26 August, 2012

জিপির সিক্রেট প্ল্যান ফর অ্যা সারপ্রাইজ

একটি গল্প-
রাজশাহীর বাঘা থানার গাঁওতলী গ্রামে মাত্র সকাল হয়েছে।
গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কোলাহল নেই, শিশুদের হৈ-হুল্লোড় ছুটোছুটি নেই। কারণ, দু'দিন পরে ঈদ, স্কুল বন্ধ। আসন্ন উৎসবের নির্জন প্রস্তুতির সকালে হর্ণ বাজিয়ে, ধুলো উড়িয়ে গ্রামে আসে সাদা রঙের মাইক্রোবাস।
উৎসুক জোড়া জোড়া গ্রাম্য সরল চোখ যখন বাড়িগুলোর উঠোন পেরিয়ে, বাংলা ঘরের সামনে দিয়ে কালামের চায়ের দোকানের দিকে যায়, তখন সবাই দেখে তালুকদার বাড়ির শহুরে বৌ-নাতির গাড়ি নয়, অচেনা মানুষের গাড়ি থামে এসে - সিরাজুল ইসলামের ভাঙা ঘরের সামনে। সিরাজুল ইসলাম গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়, স্কুলের মাস্টার নয়, মেম্বার চেয়ারম্যানও নয়, এমনকি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনও নয়। সিরাজুল ইসলাম কাজ করে ঢাকা শহরে, ছয়-সাত মাসে বাড়ি আসে, দু'তিন মাসে টাকা পাঠায়। সব ঈদে বাড়িও আসে না। ঘরে তার বৌ,  তিন সন্তানের দুই মেয়ে যারা ক্লাস এইটে ও সিক্সে পড়ে যথাক্রমে, ছোটজন ছেলে - ক্লাস থ্রির ছাত্র। ঘরে আরও আছে সিরাজুল ইসলামের বৃদ্ধা মা, যিনি চোখে তেমন কিছুই দেখেন না।
গাড়ি থেকে নেমে আসে, ফর্সা ফর্সা টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো, দুজন তরুণ-তরুণী। সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা হাতে লম্বা চুলের যুবক।
তরুণ-তরুণী জানায় তারা গ্রামীণ ফোনের পক্ষ থেকে এসেছে, তাদের মাথায় গ্রামীণ ফোনের ক্যাপ। চারপাশে সমবেত জনগণ দেখে সাদা মাইক্রোবাসেও গ্রামীণফোনের চিহ্ন।
জানা যায়, ঢাকায় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে গ্রামীণফোন যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে - গত বছরের মত এবছরও সে বাড়ি আসতে পারবে না। তাই সিরাজুলের পরিবারকে গ্রামীণফোন ঢাকা নিয়ে যাবে। তখন ক্যামেরার সামনে আগত তরুণী বলে যাচ্ছে, "Grameenphone takes up a secret plan for a surprise...!" ব্যাকগ্রাউন্ডে চমকিত সারপ্রাইজড  সিরাজুল-পরিবার।
সিরাজুলের দুই মেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত। কারণ, পাশের বাড়ির দত্তকাকাদের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে তারা গ্রামীণফোনের এমন বিজ্ঞাপন দেখেছে। কিন্তু, কখনো ভাবেনি তাদের জীবনে এমন সৌভাগ্য নেমে আসবে!
সমবেত গ্রামবাসীদের কেউ কেউ সিরাজুল-পরিবারের এমন সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হয়। কেউবা ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে থাকার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে, যদি টিভিতে নিজেকে দেখা যায়!
ঘটনা দীর্ঘ হয়নি।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে তারা সাদা মাইক্রোবাসে উঠে বসে, টেলিভিশনে দেখা বিজ্ঞাপনের মতো। মূল রাস্তায় উঠতেই আবার ক্যামেরা চালু হয় - "সিরাজুলকে না জানিয়ে আমরা তার পরিবারকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি একত্রে ঈদ পালনে..."
না।
সে গাড়ি ঢাকা যায়নি।
সিরাজুলের পরিবার ঢাকায় পৌঁছেনি। লোকগুলো গ্রামীণফোনের কেউ ছিল না। কোনো পত্রিকায় তাদের পাচার হওয়ার খবর আসেনি।
সিরাজুলের মায়ের মতো গ্রামের সবাই ভেবেছে, শহরে সিরাজুলের কাছে ভালোই আছে তার পরিবার। ওদিকে সিরাজুল ভেবেছে - তার পরিবার গ্রামেই আছে।
হয়তো, কোনো এক নিষিদ্ধ জগতে সিরাজুলের স্ত্রী-কন্যাদের সামনে আরেকবার ক্যামেরা ধরবে, হিউম্যান রাইটসের ডকু নির্মাতারা-  লাইফ ইন ব্রথেল কিংবা সেক্স ট্রেড শিরোনামে।

গল্প এখানেই শেষ।

বাস্তবতা হলো-
প্রিয় পাঠক, গল্পটি সত্য হয়ে যেতে পারে। শুধু গাঁওতলীতে নয়, এমন ঘটতে পারে - আরো বিশটি গ্রাম, বিশটি পরিবারে।
প্রতারণার পন্থাটা শিখিয়ে দিয়েছে গ্রামীণফোন।
দেখুন, এবারের ঈদে প্রচারিত গ্রামীণফোনের ৩টি বিজ্ঞাপন-



_

_


গ্রামীণফোন বলছে-
"The spirit of Eid creates a magic of closeness as we unite with our families. However there are a few who have a huge responsibility to serve us even during Eid Day. Although they cannot be together with their near & dear ones, Grameenphone takes up a secret plan for a surprise...!"

0 মন্তব্য::

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP