পারমিতার একদিন : সম্পর্ক এবং আশ্রয়হীনতার ছবি
একই ঘর এবং সংসারে বাস করেও মানুষ দিন শেষে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। যখন আয়নায় মুখোমুখি তাকিয়ে কেবল নিজের সঙ্গেই কথা বলা লাগে। মনে হয় – এর বাইরেও অন্য কোথাও সঙ্গোপন টানাপড়েন রয়ে গেছে। অঞ্জন দত্তের গানে যেমন, ‘চারটে দেয়াল মানে নয়তো ঘর, নিজের ঘরে অনেক মানুষ পর’। তেমন করেই, নিজের ঘরে পর হয়ে ওঠা মানুষগুলো তাই ক্রমশঃ আশ্রয় খোঁজে অন্য কোথাও।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে, মেল শভিনিস্ট স্বামী কিংবা মাতাল সন্তান নিয়ে পারমিতার শাশুড়ী যেমন আশ্রয় খোঁজে, আরো অতীত – আরো গোপন অথচ ভালোবাসার মানুষটির কাছে। জীবনের পৌঁণিক প্রান্তে এসে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, তাই প্রশ্নহীন উত্তরহীন থাকে সম্পর্কের ধরণ। নিজের এই ব্যক্তিগত দূর্বলতাই হয়তো শাশুড়ীকে বৌয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে, অথবা দুজনেরই শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানের কারণে কোথাও মিল খুঁজে পায় দুজনে। কিন্তু, নিজের ঘরে পর হয়ে যাওয়া দুজন আসলেই কি সমান্তরাল জীবনে চলতে পারে? কিংবা চললেই বা কতোটুকু? ‘পারমিতার একদিন’ দেখতে গিয়ে এ প্রশ্নই বারবার জেগে উঠেছে। উত্তর জানার চেষ্টা ছিলো - পারমিতার স্মৃতিমন্থনে।
একটি শোকের বাড়িতে পারমিতার আগমন, চারপাশের জটিল মানুষের ফিসফাস, হুট করে অতীত এবং আবার বর্তমান; এভাবেই ছবি এগিয়েছে। সরলরৈখিকভাবে ভাবলে – তেমন চমকের কিছু নেই। কিন্তু, অতীত বর্তমানের মিশ্রণে দর্শককে অপেক্ষা করতে হয়েছে, কখনো দীর্ঘশ্বাসে – কখনো আশায়। পারমিতার দ্বিতীয় জীবনে পা রাখার পেছনের ঘটনা জানার আগ্রহই ছিলো অপেক্ষার মূল বিন্দু। প্রথম জীবনের সঙ্গে সম্পর্কছিন্নের গল্প প্রলম্বিত হয়নি, জটিলতার ছিলো অনেক কিছু – থাকতেও পারতো। কিন্তু, সম্পর্কের সুতোয় টান পড়ে যাওয়া মানুষগুলো একে অন্যকে আর ধরে রাখতে পারে না। খটকা যা লেগেছে তা ঐ দ্বিতীয় জীবনের সম্পর্ক নির্মাণের দ্রুততা। দর্শক হিসেবে মনে হয় – এ পরিচালক কিংবা কাহিনীকারের তাড়াহুড়া। অবশ্য না জেনেও ক্ষতি হয়নি খুব বেশি। গৃহবধু পারুর চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থার পারমিতা অনেক বেশি প্রত্যাশিতই মনে হয়।
নামের সঙ্গে মিল রেখেই মূল কাহিনী একদিনের, কিংবা কয়েক ঘন্টার। ক্ষণে ক্ষণে অতীত-বর্তমানের দৃশ্যপট। শেষ ভাগে – পারমিতা এবং মনুকাকা যখন ঐ বাড়ির গেট পেরিয়ে এলো, তখন মনে হয়- এ দুজনের কখনো আর এখানে আসা হবে না। পারষ্পরিক আশ্রয়হীনতার যে সম্পর্ক ছিলো তারও সমাপ্তি হলো। কিন্তু জীবনের গল্পের সমাপ্তি কি হয়? মন হয় - ‘বিপুল তরঙ্গরে...’ গানের মতো করেই পারমিতা ও বাকী মানুষগুলো হয়তো নতুনভাবে আশ্রয় খুঁজবে অন্য কোথাও...।
.
.
.