনে হয়, যৌবনের সে-ই বুক
ধুপধুপটা আবার শুরু হবে আজ!
মামা রি-ওয়াইন্ড করে
আবার দেখেন, সুচিত্রার
ভুবনজয়ী হাসি।
মামীকে বলেন – ‘দেখো, হাসিটা কী সুন্দর!’
মামী চুপচাপ।
মামা পাশে তাকিয়ে দেখেন, মামী দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছেন।
গায়ে হাত দিয়ে মামা আস্তে করে ধাক্কা দেন – ‘কি হলো? সিনেমা দেখছো না? ঘুমাচ্ছো নাকি?’
‘খুব মাথা ধরেছে, ভালো লাগছে না।’ মামীর এ মৃদূ
জবাবে মামা কোনো পলেস্তারা
খুঁজে পেলেন না। মামীর মাথা ধরার কারণ সন্ধানে না গিয়ে মামা আপাতত: উত্তম-সুচিত্রার
গভীর প্রেমের সংলাপে ডুবে যান। পছন্দ মতো রি-ওয়াইন্ড/ফরওয়ার্ডও
করেন।
আরও সময় পরে, সিনেমা প্রায় শেষের দিকে যখন, মামা শুনতে পান - মামী ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। হঠাৎ কান্নার
কি হলো? মামীর কপালে
হাত রেখে মামা জিজ্ঞেস করেন – ‘কী হলো, দু:স্বপ্ন দেখছো?’
মামী এক ঝাপটায় মামার হাতটা দূরে সরিয়ে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে
বলেন, ‘পোড়া মিনসে, আমি সকালে এক্সট্রা পরোটা সব্জি বানিয়ে দিই - আর সন্ধ্যায়
উনি জামায় কাজলের দাগ
নিয়ে ঘরে ফিরেন!’
মামা থতমত খান।
মামীর ফোঁসফোস কান্নাটা বেড়ে চলেছে।
মামা টিভি বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।