দ্বীনের পর দ্বীন
ইদানিং ঢাকায় শীত পড়েছে।
সাথে বৃষ্টি।
টিপ টিপ টিপ।
গতকাল পহেলা ফাগুন ছিল।
এমন সময়ে বৃষ্টি হওয়া তেমন স্বাভাবিক না।
লাভ-ক্ষতি রোডের অফিসে বসে মুইন ভাবছিল জীবনের বছরগুলো কতো দ্রুতই না চলে যায়। কানের লতির কাছে আনা ট্রেন্ডি জুলফিতে আঙুল বোলাতে বোলাতে কতো কথা মনে পড়ে যায়। ল্যাপটপে গান বাজছিল -
"প্রেম নদীতে ঝাপ দিও না
সই গো সাতার না জেনে,
তুমি প্রাণে নাহি বাঁচিবা,
ডুবিয়া মরিবা ভাসিয়া যাইবা
শেষে স্রোতের তোড়ে"।
শিরিনের পাঞ্জাবিঅলা।
কুক জোশেফ পরশু নন্দন থেকে তরমুজ কিনেছে।
মুইন ভাবছিল তরমুজের জুস খাওয়া যায়।
বরফকুচি দিয়ে তরমুজের জুসে চুমুক দিয়ে ১২৮ পৃষ্ঠার হায়হায়রাত পড়া যেতে পারে।
ঠিক তখনি মোবাইলে নীলার ফোন
- হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন
- সেম টু ইউ।
- কি করছো?
- শিরিনের গান শুনি। ভাবছি তরমুজের জুস খাবো একটু পরে।
- ঠান্ডা পড়েছে কিন্তু বেশ।
- হুমম, গলাটাও বসে গেছে। তুমি কি করছো?
- কিছু করছি না, বাসায় পিয়াকে পাহারা দিচ্ছি আজ।
- কেন পাহারা দেয়ার কি হলো?
- আর বলো না, ইদানিং ছেলেদের সাথে বেশি বন্ধুত্ব তার। আজ আবার ভ্যালেন্টাইন ডে, কোথায় কি অঘটন ঘটিয়ে বসে - - -
- ও-নো-ও, গিভ হার ফৃডম।
- আরে না, পাগল নাকি? তুমি হায়হায়রাতে কি সব উল্টা পাল্টা গল্প লিখো। ছেলেপেলের মাথা খেয়েছো।
মুইনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বলতে ইচ্ছে করে - 'তুমি প্রাণে নাহি বাচিবা, ডুবিয়া মরিবা'।
মুইন প্রসংগ ঘুরিয়ে বলে - 'একরাম কোথায়?'
- অফিসে গেছে।
- বইমেলায় গিয়েছিলে এবার?
- এখনো যাইনি। দেখি একুশের পরে একবার - - -। রাজনীতি নিয়ে কি ভাবছো? ইলেকশন হবে?
মুইনের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ল্যাপটপের স্কৃনসেভারে বেগম সাহেবা আর ছোটসাহেবের ছবি। কতোদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই। এবার দুই ঈদে সালাম করা হলো না। সালামীও পাওয়া গেলো না। এসব ভাবনার মাঝে মুইন বলে - 'রাজনীতি বাদ দাও। রান্নার কি খবর? আজ ভ্যালেন্টাইন মেনু কি?'
নীলা তড়পড়িয়ে ওঠে - 'ভালো কথা মনে করেছো, চুলায় খিচুড়ি দিয়ে এসেছি। একরাম আজ বাসায় লাঞ্চ করবে। এখন রাখি।'
মুইনের রাখতে ইচ্ছে করে না।
শেষ বয়সে ব্যবসাপাতির সব কিছু ক্যামন যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। মুইন নীলাকে বলে - 'তোমার কাছে ফাগুন চেয়েছে কৃষ্ণচূড়া। একটা জোকস শুনবে?'
নীলা বিরক্ত হয় - 'ভাড়ামি ছাড়ো। এক পা কবরে গেছে, এবার আল্লা-খোদার নাম নাও'। খটাস করে ফোন রেখে দেয়।
মুইনের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।
প্রেম পীরিতের এমন হাল, কত ধানে কত চাল।
অ্যাপয়ন্টমেন্ট ডায়েরীতে দেখে সন্ধ্যায় ইটিয়েন চ্যানেলে লাইভ শো। বিশেষ ভ্যালেন্টাইন প্রোগ্রাম। কী বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতে মুইনের ঝিমুনি আসে।
বিশাল সিংহাসনে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন বসে আছে। সামনে জমায়েত অসংখ্য তরুণ-তরুণী। মুইনের হাত পেছনে বাধা। সমবেত মানুষের চিৎকারে মনে হচ্ছে কানের পর্দা ফেটে যাবে। পাশের দুজন রক্ষী মুইনকে সামনে নিয়ে যায়। লম্বা চুলের একজন আইনজীবি মুইনকে জেরা করে - 'আপনি অস্বীকার করবেন, আপনি এসব ছেলেপেলের মাথা খারাপ করেন নি?'
মুইন নিশ্চুপ।
আইলাভইউ টি-শার্ট পরা একজন তরুণ চিৎকার দেয় - 'এই লোকটি আমাদের ভুল ভালোবাসা শিখিয়েছে।'
আরেকজন তরুণী এগিয়ে আসে - 'এই লোকটি একজন কিশোরীকে অহেতূক রমনী ভাবতে শিখিয়েছে। '
একজন সৌম্য অধ্যাপক আওয়াজ তোলেন - 'সমাজ বিনির্মানের নামে এই লোকটি সামাজিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করেছে।'
এবার মানুষ চেনা যায় না। চারপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে - "এই লোকটি পরকীয়া প্রমোট করেছে। এই লোকটির আয়োজন অনাকাঙ্খিত প্ররোচনা শিখিয়েছে। এই লোকটি দিনের পর দিন - - -"
এরকম চিৎকার অসহ্য হয়ে উঠলে ঘুম ভেঙে যায়। ঝিমুতে ঝিমুতে মুইনের ঘুম পেয়েছিল খুব। আবার ফোন বাজে - 'মুইন সাহেব বলছেন?'
- ইয়েস
- আমি বাংলাভাই বলছি জান্নাতুল ফেরদাউস থেকে, হায়হায়রাতে এসব কী ছাপাইছেন ভাই। মানুষকে দ্বীনের পথ থেকে সরানোর এ চেষ্টা থামাবেন কবে?
রিসিভার ধরে মুইন কাপতে থাকে।
একে দু:স্বপ্ন, তার উপর এই ফোনালাপ। মুইনের গলা শুকিয়ে যায়।
তরমুজ-জুসের তৃষ্ণাটা জেগে ওঠে আবার।
মুইন তাড়াতাড়ি ল্যাপটপে টাইপ শুরু করে - 'দ্বীনের পর দ্বীন'।
(কাল্পনিক)
.
.
.