সকাল বেলার খিদে: কী আশায় বাঁধি খেলাঘর
এসবই তোমার সকাল বেলার খিদে, সন্ধ্যে বেলা যাবে ফুরিয়ে, দেখতে দেখতে আরো একটা দিন চলে যাবে – জীবন থেকে যাবে হারিয়ে: হ্যাঁ অঞ্জন দত্তের গান। সংবাদপত্রের নানান খবর – সঙ্গতি – অসঙ্গতি নিয়ে ব্লগে সকাল বেলার খিদে প্রথম লিখি দুই বছর আগে, দ্বিতীয় পর্ব লিখি তারও এক বছর পরে। আজ অনেকদিন পরে তৃতীয় বারের মতো সকাল বেলার খিদে সিরিজে লিখতে গিয়ে দেখি, বাংলা সংবাদপত্র এখন আর সকাল বেলার খিদে নেই, অনেকটা বিকেলের নাশতা হয়ে গেছে। উত্তর আমেরিকা আসার পর থেকে - দুপুরের খাবারের পর থেকে মন উসখুশ করে, কখন ওয়েবে বাংলা পত্রিকা আপডেট হবে – তার অপেক্ষা। চায়ের তৃষ্ণার মতো ভীষণ তীব্র এ অপেক্ষা !
কোনটা খবর হবে আর কোনটা হবে না – এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। গত সপ্তায় একটি বাংলা দৈনিকের সম্পাদক কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন, আমেরিকার এক হাসপাতালে কন্যার জন্ম হয়েছে। এমন সময়ে স্ত্রী-কন্যার পাশে তিনি থাকতে পারেননি। দেশে বসে তিনি খবরটি শিরোনাম করেছেন তার পত্রিকার প্রথম পাতায়। দোয়া চেয়েছেন পাঠকের কাছে। তবে পাঠক বড়ো বেশি দুষ্টু। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে খবরের সাথে মন্তব্য যোগ করার জায়গায় ইচ্ছেমতো ঝেড়ে এসেছে দলে দলে। পরদিন সম্পাদক অন্য কোনো বিবৃতি দিয়েছিলেন কিনা জানার সুযোগ হয়নি।
থাক, সে প্রসঙ্গ থাক।
আগের সংবাদ অনেকটা বাসী টোস্ট বিস্কুটের মতো অখাদ্য মনে হতে পারে। বরং আজ শুরুতেই রূপচানের খবরটির দিকে তাকাই। মনে হয় এ যেনো রূপকথার রূপচান। বেঙ্গল প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বৃষ্টিভেজা দিনে রিক্সা করে নীলক্ষেত নামার সময় আড়াই লাখ টাকার প্যাকেট ভুলে ফেলে যায়। এত টাকা হারানোর পরেও তার অফিসের এমডি তাকে বরখাস্ত করেনি, বরং “তিনি জাহাঙ্গীরকে দুশ্চিন্তা না করে অফিসে যেতে বলেন। ঝামেলা এড়াতে থানা পুলিশও করতে রাজি হননি তিনি।” এই আড়াই লাখ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছিলো রিক্সাচালক রূপচান। এতো টাকা পেয়েও সে লোভে পড়েনি। সোজা গেছে থানায়। থানার লোকজনও এতো টাকা পেয়ে বেহাত করার কুচিন্তা মাথায় আনেনি। খবর দিয়েছে টিভি চ্যানেলে। সেই খবর দেখে টাকার আসল মালিক থানায় যোগাযোগ করেছে। আসল মালিক টাকা পেয়ে রূপচানকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে পুরষ্কার, আর সাথে পুলিশ কমিশনার দিয়েছে আরো ৫ হাজার।
৫৫ হাজার টাকা রূপচানের জীবন পালটে না দিলেও কিছুটা স্বচ্ছলতা দেবে, এমনটাই আশা রাখি। ওদিকে টেলিফোনে মিছে প্রেমের অভিনয় করে জনৈক শাহীনকে প্রতিপক্ষ ডাকাত দলের হাতে তুলে দিয়ে অপহরণের মামলায় আঁটক হয়েছে – ইয়াসমিন। পুলিসকে ইয়াসমিন বলেছে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে সে টেলিফোনে শাহীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিলো। কিন্তু চরমপন্থী সালাম ডাকাত গ্রুপ তাকে কোনো টাকা তো দেয়ইনি, উলটা সে এখন পুলিসের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি। শাহীনকে উদ্ধার করা হয়েছে পাবনা থেকে।
পরিস্থিতি আসলেই ব্যাপক চিন্তার। অনামিকা-নীলাঞ্জনাদের ফোনকল মিসকলে রাত বারোটার পরে ২৫ পয়সা মিনিটের কলে এখন সতর্ক থাকতে হবে!
বাজার পরিস্থিতিও খারাপের দিকে। বাড়ছে পানির দাম। গ্যাসের দাম।
কাঁচা মরিচের ঝাল বেড়ে গেছে মারাত্মক। প্রতি কেজির দাম দু’শ টাকা। আগামী কয়েক সপ্তায় জিনিশপত্রের দাম আরো বাড়বে নিশ্চয়। কারণ আর কিছু নয় – অশেষ নেকী হাসিলের সঙ্গে সঙ্গে বরকতময় মুনাফা লাভের মাস রমজান আসতে আর দেরী নেই। পাঁচতারার ঝলমলে ইফতার পার্টিও চলবে নিশ্চয়। ইফতার পার্টির নামে লুটপাটে ফেঁসে যাচ্ছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার। খবরে প্রকাশ - এক ইফতার পার্টিতেই ২ হাজার ২০০ জনের আয়োজন করে বিল তোলা হয় ৩ হাজার ৯৯১ জনের। ইফতার বাবদ বিল দেওয়া হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫০ টাকা।
আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আশার কমতি নেই। সঙ্গে যোগ হচ্ছে নানান অত্যাশা। আশরাফুলের ৫০ তম টেস্ট, সাকিবের প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব, আর মাশরাফি বলছে – ‘আমাদেরই সিরিজ জেতা উচিত’। ওদিকে এক জনমত জরিপে ৭৪ভাগ পাঠক বলছে – বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বর্তমান সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে না। তবুও শুভকামনা - বাংলাদেশ।
শুরুতে রূপচানের খবরে যতোটা বিমোহিত হলাম, তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত হলাম মধ্যযুগীয় আরেক বিচার ব্যবস্থায়। মোবাইল চুরির অভিযোগে ১৫ বছর বয়েসী মিরু বেপারীর শাস্তি কার্যকর হয়েছে। খুব সাদামাটা শাস্তি – দুটি চোখ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে আর নগদ জরিমানা ৩০ হাজার টাকা। প্রথম আলোর রিপোর্টে ফরিদপুর থেকে অজয় দাশ জানাচ্ছে – সমাজপতিদের এ রায় কার্যকর করার দায়িত্ব ছিলো মিরু বেপারীর বাবা সুলতান বেপারীর হাতে। নয়তো বাবা-ছেলে দুজনেরই চোখ তুলে নেয়ার হুমকি ছিলো।
বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে শালিসী ব্যবস্থা কতোটুকু আইনসিদ্ধ কিংবা বৈধ – সে ব্যাপারে আমি জানতে ইচ্ছুক। কোনো সচল জেনে থাকলে – জানাবেন দয়া করে...।
---
প্রতিদিন পত্রিকায় ভেতর পাতা বাহির পাতা পড়ার সময় একটি খবরে চোখ বুলাই। প্রসঙ্গঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। হিমু ভাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মাস ভিত্তিক ক্যালেন্ডার করছিলেন। অনেকদিন পত্রিকায় এ প্রসঙ্গে কোনো খবর চোখে পড়ে না। সরকারও চুপ হয়ে গেছে। তবে আজ দৈনিক আমাদের সময়ে চোখ আঁটকালো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ তার প্রতিবাদের রাস্তায় নামবে – এমন হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মূসলিম সংগঠন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মূনা)। এ খবর গত পরশু ছাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলোর অন্যতম ওয়াশিংটন টাইমস। সাংবাদিক চেসি ফ্লেমিং লিখিত ‘বাংলাদেশ প্রোবস টার্গেটস ৭১ ফোজ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে মুনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে এলেই কংগ্রেসের সদস্য এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট/হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করে থাকে এই সংগঠনটি।
মূনার কার্যক্রম আর বিচার প্রক্রিয়ার স্থবিরতা দেখে দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে হচ্ছে...।
0 মন্তব্য::
Post a Comment