ছাদের কার্ণিশে কাক - (শেষ পর্ব)
ইউএনডিপি-তে চাকরীটা হয়ে যাবে সরণ কল্পনাও করেনি। সিটিসেলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেতন। এক বছরের কন্ট্রাক্ট শেষ করে সরণ যখন পার্মানেন্ট হলো তখন তার জন্য অফিস থেকে গাড়ী। বছরে দু'য়েকবার দেশের বাইরে কনফারেন্সে অফিস ট্যুর। ভীষণ ব্যস্ত সময়। সকাল আটটায় অফিস যাওয়া, ফিরতে ফিরতে রাত। কখনো রাত দশটা। ব্যস্ততায় সময় চলে যায় দ্রুত। মাঝে মাঝে কাক দেখলে কী যেন মনে পড়ে যায়। সরণের মনে হয় - ব্রেনের স্মৃতি কোষের কোনো একটা অংশ জেগে উঠতে চায়। অথচ ঐ অংশটা সরণ অনেকদিন যাবত ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। সরণ বিশ্বাস করে - অনেকটা সময় পেরিয়ে এ স্মৃতিগুলো মারা যাবে একদিন। কেবল সময়ের অপেক্ষা, পলাতক সময়!
।
।
।
।
।
জয়া এ নিয়ে পাঁচবার ডাক দিলো।
দরজার কাছে এসে বলে গেছে - টেবিলে নাশতা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, এক্ষুণি এসো।
সরণ প্রতিবারই 'এইতো, এক্ষুণি আসছি' বলে কম্পিউটারের মনিটরে তাকিয়ে থাকে।
জয়া ডায়নিং টেবিলে নিজে নিজে বকে চলেছে - 'বিয়ের পর দু'বছরে ছুটির দিনে বাসায় ছিলে কয়দিন? প্রত্যেক শুক্রবারেই তো ঐ অফিসে যেতে হয় তোমাকে। চেয়ার টেবিল মুছতে হয় কিনা কে জানে! আজ বাসায় আছো, তা-ও মেইল চেক করছো ঘন্টার উপরে---।'
অন্য সময় হলে সরণ এক দৌড়ে ডায়নিংয়ে গিয়ে বসতো।
আজ সে উঠছে না।
আজ অনেকদিন পর বেলা মেইল করেছে।
হাই,
কেমন আছেন? চিনতে পেরেছেন? আমি বেলা। বেলা বোস অথবা ঋতু রায়। প্রায় পাঁচ বছর পর আপনাকে লিখছি। আপনি অনুরোধ করেছিলেন, কখনো যেন আপনাকে মেইল না করি। আমি জানি, আমার ঐ সময়কার ছেলেমানুষীতে আপনি ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলেন। আজ এতোদিন পর এসে মনে হলো - আমার ক্ষমা চাওয়ার সময় এসেছে। কী, ক্ষমা করবেন না?
আমি জানি না, আপনি কোথায় আছেন। হয়তো এতোদিনে পুরোদস্তুর সংসারী মানুষ। - - - আমরা গত একবছর ধরে কংগোতে আছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সাফকাত বাংলাদেশ টীমের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার। আরো তিন-চার বছর এখানে থাকতে হবে। পরিচিত সবাইকে ছেড়ে এখানে একদম ভালো লাগছে না। সরণকেও নেক্সট ইয়ারে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে, এখানে ভালো স্কুল নেই। ওহ! আপনাকে বলা হয়নি, আমাদের ছেলের নাম - সরণ। আপনার মতো একজন ভালো বন্ধুর স্মৃতিকে ধরে রাখতেই ওর নাম সরণ রেখেছি। অনেকটা নাটক সিনেমার মতো। হি হি হি।
আপনার খবর পেতে খুব ইচ্ছে করছে। মেইল করবেন কিনা জানি না। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। 'বন্ধু সবুজ চিরদিন'।
< বেলা >
।
।
।
নাস্তার টেবিলে সরণ বারবার অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ে।
জয়া জিজ্ঞেস করে - কী ব্যাপার কোন সমস্যা হয়েছে?
- না।
- অফিসের কোনো সমস্যা?
- না।
সরণ নির্লিপ্ত।
অনেক এলোমেলো ভাবনা মনে ভীড় করছে আজ।
কাক-সরণ-কাক মনে পড়ছে।
অনেক চেষ্টা করেও বেলার মেইল জমানো সেই ফাইলের পাসওয়ার্ড মনে পড়ছে না।
মনে পড়ছে অনেক কিছু - - -।
(শেষ)
4 মন্তব্য::
একটানা সব পড়লাম...শেষের দিকে পড়ে সিরিয়াসলি মেজাজ খ্রাপ হইসে!!! গ্রররররর...
ওদের দু'জনের মিল হইলে কী প্রব ছিল? হাহ!!
যাই হোক, সব মিলিয়ে অনেক্কক্কক্ক ভালো লাগছে...তবে মেয়েটা একটু বেশি বোকা টাইপের... :P
--- তারানা।
তারানা,
আসলেই তো! কী প্রব ছিল?
মিল না হলেও প্রব কি হলো? ;)
"জীবন বহিয়া যায়"...
সময় করে পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রায় তিন/চার বছর আগে ব্লগে ধারাবাহিকভাবে লেখা এ সিরিজ এতোদিন পরেও কেউ পড়ছেন, জানলে অন্যরকম ভালো লাগা ভর করে...।
ভাল থাকবেন।
ভাইয়া এক বৈঠকে সব পড়লাম। অনেক ভাল লাগল।
সায়ন, জেনে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন।
Post a Comment