ব্যাংকক পোস্টে বাংলাদেশ
সকাল বেলা Bangkok Post এর প্রথম পেজ দেখেই বুকটা ধক করে উঠলো। না জানি কী রিপোর্ট! গত বছর ব্যাংকক পোস্টে একটা ছবি ছাপা হয়েছিল - অবরোধের দিন ঢাকার রাস্তায় পুলিশি পাহারায় একদল শীর্ণ শরীরের মানুষ নামাজ পড়ছে। ...তাই আজ সকালের শংকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আজকের পত্রিকার হরাইজনস সেকশনের কভার স্টোরি বাংলাদেশ নিয়ে। রবার্ট লা বুয়া- রিপোর্টটি পড়ে ক্যামন যেন ভালো লাগা জাগলো মনের ভেতর। ব্লগের আগ্রহী পাঠকদের জন্য মূল অংশগুলো আমার নিজের মতো করে ভাবগত অনুবাদের চেষ্টাঃ
* বাংলাদেশে যদি আপনি আগে গিয়ে থাকেন, তবে হয়তো দেশটি সম্পর্কে ভাবলে - প্রবল দারিদ্রø, মৌসুমী বন্যা আর লঞ্চ ডুবির কথা মনে পড়বে প্রথমেই । তবে সাথে সাথে আপনাকে অবশ্যই দেশটির অমায়িক জনগণ, হাসিখুশি মুখ এবং পুরুষ প্রধান সমাজের সাথেও পরিচিত হতে হবে। বিভিন্ন সূত্র দেখে ভেবেছিলাম জঘণ্যতম অপরাধ, জনসংখ্যা, ভীড়, আবাসনের চড়া দামই দেখবো।
* বাস্তবে, বিদেশী মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণা দেয় তা চমতকার দেশটির বাস্তব প্রতিচিত্র নয়। (যা শিখলামঃ সংবাদে আপনি যা পড়েন, শুনেন বা দেখেন তার সব কিছু বিশ্বাস করবেন না)। আমি বাংলাদেশের যেখানেই গেছি বেশ নিরাপদ বোধ করেছি, এশিয়ার অনেক শহরের চেয়ে বাংলাদেশের আকাশকে বেশী নীল মনে হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি।
* বাংলাদেশ কি সাংঘাতিক গোলযোগপূর্ণ , প্রপীড়িত এবং অভুক্ত মানুষে ভরা? না। অমনটি নয়। মানুষজন গরীব হতে পারে, কিন্তু অতোটা দুর্দশাগ্রস্ত নয়। পাশ্চাত্য স্টান্ডার্ডে গরীব হলেও এখানকার মানুষগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক সুখী।
* বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হলেও যারা রয়েল বেঙল টাইগার দেখেছেন, পার্বত্য উপজাতীয়দের সাথে থেকেছেন, চা বাগান কিংবা প্রাচীন মন্দিরগুলো দেখেছেন তাদের কাছে দেশটি তেমন জনবহুল মনে হবে না।
* ইন্টারন্যাশনাল প্রেস আমাদের যে রকম ধারণা দেয়, বাংলাদেশ তার চেয়েও অনেক বেশি সভ্য দেশ। এখানকার লোকজন আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে অনেক বেশী সচেতন। প্রধান নগরী ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩৬টির মতো দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়, যার ৯টি ইংরেজী দৈনিক।
* বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান দেখার আগে ঐতিহাসিক মুঘল সাম্রাজ্যের নিদর্শন লালবাগের কেল্লা, শাঁখারি বাজার, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরসহ ঢাকার আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখা উচিত।
* থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশও বিশ্বের অন্যতম পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ, যেখানে কম দামে জামা কাপড় কেনা যায়। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথে রয়েছে অত্যাধুনিক বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টার। এর বাইরে বনানী ও গুলশানের বিপনীগুলো বিদেশিদের খুব পছন্দের আকর্ষণ।
* বিশাল জনসংখ্যার কারণে সংগতভাবেই বাংলাদেশ এখনো নদী বিধৌত কৃষিভিত্তিক সমাজ। প্রাকৃতিক আকর্ষণের মাঝে সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক নিঃসন্দেহে অন্যতম। বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বন ইউনেস্কো ঘোষিত ’ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুন্দরবন গেলে কমপক্ষে ৫ দিনের জন্য যাওয়া উচিত। শীতকালে বাংলাদেশে যাওয়ার সেরা সময়, তবে আপনি এপ্রিলে গেলে মাওয়ালিদের মধু উতসব দেখতে পাবেন।
* দেশের ২য় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। উপনিবেশিক আমলের বেশ কিছু দালান দেখতে পাবেন এখানে। শিপব্রেকিং এরিয়া এখানকার আরেকটি দেখার মতো জায়গা, তবে সেখানে ছবি তোলা নিষেধ। আরেকটু দক্ষিণে আছে কক্সবাজার; বিশ্বের দীর্ঘতম (১২০ কিলোমিটার) সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম থেকেই যাওয়া যায় চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে। বাংলাদেশের মূলধারা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে এখানে রয়েছে অনেকগুলো উপজাতি গ্রাম।
* বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের চা বাগানের প্রধান এলাকা। সেখানে গিয়ে চা উতপাদনের পদ্ধতি দেখা যায়; যার জন্য মার্চ- ডিসেম্বর সবচে ভালো সময়।
* দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ঐতিহাসিক হিন্দু মন্দির। রাজশাহীর পুঠিয়া শহরে রয়েছে বেশ কিছু হিন্দু রাজবাড়ী ও দালান। দেশের প্রাচীনতম যাদুঘর ’বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’ অন্যতম স্থাপত্যকলার এক নিদর্শন। এছাড়াও এখানে রয়েছে হিন্দু দেব-দেবীর অনেক মুর্তি। উত্তরবঙ্গের কান্তনগরের মন্দির আরেকটি ছোট কিন্তু চমতকার স্থান।
এক সংগ্রামী ইতিহাসের দেশ; বাংলাদেশ
0 মন্তব্য::
Post a Comment