ছাদের কার্ণিশে কাক - ০১
মাঝে মাঝে মনে হয় - জীবন যেন অনেকগুলো পাসওয়ার্ডে আঁটকে আছে। ইয়াহুর দু'টা, হটমেইলের একটা, জি-মেইলের একটা, ইন্টারনেট লগ ইনের একটা; এরকম অনেকগুলো পাসওয়ার্ড। সিক্যুরিটির জন্য সব আলাদা আলাদা। অনেকদিন পর ইয়াহু চ্যাটে ঢুকতে গিয়ে পাসওয়ার্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। শেষে মিললো - 'আকাশনীলা'। সরণের পাসওয়ার্ডগুলো এরকম। সব বাংলায়, কেউ অনুমান করতে পারবে না। এই যেমন 'আকাশনীলা' লিখতে গিয়ে শেষে এ দিতে হবে দু'টা!
ইয়াহু চ্যাটের বাংলাদেশ রূমগুলো জমজমাট। খালি নেই। সতের নম্বর রূমে ঢুকে সরণ অবাক হয়ে যায়। রনি ফোরটুয়েন্টি নামে একজন অনবরত গালি দিয়ে যাচ্ছে, নি:শ্বাসও ফেলছে না। রনি ফোরটুয়েন্টির স্ল্যাং স্টক দেখে সরণের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পর মাইক পাল্টায়। এবার মাইক নেয় বল্টু১২৩। তার টার্গেট রনি ফোরটুয়েন্টি এবং তার পরিবারের সদস্যরা। বল্টু১২৩ এর পূর্বপুরুষ নি:সন্দেহে বাসে করে মলম বেচতো, বল্টু১২৩ একটানা গালি দিচ্ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিকও ছেড়েছে। সরণের অস্বস্তি লাগে।
৩৫ নম্বর রূমে ভিজিটর কম, ১৮ জন। ওখানে ঢুকে দেখে একজন অডিও গান ছেড়ে রেখেছে - "রাতের তারার মতো একদিন নীরবে অন্ধকারে যাবো ঝরে/আমার সকল গান তবুও তোমাকে লক্ষ্য করে"। সানী জুবায়েরের গান। সরণ চোখ বুঁজে শুনে। এ গান নিয়ে মজার একটি স্মৃতি আছে। একদিন রিক্সা করে মহাখালী থেকে কাকলী মোড়ে এসে নামলো সে। সীলের পাশে রিক্সা থামলো। খাঁ খাঁ দুপুর, রাস্তা কেমন যেন খালি। হঠাৎ মনে হলো অনেক দূর থেকে অদ্ভুত এক গান ভেসে আসছে। ডানে একটু এগিয়ে অনুমান করে আবুল উলিয়া মিউজিক কালেকশনস থেকে আসছে এ গান। দোকানে গিয়ে জানতে পারে - শিল্পীর নাম সানী জুবায়ের, এলবাম - নির্জন স্বাক্ষর। সিডি কিনে, বাসায় ফিরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাকী গানগুলো শুনেছে সে।
চ্যাটরূমে সানি জুবায়েরের গান শেষ হলে, কেউ একজন হিন্দি গান শুরু করে। 'ম্যায় হু কন? ম্যায় হু কন? ম্যায় হু ডন ডন ডন'।
বিরক্তি লাগে।
জুলিস নামে একজনকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। বয়স ১৮, ফিমেল, লোকেশন লাস ভেগাস।
নক করতেই অটোমেটিক মেসেজ আসা শুরু হলো, লিংক দেখো, ওয়েব ক্যাম - - -। সরণ ইগনোর করে।
গোলাপকাঁটা নামের একজন কে দেখা যাচ্ছে। সরণ নক করে।
সরণ: হাই! এ এস এল প্লিজ!
গোলাপকাঁটা: য়্যু ফার্স্ট।
সরণ: ২৫,এম, ঢাকা
গোলাপকাঁটা: সেম হিয়ার, গেট লস্ট
সরণ: হোয়াট'স আপ?
গোলাপকাঁটা: আয়্যাম নট গে!
সরণ ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
৪৩ নম্বর রূমে মাত্র একজন। সরণ ওখানে যায়।
বেলা।
সরণ নক করে - : এটা কী টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন?
মিনিট খানেক পার হয়ে যায়, আওয়াজ নেই।
সরণ 'বাজ' দেয়।
বেলা: কী সমস্যা?
সরণ: এটা কী টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন?
বেলা: জ্বী না, এটা বেলা বোসের বাসা না।
সরণ: তাহলে কার বাসা? আপনি কোন বেলা?
বেলা: আপনি কী চাকরী পেয়েছেন যে বেলাকে জানাবেন?
সরণ: পেলে তো অবশ্যই জানাবো, আপনি কোন বেলা?
বেলা: আমি কোনো বেলা না
সরণ: তাহলে? বেলা বিস্কুট?
বেলা: :-), আপনি চিটাগাংয়ের লোক?
সরণ: না, আমার বন্ধুর বাড়ী চিটাগাং, ওদের বাসায় বেলা বিস্কুট খেয়েছি।
বেলা: আপনাদের বাড়ী কোথায়?
সরণ: বাংলাদেশে।
বেলা: :-) বাংলাদেশের কোন জায়গায়?
সরণ: ছোট এই দেশে এতো ভাগ কেন? ধরেন আমরা একই শহরে।
বেলা: ওকে
সরণ: :-/
বেলা: আজকে যেতে হবে, পরে কথা হবে।
সরণ: মে আই অ্যাড ইউ?
বেলা: আমি ইনভাইটেশন পাঠাচ্ছি।
একটু পর ইনভাইটেশন পেয়ে সরণ মেজেঞ্জার লিস্টে যোগ করে; বেলা।
(???চলবে???)
.
.
.