23 July, 2008

মত প্রকাশঃ সুমন রহমান হয়তো গল্পই লিখতে চেয়েছিলেন

বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন সাইট দেখা যাচ্ছে না। ব্যাপারটি কারিগরী ত্রুটি নাকি কারিগরী রোধ, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো’র কলাম১ এ ছোট্ট নিউজ, এরপর একই পত্রিকায় ২১ জুলাইয়ে পল্লব মোহাইমেনের লেখা, এবং ২২ জুলাইয়ে ছাপা হয়েছে ‘কবি, কথাসাহিত্যিক’ সুমন রহমানের মত প্রকাশ ‘সচল থাকুক সচলায়তন’।

গতকাল লেখার শিরোনাম দেখে ভেবেছিলাম কারিগরী ত্রুটি কিংবা রোধ’এর রহস্যময়তা কাটিয়ে সচলায়তন পাতা বাংলাদেশে উন্মুক্ত হোক (অথবা না হোক), এমন কিছু চাইছেন সুমন রহমান। কিন্তু না; এ লেখায় সুমন রহমান নানান প্রাসংগিক-অপ্রাসংগিক বিষয় টেনে এনে রহস্যময়তার জাল আরো বিস্তৃত করেছেন, কিংবা চেষ্টা করেছেন কিছু ধোঁয়া উড়াতে। এ ধোঁয়ার কুন্ডলীতে তিনি ব্লগের উত্তর-আধুনিকতার ধারণা কপচিয়েছেন। ২০০৮ এর ব্লগ যদি উত্তরাধুনিক হয়, মনে প্রশ্ন জাগে, কাল-ধারণার এ মানদন্ডে ‘প্রায় দশক পুরোনো’ ব্লগ কবে আধুনিক, মধ্যযুগ বা প্রস্তর যুগ পেরিয়েছে? তার সময় সীমানা কতো সাল থেকে কতো সাল? শিরোনামের বক্তব্যের বাইরে গিয়ে সুমন রহমান যদি বৈশ্বিক বা বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে ব্লগের ধারণা-চরিত্র বা ইতিহাস নিয়ে তার নিজস্ব যুক্তি-দর্শন তুলে ধরতেন, তারপর সচলায়তনকে ন্যায়-অন্যায় কিংবা মানদন্ডের থার্মোমিটারে নিয়ে পারদ কতোটুকু ওঠানামা করলো তা বলতেন; সেটাও মেনে নিতাম।

কিন্তু, সুমন রহমান সেসব কিছুই করেননি।
বাংলা ভাষার জনবহুল সাইটটির প্রসংগ টেনে সুমন রহমান ক্রমাগতঃ অসত্য প্রলাপ বকে গেছেন, পলেস্তারা লাগিয়েছেন ভাষার কারুকার্যে। সুমন রহমান বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে কতোটা চোখ বুলান, সে সন্দেহ রাখছি প্রথমেই। নয়তো তার জানার কথা, বাংলা ব্লগ হিসেবে পরিচিত সব সাইটে প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য নীতিমালা-নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সারা আলোচনায় সচলায়তন ও সা.ইন ছাড়া অন্য কোন ব্লগ কিংবা ফোরামের ছায়াও তিনি মাড়াননি। অথচ অদ্ভুতভাবে ব্লগ বিষয়ক তত্বকথায় অসম তুলনা করে গেছেন চোখ বুঁজে। সুমন রহমানের সম্ভবত ধারণা নেই, তাঁর উল্লেখিত পনের হাজার সদস্যের ব্লগটিতেও ভালো লেখা দিয়ে প্রথম পাতায় আসার ও অন্যের লেখায় মন্তব্য করার অনুমতি পেতে হয়, সেটা কতোটা কার্যকর তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে নিয়ন্ত্রণের এ বাস্তবতা সচলায়তনে তো শুরু থেকেই ছিলো! আর সচলায়তন যেখানে ঘোষিত ‘ক্লোজড গ্রুপ’, জনবাহুল্য কিংবা কোলাহলের মোহ নেই - সেখানে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারের তকমা নিয়ে টানাটানি কেনো?

তৃতীয় প্যারায় সুমন রহমান বলেছেন, ‘...সচলায়তন মূলত সামহোয়ারইনব্লগ ভাঙা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, আকারে অনেক ছোট এবং এখানে লেখক হিসেবে ঠাঁই পেতে হলে রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা করতে হয়।‘
সচলায়তন অন্য কোনো সাইটের ভাঙা গোষ্ঠী কিনা সে আলাপ নতুন করে করা মানে সুমন রহমানকে বাংলা ব্লগিং এর আদিম যুগ অধ্যায়ে চোখ বুলাতে বলা। সচলায়তনের ১ম দিকের পোস্ট এবং গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় অপর্ণার লেখার মন্তব্য ঘরে কিছু রসদ পাওয়া যেতে পারে। ‘উত্তরাধুনিক ব্লগ মাধ্যম’এর পর্যবেক্ষক সুমন রহমান সে সব পোস্ট লিংক নিজেই খূঁজে পাবেন, এমনটিই ধারণা করছি।
কিন্তু তাঁর সৃষ্ট ধোঁয়ার একটা জায়গায় ফু না দিয়ে পারছি না।
‘এখানে লেখক হিসেবে ঠাঁই পেতে হলে রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা করতে হয়।‘ এ কথাটি কতোটুকু সত্য? এটা ঠিক যে নিয়মিত লিখে কমেন্ট করে সচলায়তনে সদস্য হতে হয়, খানিক সময় লাগে। কিন্তু এর জন্য কে বা কারা ‘রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা’ করলেন সেটা কি সুমন রহমান বলবেন? সচলায়তনের ১ম বর্ষ পূর্ণ হলো সপ্তাহ কয়েক আগে। এর মধ্যে বর্ষব্যাপী সাধনা করলেন কে কে? গত এক বছর সচলায়তনে চোখ বুলিয়ে এমন সাধক কাউকেই তো পেলাম না! গল্পকার সুমন রহমান গল্পের পুকুরে আগুন লাগিয়ে, পুকুরের মাছ গাছে তুলে, গাছে বসে থাকা ছাগলের সাথে মাছের পীরিতালাপের পুঁথি রচনা করলে ২০০৮ সালে পাঠকের করুণাই পাবেন, আর কিছু না। কারণ ‘মিথ্যা’কে সুশীল মোড়কে যতই ‘অসত্য’ বলিনা কেনো, সেটা মিথ্যা। ভাষার কারুকার্যে ও ক্রমাগত চাতুর্য্যে লেখায় ভার হয়, ধারও হয়; মিথ্যাকে সত্য করা যায় না।

‘লোহার বাসর বানালে ছিদ্র সেখানে থাকেই’, ৬ষ্ঠ প্যারার শুরুতে বলেছেন সুমন রহমান, ‘সচলায়তনের সহিংস বিক্ষোভ হয়তো সেই ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে’।
কবি, কথাসাহিত্যিক সুমন রহমানের এ শব্দবিন্যাসে চমক আছে, রূপক আছে। হয়তো শুনতেও ভালো লাগে। কিন্তু নেই, বাস্তবতার ছিটেফোটা।
পড়ে মনে হতে পারে, সচলায়তন বোধ হয় ভীষণ গোপন কোনো সাইট বা গ্রুপ যার চালুনির ফুটো দিয়ে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ জনচোখে এসে পড়েছে। সুমন রহমান কি জানেন না, সদস্য না হয়েও সচলায়তন পড়া যায়, লেখা যায়, কমেন্ট করা যায়?
সচলায়তন কিংবা অন্য ব্লগ সাইট নিয়ে সুমন রহমানের ধারণা-অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহটা তাই আবারও তুললাম। আর জানতে চাই ইন্টারনেটে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ জিনিসটা আসলে কী? সচলায়তনে ‘সহিংস বিক্ষোভ’ কখন কীভাবে হলো যে ‘নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্য’ নিয়ে তাঁকে ভাবতে হচ্ছে!

এবার তাঁর লেখার একেবারে শেষ দুটি কথায় নজর দিই।
‘সচলায়তনকে কোনো বিপ্লবী গোষ্ঠী বা কঠোর গ্রুপ বলে মনে হয়নি কখনোই। ...গোষ্ঠীগত অহম বা আভিজাত্যবোধ আছে ওদের, সে অন্য প্রসঙ্গ। ...আমি মনে করি, তাদের যে ভুল তা স্রেফ শিক্ষানবিশির ভুল, এর ফলে তাদের যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে, তবে তা লঘুপাপে গুরুদন্ড হয়ে গেছে। অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া যেত। আমরা বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি তরুণদের পরষ্পরের সঙ্গে কথা বলার, একে অপরের মাঝে দেশকে খুঁজে ফেরার এ প্রয়াসটিকে চলতে দিলেই সুবুদ্ধির পরিচয় দেব।‘

সুমন রহমানের লেখার এ অংশটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। কারণ, শুরু থেকে ইতস্ততঃ জল ঘোলা করে লেখার এখানে এসে তিনি একটি দাগ টেনেছেন যার এক পাশে আছে ‘ওরা’ (অহম/আভিজাত্যবোধ সম্পন্ন সচল দল), অন্য পাশে আছেন ‘আমরা’ (যাঁরা সচলের প্রয়াসটিকে চলতে দিয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় দিতে চান।)
বুঝলাম, ওরা = সচলায়তনে যারা লিখেন, কমেন্ট করেন।
কিন্তু, আমরা = ?
সুমন রহমান এই ‘আমরা’র মাঝে আছেন। কিন্তু সাথে কে/কারা কাছেন? কোন দল বা নীতি নির্ধারণী সংঘের প্রতিনিধিত্ব তিনি করছেন যে, ‘আমরা’ হয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন?

বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন দেখার সমস্যা যখন রহস্যময় হয়ে রয়েছে তখন সুমন রহমান কোন ‘শিক্ষানবিশি ভুল’এর প্রতি ফোকাস করলেন? কোন ‘লঘুপাপ’ এর শাস্তি হিসাবে ‘অন্য কোন ব্যবস্থা’রও প্রস্তাব করলেন? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে, বাংলাদেশ থেকে সচলায়তন না দেখার রহস্য সমাধানও হয়তো হতো। নাকি ধরে নেবো, সুমন রহমান আসলে এ বিষয়ে একটি গল্পই লিখতে চেয়েছিলেন, ভুলে মত প্রকাশ কলাম হয়ে গেছে...!!!

ডুমুর খেয়ে শায়লার দিকে যেতে যেতে গরিবি অমরতার গল্পকথা নয়, আগামীতে মত প্রকাশে সুমন রহমান তথ্য ও সত্যের আশ্রয়ী হবেন; এমনটিই কামনা করছি।

সবাই ভালো থাকুন।

-
-
-

0 মন্তব্য::

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP