25 September, 2008

এই এলিজি আমি লিখতে চাইনি

জানি না, কেনো মনে গেঁথে ছিলো সেই নাম, ‘মুহম্মদ’ বানানের ভিন্নতা নাকি আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসা পূর্ণাঙ্গ নামের জন্য, নাকি লেখার বিষয় – ভাষার বিন্যাস, আজ কিচ্ছু মনে নেই। শুধু মনে পড়ে – যুগান্তরে মুহম্মদ জুবায়ের’এর কলাম আমার নিত্যপাঠ্য হয়ে উঠেছিল সে সময়। আরও বছর পরে ব্লগে দেখি ‘চন্দ্রবিন্দুরা সব গেলো কোথায়?’, মন্তব্য-প্রতি মন্তব্য। এবং তার সূত্র ধরে ক্রমশঃ আপন হয়ে আসে মুহম্মদ জুবায়ের, আমাদের সহব্লগার জুবায়ের ভাই, প্রিয় জুবায়ের ভাই।

ব্লগে ২০ পর্বের একটি সিরিজ লিখেছিলাম একবার। সিরিয়াস পাঠক হয়ে জুবায়ের ভাই সব পর্ব পড়ে কমেন্ট করেছিলেন, দিয়েছিলেন আমার এ যাবতকালের ব্লগিংয়ে পাওয়া হীরন্ময় কিছু মন্তব্য। যেমন পেয়েছি, অনুগল্প সংকলন ‘দিয়াশলাই’ শেষে। বিনয় করে একেবারে শুরুতেই চেয়ে নিয়েছি ‘আপনি’র বদলে ‘তুমি’ সম্বোধন। ব্লগিং ইন্টারএকশনে বারবার বুঝেছি, বয়স-অভিজ্ঞতার-প্রজ্ঞার সীমানা পেরিয়ে এমন আপন হয়ে উঠেন খুব কম মানুষ, অথবা কেবল জুবায়ের ভাই। সে জন্যই সিরিয়াস পোস্ট কিংবা চটুল সিনেরিভিউতেও জুবায়ের ভাই সরব থাকতেন সবসময়।

আমার একটি ‘সংবেদনশীল বিষয়ের’ লেখা পড়ে জুবায়ের ভাই মনোকষ্ট পেয়েছিলেন, বলেছেন – এমনটা তিনি আশা করেননি। আমি দৃঢ় ছিলাম লেখার অবস্থানে, যেমনটি ছিলেন আরও প্রিয় কিছু মানুষ, তবুও সাহস পাইনি গিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে। কমেন্ট না করে পালিয়ে বেড়িয়েছি সচেতনভাবে। কারণ, তিনি জুবায়ের ভাই। উলটো আবদার জানিয়েছি নানান বিষয়ে, নানান ব্যস্ততায় দেখিনি সে আবদার পূরণ, তাই মেইলে লিংক দিয়ে বলেছেন – ‘তোমার ফরমায়েশে লেখা, আর তুমিই ক'দিন ধরে নিখোঁজ!’
অথবা পালটা মেইলে জবাব – ‘শিমুল, সালাম-টালাম পেলে নিজেকে খুব বুড়ো-বুড়ো লাগে। বয়সে যদিও বুড়োই, সেটা মনে রাখতে চাই না। হলে কী হবে, আজকাল শরীরও ঘন ঘন জানান দেয়।‘
হায়, সময়! লাল ম্যাপেল পাতার ভিসার দৌড়ে গিয়ে গিয়ে আমার আর কমেন্ট করা হলো না।

প্রিয় জুবায়ের ভাই,
ব্লগে দেয়া আপনার উপন্যাস ‘চুপকথা’ একটি সাপ্তাহিকের আর্কাইভে খুঁজে পেয়ে মেইল করার পর বলেছিলেন – ‘সম্পূর্ণটা যে কবে লিখে উঠতে পারবো জানি না। হয়তো এ জনমে হবেও না। কারণ, পুরনো লেখার কাছে ফিরে যাওয়া এবং বিশেষত তা নতুন করে লেখা খুব দুরূহ কাজ বলে আমার মনে হয়। তা ছাড়া, লেখাটার জন্যে আরো কিছু মাল-মশলা দরকার যা দেশে গিয়ে আমাকেই সংগ্রহ করতে হবে। অন্য কাউকে দিয়ে করা সম্ভব নয় এইজন্যে যে আমি ঠিক কী চাই তা বোঝাতেই পারবো না।

একই প্রসঙ্গে ব্লগে কমেন্টে বলেছিলেন, ‘দেরি হলেও 'চুপকথা'-বৃত্তান্তও খুঁজে পেয়েছো। এখন থেকে বলতে হবে 'শকুনচোখ, থুক্কু, শিমুল হইতে সাবধান'!’

জুবায়ের ভাই – আপনি কতোটা সাবধান থাকতে পারবেন জানি না। আমি কান্না শেষে এখন আরো ধারালো চোখে আপনাকে খুঁজবো। আমি খুঁজবো ব্লগের পাতায়, লেখায়-কমেন্টে, উপন্যাসের লাইনে – ‘আমাদের অমল’এ। আমার জি-মেইলে। আপনার কাছে আমার এখনো অনেক আবদার বাকী রয়ে গেছে। খিচুড়ির দাওয়াতের কথা, একসাথে কফি খাওয়ার কথা; আপনি কী করে ভুলে গেলেন! কী করে ভুলে গেলেন আপনার পা ছুঁয়ে আমার আশীর্বাদ নেয়ার স্বপ্ন?

আপনি জনম কীভাবে হিসেব করেন আমি জানি না। জানতে চাই না। আজ এই মুহুর্তে ভেজা চোখে, গলায় জমাট কান্নায়, অস্পষ্ট কী-বোর্ডে আঙুল টিপে বলি - আমি আপনাকে ঠিকই খুঁজে নেবো অন্য কোথাও, অন্য কোনো পাড়ে। অন্য জনমে। সেদিন আমি আপনার হাত ধরে কঠিনভাবে জিজ্ঞেস করবো, ‘কেনো আমাদের ছেড়ে এলেন আচমকা?’
তারপর আপনি খিচুড়ি নিয়ে আসবেন, আমি কফি বানাবো।
শুনতে চাইবো, না শোনা চুপকথা।

এইসব এলিজি বয়ান নয়,
জুবায়ের ভাই - আপনাকে খুব দরকার ছিলো আগামী দিনগুলোয়, আমাদের প্রয়োজনে।
এভাবে কি পালানো যায়?
কী করে পালাবেন আপনি! কোথায়!!!

.
.
.

0 মন্তব্য::

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP