মিরপুর মন
সময় পেলে বিকেলে হাঁটতে বের হই।
মানুষের ভীড়ে হাঁটা মুশকিল। ভিডিও গেইমসের মতো ওপাশ থেকে ছুটে আসা মানুষ, যেন গায়ে গা ছুঁলেই লাইফ কমে যাবে। তবুও হাঁটি। রানকিপার চালু করে দেখি আসা যাওয়া মিলিয়ে ৫ কিলোমিটার হয়, এক ঘন্টায়। মেদ কমে কিনা, ব্লাড সার্কুলেশন শ্রেয় হয় কিনা জানি না, তবে তিন চার দিন হেঁটে ভালো অনুভব করেছি।
হাঁটতে গেলেই দেখা হয় চেনা মানুষের সঙ্গে। কেউ চোখে চোখ রেখে কুশল বিনিময় করে, হাত নাড়ে - অথবা কারো সঙ্গে দাঁড়িয়ে দু'মিনিট কথা বলি। কেউ কেউ দেখে না, বা আমি দেখি না, অথবা দুজনেই দেখি- না দেখার ভান করি। একদিন দেখা হলো এক ব্লগার বন্ধুর সাথে, স্বস্ত্রীক। আরেকদিন এক ছাত্রের সঙ্গে।
আজ ফেরার পথে আর-এফ-এল এর শো-রুম বেস্ট বাই-তে ঢুকেছিলাম একটা ওয়েস্ট বাস্কেট কেনার জন্য। বেশ পরিপাটি শোরুম। রঙীন জিনিসের পসরা। দেখতে ভালো লাগে।
ঢুকতেই ৪/৫ বছরের একটি টুনটুনি টাইপ বাচ্চা, ঝুটি বাঁধা মেয়ে, এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো - 'হাই, হোয়াটস ইয়্যুর নেইম?'
একটু চমকালাম, আমাকে?
টুনটুনির মুখে মিষ্টি হাসি দেখে নাম বললাম। ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী?
প্রথমে বুঝেনি, আরেকবার বলার পরে নাম জানালো, বিন্তী।
হাসিমুখে বিদায় নিয়ে ভেতরে গেলাম, শেলফে চোখ বুলাচ্ছিলাম। বিন্তী আবার এসে জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি কী কিনবে?'
বললাম, 'বিন কিনবো?'
সে বোঝেনি। বললাম - ময়লা কাগজ ফেলার ঝুড়ি কিনবো।
সামনের সারিতে রাখা একটা দেখিয়ে সে বললো - এগুলো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, তবে আরো ছোটো।
বিন্তী আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি ইংরেজীও বলতে পারো?
বললাম, হ্যাঁ পারি, তুমিও তো পারো।
সে বললো, আমি পারি না।
বললাম, একটু একটু তো পারো!
কিছু না বলে টুনটুনি বিন্তী অন্যদিকে চলে গেল।
আমি দোকানের একেবারে সামনের সারিতে রাখা একটা ছোটো সাইজের ময়লার বাস্কেট কিনলাম। কাউন্টারে দেখি বিন্তী দাঁড়িয়ে, পেশাদার সেলসপারসনের মতো জিজ্ঞেস করলো, 'এটা কিনেছ?'
বললাম, হ্যাঁ।
দোকানে রাখা বড় ললিপপ সাইজের শোপিস হাতে নিয়ে সে নাড়ছে আর জিজ্ঞেস করছে, এটা কী?
কাউন্টারের লোকটি বলছে - ললিপপ দেখোনি কখনো? খাওনি?
তখন পাশ থেকে মহিলা, সম্ভবত বিন্তীর মা, বিন্তীকে ধমক দিচ্ছে, 'এঅ্যাই এতো কথা ব-লে-না।'
দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। মনে হলো - এ শহরে অনেকদিন পরে একজন অচেনা মানুষ এমন মিষ্টি করে কথা বললো। পিচ্চি বিন্তী টুনটুনিকে দেবশিশু মনে হলো।
ইদানিং কোনো কিছুতে আক্রান্ত হইনা।
আনন্দিত-বিষ্মিত-ক্ষুব্ধ-শোকাহত হওয়ার মাত্রা কমে গেছে। চারপাশে নষ্ট হচ্ছে সব, ভেঙে পড়ছে ভবন-বিশ্বাস-সম্পর্ক-আস্থা। সব কিছু নিয়ে হতাশ হচ্ছি। দিন দিন নৈরাশ্যে ডুবছি। স্বার্থপর হচ্ছি। নিজের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ।
হেড ফোনে শুনছিলাম অনুপম রায়ের চমৎকার একটি গান -
তুমি জানতে জানতে জানতে - জানতে বোধহয়
আর মায়াহীন পশ্চিম, আসন্ন অন্তিম -
শিথিল হচ্ছে স্নায়ু
তার আঁধারের সঞ্চয়, অনিবার্য যত ক্ষয়
সূর্য তোমার কমছে আয়ু।
তুমি নামতে নামতে নামতে থামবে কোথায়?
Read more...
মানুষের ভীড়ে হাঁটা মুশকিল। ভিডিও গেইমসের মতো ওপাশ থেকে ছুটে আসা মানুষ, যেন গায়ে গা ছুঁলেই লাইফ কমে যাবে। তবুও হাঁটি। রানকিপার চালু করে দেখি আসা যাওয়া মিলিয়ে ৫ কিলোমিটার হয়, এক ঘন্টায়। মেদ কমে কিনা, ব্লাড সার্কুলেশন শ্রেয় হয় কিনা জানি না, তবে তিন চার দিন হেঁটে ভালো অনুভব করেছি।
হাঁটতে গেলেই দেখা হয় চেনা মানুষের সঙ্গে। কেউ চোখে চোখ রেখে কুশল বিনিময় করে, হাত নাড়ে - অথবা কারো সঙ্গে দাঁড়িয়ে দু'মিনিট কথা বলি। কেউ কেউ দেখে না, বা আমি দেখি না, অথবা দুজনেই দেখি- না দেখার ভান করি। একদিন দেখা হলো এক ব্লগার বন্ধুর সাথে, স্বস্ত্রীক। আরেকদিন এক ছাত্রের সঙ্গে।
আজ ফেরার পথে আর-এফ-এল এর শো-রুম বেস্ট বাই-তে ঢুকেছিলাম একটা ওয়েস্ট বাস্কেট কেনার জন্য। বেশ পরিপাটি শোরুম। রঙীন জিনিসের পসরা। দেখতে ভালো লাগে।
ঢুকতেই ৪/৫ বছরের একটি টুনটুনি টাইপ বাচ্চা, ঝুটি বাঁধা মেয়ে, এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো - 'হাই, হোয়াটস ইয়্যুর নেইম?'
একটু চমকালাম, আমাকে?
টুনটুনির মুখে মিষ্টি হাসি দেখে নাম বললাম। ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী?
প্রথমে বুঝেনি, আরেকবার বলার পরে নাম জানালো, বিন্তী।
হাসিমুখে বিদায় নিয়ে ভেতরে গেলাম, শেলফে চোখ বুলাচ্ছিলাম। বিন্তী আবার এসে জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি কী কিনবে?'
বললাম, 'বিন কিনবো?'
সে বোঝেনি। বললাম - ময়লা কাগজ ফেলার ঝুড়ি কিনবো।
সামনের সারিতে রাখা একটা দেখিয়ে সে বললো - এগুলো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, তবে আরো ছোটো।
বিন্তী আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি ইংরেজীও বলতে পারো?
বললাম, হ্যাঁ পারি, তুমিও তো পারো।
সে বললো, আমি পারি না।
বললাম, একটু একটু তো পারো!
কিছু না বলে টুনটুনি বিন্তী অন্যদিকে চলে গেল।
আমি দোকানের একেবারে সামনের সারিতে রাখা একটা ছোটো সাইজের ময়লার বাস্কেট কিনলাম। কাউন্টারে দেখি বিন্তী দাঁড়িয়ে, পেশাদার সেলসপারসনের মতো জিজ্ঞেস করলো, 'এটা কিনেছ?'
বললাম, হ্যাঁ।
দোকানে রাখা বড় ললিপপ সাইজের শোপিস হাতে নিয়ে সে নাড়ছে আর জিজ্ঞেস করছে, এটা কী?
কাউন্টারের লোকটি বলছে - ললিপপ দেখোনি কখনো? খাওনি?
তখন পাশ থেকে মহিলা, সম্ভবত বিন্তীর মা, বিন্তীকে ধমক দিচ্ছে, 'এঅ্যাই এতো কথা ব-লে-না।'
দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। মনে হলো - এ শহরে অনেকদিন পরে একজন অচেনা মানুষ এমন মিষ্টি করে কথা বললো। পিচ্চি বিন্তী টুনটুনিকে দেবশিশু মনে হলো।
ইদানিং কোনো কিছুতে আক্রান্ত হইনা।
আনন্দিত-বিষ্মিত-ক্ষুব্ধ-শোকাহত হওয়ার মাত্রা কমে গেছে। চারপাশে নষ্ট হচ্ছে সব, ভেঙে পড়ছে ভবন-বিশ্বাস-সম্পর্ক-আস্থা। সব কিছু নিয়ে হতাশ হচ্ছি। দিন দিন নৈরাশ্যে ডুবছি। স্বার্থপর হচ্ছি। নিজের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ।
হেড ফোনে শুনছিলাম অনুপম রায়ের চমৎকার একটি গান -
তুমি জানতে জানতে জানতে - জানতে বোধহয়
আর মায়াহীন পশ্চিম, আসন্ন অন্তিম -
শিথিল হচ্ছে স্নায়ু
তার আঁধারের সঞ্চয়, অনিবার্য যত ক্ষয়
সূর্য তোমার কমছে আয়ু।
তুমি নামতে নামতে নামতে থামবে কোথায়?