24 December, 2006

একজন গরুর গল্প

দিশাদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি প্রায় ঘন্টা দু’য়েক হবে। এর মাঝে দুইবার চা দেয়া হয়েছে। সবাই হুড়াহুড়ি ছোটাছুটি করছে। আমার দিকে কারো খেয়াল নেই।
দিশার মা একবার এসে - "স্যার, আপনাকে চা দেয়া হয়েছে?" বলেই অন্য দিকে চলে গেলো।
আমি বসে বসে চা খাচ্ছি। সাথে দেয়া চানাচুরের পিরিচ থেকে একটা একটা করে বাদাম মুখে দিচ্ছি। অপেক্ষা করছি কখন খামটা হাতে পাবো। খামটা হাতে পেলেই বিসিএস কম্পিউটার সিটি; এক গিগার আইপড কিনবো। বাকী টাকা দিয়ে সিল্কের পাঞ্জাবী...।


এর মাঝে দিশা এলো দৌড়ে - "স্যার, হ্যাভ য়ূø সীন আওয়ার কাউ?"
দিশা সামনে ও-লেভেল দিবে । আমি ওকে ম্যাথ আর জিওগ্রাফি পড়াই। এই পড়ানোর পারিশ্রমিক আটকে আছে দুমাস ধরে। গত মাসে লজ্জায় চাইতে পারিনি। এবার তাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি। টাকা না নিয়ে উঠবো না; এমন ভাব করছি। দিশার প্রশ্নে ধ্যান ভাঙলো
- দেখিনি, যাওয়ার সময় দেখে যাবো।
দিশা এবার ভুরু তুলে গড়মড় করে বলে
- য়ূø মাস্ট নট মিস ইট, ...দ্য মোস্ট এক্সপেনসিভ কাউ অব দ্য ইয়ার।
- শিউর!
দিশা চলে যায়।


আমি বসে থাকি। সামনে রাখা সানন্দা-য় চোখ বুলাই। পূজা স্পেশালে শাড়ী পরার নানান বাহার দেখি। কারো আসার শব্দ শুনলে টুপ করে পাশ থেকে ইত্তেফাক হাতে নিই। এভাবেই সময় কাটে। আর কেউ আসে না, আমার খামেরও খবর নেই। বাইরে তখন যোহরের আজান দিচ্ছে। একটু পর দুপুরের খাবার সময়। আমি বুঝতে পারছি না - এসময় কারো বাসায় বসে থাকা ভদ্রতার কোন লেভেলে পড়ে! তবুও বসে থাকি। টাকাগুলো আমার খুব দরকার।

আরো কিছু সময় পরে খাম হাতে দিশার মা আসে হাসি মুখে
- ’স্যার, দুইমাসের টাকা আছে, পাঁচশ’ কম। ঈদের গরু কিনতে গিয়ে অনেক খরচ হয়ে গেলো। ভাইবেন না - সামনের মাসে মিলায়ে দিমু নে...।’
নাঃ আন্টি, কী যে বলেন, অসুবিধা নাই - বলে বিনীত হয়ে হাসি দিয়ে খামটি নিলাম। ঘর থেকে বাইরে এসে খাম খুলে দেখি বেশীর ভাগ পঞ্চাশ টাকার নোট। সব গুলো নোট যেন একটু আগে কারওয়ান বাজারের মাছের আড়ত ঘুরে এসেছে!


খামটা পকেটে ঢুকিয়ে গেট পার হবো এমন সময় দিশার বাবা ইদি্রস আলী আমাকে ডাকে
- ’স্যার গরুটা এক নজর দেখে যান’।
পাঁচশ টাকা কম পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তবুও কাছে এগিয়ে যাই। গাবতলী হাটের সবচেয়ে দামী গরু; এক লাখ বিশ হাজার টাকা। ইদি্রস আলী খুব যত্নেকোরবানীর গরুর গায়ে হাত বুলাচ্ছেন। গরু তার বড় বড় চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর যেন বলছে - ৫০০টাকার জন্য মন খারাপ করিস না মানুষ। তারপর যেন মিষ্টি করে একটা হাসি দিচ্ছে। চরম বিদ্রুপ মেশানো সে হাসি।


...সারা শহরের মানুষ হাসতে হাসতে খুন।
পত্রিকায় সবচে’ দামী গরু ও তার ক্রেতার ছবি ছাপা হয়েছে। কিন্তু ক্যাপশন গেছে পালটে। ইদি্রস আলীর ছবির নিচে ছাপানো হয়েছে - ’এই গরুটির দাম এক লাখ বিশ হাজার টাকা"। আর গরুর ছবির নিচে লেখা হয়েছে - "ইনি জনাব ইদি্রস আলী যিনি পাশের গরুটিকে কিনেছেন।" পেপারটি হাতে নিয়ে দিশা ভেউভেউ করে কাঁদছে।


...কান্নার শব্দ আরেকটু বাড়লে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বিজয় স্বরণীর জ্যামে বাস আঁটকে আছে। হঠাত রিনির ফোন কল
- কখন দেখা হবে?
- আইডিবি-তে চলে এসো বিকেল চারটায়।
- আইপড?
- হুম, আইপড। কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না?
- য়ূø আর সো সু-ই-ট ডিয়ার...
- আসলেই?
তখন জ্যাম ছাড়িয়ে বাসটা নড়েচড়ে উঠেছে।

Read more...

04 November, 2006

পাকমন পেয়ার

রাসেদের আব্বি-আম্মি বছরের এসময় করাচী চলে যায়। নানুভাইয়া-মামারা সবাই ওখানে থাকে। বড়মামা লাহোর ইউনিভার্সিটির টিচার। ছোটমামা ইসলামাবাদে সিরামিকসের বিজনেস করে। ছোটমামীর মা নাকি বেনজীর ভূট্টোর খালাতো বোনের ভাসুরের মেয়ে। আব্বি-আম্মি পাকিস্তানে খুব ব্যস্ত সময় কাটায়। নানুভাইয়ার এন.জি.ও এখন মুজাফফারাবাদে কাজ করছে গত বছরের ভূমিকম্পের ভিকটিমদের নিয়ে। প্রজেক্টটিতে আব্বি-আম্মি বড়সড় ফান্ড দিয়েছে। এবার পিটিভি-র মীনাবাজার হ্যাভ অ্যা নাইস ডে লাইভে আব্বির একটি ইন্টারভিউ আছে। পাক-বাংলাদেশ রিলেশন নিয়ে ডিসকাশন। আম্মিরও রেকর্ডিং আছে পিটিভি ওয়ানের ’কারিনা ইন করাচী’ প্রোগ্রামে। শবনম মাজীদ আর শাহিদা মিনির একটা কালচারাল নাইটেও অ্যাটেন্ড করবেন তারা।


দুই.
আজকের গেট টুগেদারটা জমজমাট ছিল। রাসেদের বন্ধুরা এ-লেভেল দিয়েছে এবার। স্যাট-টোফেল কিংবা আইইএলটিএস এর প্রিপারেশান নিচ্ছে সবাই। এক ফাঁকে রাসেদের বাসায় এ আয়োজন। ফ্যান্টাস্টিক ফোর আর গ্যাংস্টার দেখে কুলসুন ম্যাকারনী খেতে খেতে অনেক গল্প হয়। তাহসান-হাবীব বিতর্কে লোমেলা চেঁচামেচি করে উঠে যায়। এরপর সামী ইউসুফের সুরে বাংলা গানে নতুন জোয়ার সৃষ্টির স্বপ্নে বিভোর শাকেরও চলে গেলে আড্ডাটা ঝিমিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর কেবল সাফরীন আর জাবের থেকে যায়।


ভার্সিটি অ্যাডমিশনের অবসরে ওরা একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করছে। সাফরীন কাজ করছে উইমেন রাইটস অ্যান্ড লীডারশীপ সেকশনে। শরীয়া আইন যে নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে, ধর্মীয় অনুশাসনে থেকেও আধুনিকতার সাথে তাল মিলানো যায়; এ ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করছে সাফরীন। প্রচুর পড়তে হচ্ছে, ওয়েবের জন্য লিখতেও হচ্ছে। ফাঁকে ফাঁকে ব্যারন্স স্যাটের হাই ফ্রিকোয়েন্সী আর হট প্রসপেক্টিভ ওয়ার্ড লিস্টে চোখ বুলিয়ে নেয়। সাফরীনের আম্মু একটি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ায়।
জাবের কাজ করছে হিস্ট্রি সেকশনে। একাত্তরের গন্ডগোলের ঝাপসা কনসেপ্টগুলো জাবের নতুনভাবে জাস্টিফাই করছে। জাবেরের মামা এ বিষয়ে প্রচুর রেফারেন্স দিয়ে হেল্প করছেন। মামা একসময় হলিডে আর এভিডেন্সে লিখতেন, এখন নয়াদিগন্তে লিখেন রেগুলার। রাসেদের কাজটা একটু জটিল। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি প্রায় চারশ মেম্বারের ইয়াহুগ্রুপটিও তাকে দেখাশুনা করতে হয়। মেম্বারদের বেশীরভাগই ও-লেভেল স্টুডেন্ট। প্রতি মাসে মেম্বার সংখ্যা বাড়ছে। সব ই-মেল মন দিয়ে পড়া, রেফারেন্স ঘেঁটে ঘেঁটে এনকোরারিগুলো রিপ্লাই দেয়া, গ্রুপ ডিবেট কো-অর্ডিনেট করা, উফ! অনেক ঝামেলা। বেশী কঠিন ইস্যু হলে করাচীতে বড় মামা কিংবা নানুভাইয়াকে মেইল করে জেনে নেয়া যায়। আব্বি-আম্মিও হেল্প করেন মাঝে মাঝে।



তিন.
রাসেদ-সাফরীন আর জাবেরের টীমওয়ার্ক খুব ভালো। কাজের প্রতি ভীষণ কমিটেড আর সিনসিয়ার। ওয়েবের ফোরাম সেকশনের পাশাপাশি ব্লগ অপশন রাখার প্লøান করছে রাসেদ। জাবের রিলেটেড সাইটগুলোর লিংক অ্যাড করবে, সাথে একটি ফান সেকশনও দেখবে সে। মুসলিমম্যানিয়াক থেকে ট্রান্সলেট করে কাজ চালাবে প্রথমে, পরে গ্রুপ মেম্বাররাই লিখবে। গ্রুপের বেশীরভাগ মেম্বারই ছেলে। সাফরীন নতুন অ্যাসাইনমেন্ট ঠিক করে - ক্লাস এইট নাইনের গার্লসদের ই-মেল অ্যাড্রেস কালেক্ট করতে হবে। ওদের প্রাইমারী কাউন্সেলিংয়ের কাজটা সাফরীন নিজেই করবে।
তারা যে গ্রুপকে টার্গেট করে এগুচ্ছে, ওরাই আগামীর লিডিং জেনারেশন। এরাই পালটে দিবে আধুনিকতার ট্রেন্ড। এরকম অনেকগুলো অ্যাকশন প্লøান ফরমুলেট করতে করতে জাবের হাঁফিয়ে উঠে -
- লেটস হ্যাভ অ্যা ব্রেক!
- হোয়াট অ্যাবাউট সাম ফান? প্রশ্ন ছুঁড়ে রাসেদ কম্পিউটার অন করে। উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারে তখন অ্যাডাম অ্যান্ড ঈভ প্রোডাকশনের ’হেডমাস্টার টু’।
সাফরীন আঁতকে উঠে - ওয়াও... জ্যাজমিন!
জাবের সাফরীনের পাশে গিয়ে বসে - ইয়াপ, শী ইজ আওয়ার প্রাইড...।
মাথার স্কার্ফ সরিয়ে সাফরীন তখন ছোট ছোট চোখে অপলক তাকিয়ে থাকে - হুমম... শী ইজ বেটার দ্যান ক্যাথি...
জাবেরের চেহারাটা লাল হয়ে আসছে।
ভলিউম বাড়িয়ে রাসেদ সাফরীনের দিকে তাকায়।
জাবেরটা একটু বেশী ফাজিল...।

Read more...

24 September, 2006

সম্প্রীতির সন্দেশ

ডিসি অফিসে বছরের এই সময়ে এরকম একটা মিটিং হয়। মকসুদআলী আর শাহাবুদ্দির পাশাপাশি নারায়ণ নাথ-কেও বসতে হয়। এবারো অমনটা হলো।

ডিসি খায়রুজ্জামান কিছুটা তৃপ্তির হাসি হাসেন
- বুঝলেন নারাণবাবু, ঘটনা তেমন কিছু না। গত ক’বছর ধরে এমনটা হচ্ছে। রোজা-পূজা একসাথে। এবারো উপরের অর্ডার আসছে - সেহরী, তারাবীর নামাজ আর ইফতারের সময় বাদ্য-বাজনা-মাইক বাজানো যাবে না।
-জ্বী স্যার, বুঝতে পারছি। নারাণ সম্মতি দেয়।
পাশ থেকে মকসুদআলী চোখ ঘুরিয়ে বলে - কেবল আপনি বুঝলে তো হইবো না বাবু, পোলাপাইনেরেও বুঝাই কইয়েন। শয়তান কিছু আছে - তারাবীর জামাতের সময় মসজিদের পাশে গিয়া পটকা ফুটায়।
- ওসব কিন্তু মুসলমানের পোলাপাইনও করে। নারাণ জবাব দেয়।
শাহাবুদ্দি কম যায় না - আমি কইলাম ধরতে পারলে এইবার খতনা করাই ছাড়বো। গতবার হারাণের পোলারে ধরছিলাম না!
নারাণ আমতা আমতা করে - সাথে কিন্তু আপনের ভাগিনাও ছিল।

ডিসি এবার থামায় সবাইকে।
- দেখেন আপনারা হইলেন এলাকার গণ্যমান্য লোক। আপনারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেন, উতসবগুলো সমস্যা ছাড়া কেটে যাক। সামনে ইলেকশন আছে। এ সময় ঝামেলা যত কম হবে, তত ভালো।
- আমরা তো সবসময় শান্তিই চাই। কেবল এই পূজার কয়েকটা দিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তা দরকার। কিছু পোলাপাইন এবারো সমস্যা করতে পারে।
শাহাবুদ্দি গলা খাকারি দেয় - নারাণবাবু, আপনেরা সহজ বিষয়টা জটিল করে ফেলেন। পোলাপাইন চা-নাস্তার জন্য কিছু চাইলে দিয়া দিয়েন...
-ঐটা তো প্রতি বছর দিই।
- তাইলে আর চিন্তা কইরেন না, আমরা তো আছি। কোন গন্ডগোল হইবো না। খালি ঢোল বাজনাটা একটু হিসাব কইরা কইরেন। মকসুদমিয়া সাহস দেয়।

নারাণবাবু এবার হাত কচলায় - আরেকটা কথা ছিল, ডিসি স্যার।
বলেন নারাণবাবু, বলেন।
- সেহরীর সময় তো মাইকে হুজুরেরা ডাকে। মোটামুটি সবার ঘরে অ্যালার্মঅলা ঘড়িও আছে। এরপরও কিছু ছেলেপেলে গেইটে এসে পিটাপিটি করে। ওরা তো জানে -এইটা হিন্দু বাড়ী । এরপরও পিটাপিটি না করলে হয় না? বাড়ীতে অসুস্থ বুড়া মানুষজন আছে। বাচ্চাকাচ্চা আছে...
মকসুদমিয়া চেয়ার নেড়ে বসে - এর লাইগা কয়, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। সামান্য ক’টা রাত - কী এমন ডিস্টার্ব হয়? একটু সহ্য করবার পারেন না?
শাহাবুদ্দি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়ে - পোলাপাইনরে ক্ষেপায়ে লাভ আছে? ক’টা দিন সহ্য করে যান। আপনেরা ভালো থাকেন। আমরাও ভালো থাকি।

...ভালো থাকাটা খুব দরকার।
ডিসি সাহেব সবাইকে চা-সিঙ্গাড়া খাইয়ে মিটিং শেষ করেন।

পরদিন সংবাদপত্রেঃ
... গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আসন্ন রোজা ও পূজা শান্তিপূর্নভাবে পালনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়...।

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৬

Read more...

18 September, 2006

বস্ত্রবালিকা ও অন্যান্য

রবিউল যখন খবরটা দিলো তখনো বিশ্বাস হয়নি। ফালানির মা ভুরু কুঁচকে বলেছিল - ধুররো মফিজ, তোর মাথা খারাপ হই গেছে? কিন্তু গতকাল ফ্যাক্টরিতে সবাই যখন বিষয়টা আলাপ করছিল তখন বিশ্বাস জন্মায় আস্তে আস্তে। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, কাটিং মাস্টার জুলফিকার শার্টের পকেট থেকে খবরের কাগজটা বের করে যখন জোরে জোরে পড়ে শোনায় আশেপাশের চোখগুলো তখন জ্বলজ্বল করে উঠে। কেউ একজন বলে উঠে - আরে বুঝোনা, এগুলান হইলো ভোটের কেরামতি। সাথের জন গলা খাকারি দেয় - ভোট হউক, যা-ই হোক মিয়ারা; বেতন বাড়বো - ঐটাই বড় কথা। জুলফিকার এবার আওয়াজ দেয় - ওই থাম তোরা। এই বাড়ায় লাভ আছে? জিনিসপত্রের যে-ই দাম, সংসার চলে? তিন হাজার না করলে আবার আগুন জ্বলবো কইলাম, রেডি থাইকো সবাই। দূরে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলো ফালানির মা।


সেদিন বিকাল থেকে ফালানির মা মনে মনে কী যেন একটা হিসাব করে। ঠিক একটা হিসাব না, অনেকগুলো হিসাব এসে আশেপাশে ঘর-বসতি করে। তবে মাঝে মাঝে সন্দেহও জাগে। হঠাত কী এমন হইলো যে নয়শো তিরিশ থেকে ষোলশ’ চার টাকা হইবো? ক’দিন আগে যে গন্ডগোল হইছে তার বদলে বড় জোর হাজার-বারোশ’ হইতে পারতো। কিন্তু ষোলশ’ চার টাকার ব্যাপারটা খটকা লাগে। চার টাকা আবার কোন হিসাব? রবিউল অবশ্য এই কথাও বলছিল যে - এইটা একুশ শ’ সতের টাকা পঁঞ্চাশ পয়সা হইবো দুই বছর পর। আবারো সতের টাকা পঁঞ্চাশ পয়সার পঁ্যাচ!


এ সব পঁ্যাচ-গোচ পেরিয়ে ফালানির মা কি জানি কি ভাবে আর গোপনে মনের ভেতর একটা সুখের স্বপন জাগে। ফালানিও এমকে অ্যাপারালসে কাজ করে। দুইজনের যদি মোট চৌদ্দশ’ও বাড়ে - কম কি? ফালানির বাপের হাঁফানির অসুদটা এইবার রেগুলার কেনা যাবে, মাসে একদিন ভালো মন্দ খাওয়া যাবে, খোলা তেলের বদলে টিভি-তে দেখায় ওরকম একটা সুগন্ধি তেলের বোতল কেনা যেতে পারে, ফেয়ার এন্ড লাভলি ইন্ডিয়ানটার দাম বাংলাদেশীটার চেয়ে দশ টাকা বেশি - এইবার ফালানি ইন্ডিয়ানটাই কিনুক ! আহারে, এই বয়সের মেয়েদের কত শখ থাকে! ফালানির বিয়ের জন্য মাসপ্রতি শ’দুয়েক করে টাকা জমানোও দরকার। ছোট বাচ্চা দুইটারে শাহ আলী মার্কেট থেকে দুইটা ভালো হাফ প্যান্ট কিনে দিতে হবে। ওদের ন্যাংটা থাকার দিন বোধ হয় ফুরালো। ... এসব ভাবতে ভাবতে মুখটা শুকিয়ে যায়। বেতন বাড়লে হাকিমপুরী জর্দাটা মনে হয় সব সময় কেনা যাবে।


পাড়ার মোড়ের দোকানে পান কিনতে গিয়ে রইসুদ্দি-র কথা শুনে ফালানির মা চমকে যায়।
- হ চাচী, খবর পাইছি আমরা। আর কি কও? তোমাগো অহন সুদিন। সরকার তো বেতন বাড়াই দিলো।
- কী কস রইসু? এখনো বাড়ায় নাই। ঐসব খবর বাতাসের কানাকানি।
- না চাচী, ডরাইও না। মিষ্টি খাইবার চামু না। তয় - এইবার কইলাম আর বাকী দিবার পারুম না।
পান মুখে দিয়ে আঙুলের আগায় লাগানো চুনটা দাঁতে লাগিয়ে যখন ঘরে ফিরছিল তখন দেখা বাড়িঅলা আকবর মহাজনের সাথে। ফালানির মাকে দেখে এগিয়ে আসে।
- দেখা হয়ে ভালোই হইলো, শুনো - তিন বছর ভাড়া বাড়াই নাই। শুনলাম তোমাগো বেতন বাড়ছে, সামনের মাস থেইক্যা তিনশ টাকা বাড়াই দিবা।
- ম’জন, বেতন তো এখনো বাড়ে নাই। খালি পেপারে কি জানি লিখছে...
- আরে পেপার না, আইজকা টেলিভিশনেও খবরে শুনলাম। ...যাউক, আর কথা বাড়াইও না। আগামী মাস-থন তিনশ টাকা বেশি দিবা...।


পরদিন সকালে বড় স্যারদের সাথে গার্মেন্টসের জমিদার স্যাররা আসে। কাজ থামিয়ে সবাইকে জমায়েত করে। এক স্যার পাঞ্জাবীর হাতাটা গুটিয়ে জুলফিকারের মাথায় হাত রাখে
- আমরা হইলাম ছোট ফ্যাক্টরীর মানুষ। তোমরা জানো আমরা সাব-কনট্রাক্টে কাজ করি। কারেন্ট না থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রডাকশন বন্ধ থাকে। হরতালের কারণে অর্ডার ক্যানসেল হইলে লাখ লাখ টাকা লস যায়। ...আমি তোমাদের সব সময় আমার ঘরের মানুষের মতো করে দেখেছি। সুখে দুঃখে তোমরা আমাদের সাথে ছিলা, আমিও ছিলাম। আগামীতেও থাকার চেষ্টা করবো। ক’দিন আগে বেতন বাড়ানোর একটা গুজব বাইর হইছে। আমার বিশ্বাস - তোমরা কেউ ঐসবে কান দিবা না। আমি কথা দিলাম - এখন থেকে প্রতি মাসে টাইমলি বেতন পাইবা সবাই। আর ঈদের বোনাসও কইলাম, খোদার কসম, ঈদের এক সপ্তাহ আগে দিয়া দিমু। এখন সবাই কাজে যাও। ...সব কাজকর্ম ঠিক মতো চলবো।


দ্রুত গতিতে বোতাম সেলাই করতে গিয়ে বারবার মন ছুটে যায় ফালানির মার। এই নিয়ে তিনবার আঙুলে সুঁচ লাগলো। পাশ থেকে কে যেন বলে উঠে - দেইখো, দেইখো - আল্লার গজব পড়বো...।


১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬

Read more...

03 September, 2006

নাদিয়ার গান

সময়টা 1940 এর মাঝামাঝি। মিশরে তখন বৃটিশ লোকজন চুটিয়ে ব্যবসা করে নিচ্ছে। এরকমই একজন কটন ব্যবসায়ী হেনরী অস্টেন; স্ত্রী ক্যাথেরিন ও একমাত্র কিশোর সন্তান চার্লসকে নিয়ে আলেকজান্ডৃয়ায় রাজত্ব করে চলেছে। প্রভাব প্রতিপত্তি, বিশাল বাগান - ব্যবসা, রাজকীয় বাড়ী, চাকর-বাকরের কমতি নেই।কিশোর চার্লস ছোটবেলার খেলার সাথী কারিমা-র প্রেমে পড়ে যায়। অথচ সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটি তারা দু'জনই বুঝতে পারে । হেনরির অফিসের গাড়ীর ড্রাইভার কারিমার বাবা মোস্তফা। কারিমাও চার্লসদের বাসায় ফুট-ফরমায়েশ খাটা মেয়ে, সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে যার অবস্থান। এরপরও পারষ্পরিক ভালো লাগা বেড়ে চলে।বছর খানেকের মধ্যে দ্্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামাদোল লেগে যায়। বাবা-মা'র ইচ্ছায় চার্লস অ্যামেরিকা চলে যায় পড়ালেখা করতে। বিশ্বযুদ্ধের শেষাশেষি চার্লস ফিরে আসে মিশরে। কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনে চার্লস ও কারিমা পরষ্পরকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে। লোকচক্ষুর আড়ালে অবিরাম নিশি প্রণয় শেষে চার্লস তার বাবা-মা'র কাছে কারিমার কথা বলে। জগতের স্বাভাবিক নিয়মে হেনরী সন্তানের ইচ্ছার বিরূদ্ধে দাড়ায়। অস্থির আসহায় চার্লস মাতাল অবস্থায় গাড়ী চালাতে গিয়ে কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। শোক কাটিয়ে কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কারিমা নিজের ভেতর অনুভব করে আরেকজনের অস্তিত্ব, চার্লসের স্মৃতি, অনাগত প্রজন্ম!পারিবারিক নির্যাতন পেরিয়ে সামাজিক অবহেলার আগেই এগিয়ে আসে কারিমার ভাই ওমরের বন্ধু মুনির আহমেদ। স্ত্রী-কণ্যা হারানো নি:সঙ্গ মুনির সব জেনে শুনে কারিমাকে বিয়ে করে। কিছুমাস পর জন্ম নেয়া নাদিয়া-কে নিজের সন্তান বলে মেনে নেয়। অসাধারণ মানুষ মুনিরের সংসারে কারিমা সুখে থাকে - নাদিয়ার মাঝে চার্লসের ছোঁয়া খুঁজে পায়। হঠাৎ একদিন মুনিরের বন্ধু, মিউজিক ব্যবসার সাথে জড়িত, স্পিরস কারিমার টুকটাক গান গাওয়ার ব্যাপারটি জেনে যায়। তারপর ঘটনাক্রমে কারিমা হয়ে উঠে মিশরের আলোচিত সঙ্গীত শিল্পী, নাইটিংগেল, কারাওয়ান। মিশরের এক নম্বর শিল্পী উম্মে-কাথলুম- এর পর কারিমা মানুষের মন জয় করে নেয়। একটানা কনসাটে কনসার্টে কারিমার তখন জয় জয়কার অবস্থা।1952 সালের 26 জানুয়ারীর ঐতিহাসিক "ব্ল্যাক স্যাটার ডে" হামলায় কনসার্ট চলাকালীন সময়ে মানুষের হুড়োহুড়িতে নাদিয়া হারিয়ে যায়। নাদিয়াকে খুঁজে পায় সন্তানহীন দম্পতি মিশরীয় তারিক মিস্ত্রী ও ফরাসী সিলন। তারপর নাদিয়া বড় হতে থাকে ফ্রান্সে, অন্য পরিবেশে, অন্য নামে; গ্যাবি মিস্ত্রী।ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে যায় নিয়ম মতো। সন্তান হারিয়ে কারিমা-মুনিরের বিষন্ন জীবন এগিয়ে চলে। মৃত্যূর আগে মুনিরের শেষ ইচ্ছা মতো কারিমা গান গেয়ে যায়। পুরা আরব দুনিয়ার আলোচিত শিল্পী হয়ে উঠে। গানে গানে প্রকাশ পায় বুকের ভেতর জমে থাকা নাদিয়ার জন্য হাহাকার - "কোথায় গেলি খুকু তুই?তোকে ছাড়া ভীষণ একাকী আমি - চোখ বুঁজলেই তোকে দেখি,কোন গোলাপ সুরভী দেবে না - কোন বাতি আলো দেবে না আমার ঘরেযতদিন তুই দূরে দূরে..."আরো কিছু বছর পর সিলনের মৃত্যূর পর নাটকীয় ভাবে তারিক আবিষ্কার করে গ্যাবির (নাদিয়া) আসল পরিচয়। গ্যাবি ততদিনে নামকরা সাংবাদিক। অবশেষে মায়ের কোলে মেয়ে ফিরে আসে। কাহিনী আরো কিছুটা আগায়। কারিমার অস্বাভাবিক মৃত্যূ, নাদিয়া কিডন্যাপ হওয়া-সহ পর্যায়ক্রমে ধরা পড়ে কারিমার ভাই ওমর। পাপের পতন পূণ্যের জয় হয়। "নাদিয়া'স সং" মিশরীয় লেখিকা সোহেইর খাসোগ্যি-র তৃতীয় উপন্যাস, প্রকাশিত হয়েছিল 1999 সালে। 1995 সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস "মিরাজ" বাজারমাত করেছিল বেস্ট সেলার হয়ে। মাঝে প্রকাশিত হয় 2য় উপন্যাস "মোসাইক"।নাদিয়া'স স ং -এর কাহিনী শুরু হয় 1940 সালে। তারপর নানা ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে গেছে ইতিহাসের সাথে সমান তালে। মিশরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘনঘটার ছোঁয়া লেগেছে কাহিনীর পরতে পরতে। 1990 সালে ইরাকের কুয়েত আক্রমণের শেষে এসে নাদিয়া'স সং শেষ হয়েছে। নাগিব, নাসের, সাদাতসহ বিভিন্ন নেতারা ঘুরে ফিরে কাহিনীতে বিচরণ করেছে নানান প্রেক্ষিতে। কারিমার ভাই ওমরের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, মুসলিম ব্রাদারহুডের নিষিদ্ধ কর্মকান্ড, কুসংস্কার, মিশরীয় নারী জাগরণের পথিকৃৎ হুদা - আল- শারাবি, সুয়েজ খালের রাজনীতিসহ নাদিয়ার সাংবাদিক জীবনের বিভিন্নদিক উপন্যাসে স্থান পেয়েছে।লেখকরা সাধারণত: ইতিহাসের বৃত্তের বাইরে থেকে সময়কে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সোহেইর ইতিহাসকে বাদ দিতে চাননি। ইতিহাস বাহুল্যে প্রায় সাড়ে চারশ' পৃষ্ঠার এ উপন্যাস মাঝে মাঝে জোর করে পড়ে যেতে হয়েছে শেষ পরিণতি জানার জন্য। তবুও 1940 থেকে 1990 - এই 50 বছরের মিশরীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার এক অনবদ্য আখ্যান - "নাদিয়া'স সং"।

Read more...

29 August, 2006

মংগা সেলিব্রেশান



অ্যাটেনশান, ইয়োর অ্যাটেনশান please... প্রতি বছর আসে, প্রতি বছর যায়। তাই নিয়মমতো আবার আসছে - আশ্বিনের মংগা...।

মাসের হিসাবে আর বেশী দূরে নেই। সো, গেট রেডি ফর সেলিব্রেশান!!!

অ্যাটেনশান - ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ওয়েক আপ!! আংগুলের কড়ে আর হিসাব করা যাবে না, ক্যালকুলেটরেও কূলাবে না। এক্স-পি কিংবা এসপিএসএস নিয়ে বসে পড়ুন। বিশাল ভাগাভাগি হবে, কাড়াকাড়ি হবে। ইলেকশনের আগে শেষ সুযোগ! কোন লেভেলে কত দেয়া লাগবে, নিজে কত পাবেন ঠিক করে নিন, কুইক! ইয়ার-এন্ড-ট্রিপে আর কক্সবাজার রাঙামাটি নয়, এবার সিংগাপুর কিংবা মরিশাসের কথা ভাবতে পারেন।

অ্যাটেনশন অনারেবল পলিটিশিয়ানস, এটাই চরম সুযোগ। সোনায় সোহাগা। জনদরদী হওয়ার, জনগণের কাছে যাবার মোক্ষম চান্স! লংগরখানা আর রিলিফ সেন্টারের লোকেশন গুলো ঠিক করে নিন। আপনাদের পটু সহধর্মীনিদের জন্য জামদানী-কাতানের বদলে সুতির শাড়ী কিনে নিন। মংগা আক্রান্ত বুভূক্ষ মহিলাদের পাশে আপনাদের রমনীরা পাবলিক রিলেশন আর মাস-কম্যুনিকেশনে বিরাট ভূমিকা রাখবে। ওদের ভোটগুলো এখনই কনফার্ম করে নিন! ডোন্ট মিস ইট!

সমুদয় "যথাযথ কর্তৃপক্ষ" এবার হিসাবটা অন্যরকম হবে। মংগার সাথে আসবে রমজান! কী অপূর্ব সমন্বয়! ইহকাল-পরকালের মাল সামানা এবার গুছিয়ে নিন। ভাগ-বাটোয়ারায় ছাড় দিবেন না একদম!

সো কল্ড "পিপলস'স পার্লামেন্ট" এর সম্মানীয় সম্পাদকবৃন্দ - এবার বিশেষ সম্পাদকীয় লিখুন - "এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আলীদিঘী গ্রামের আম্বিয়া খাতুন সাত দিন না খেয়ে রোজা রাখছে, কচু সিদ্ধ দিয়ে ইফতার করছে...।" বাট please ডোন্ট ফরগেট টু পার্টিসিপেট কালারফুল ইফতার পার্টিস ইন ফাইভ স্টারস! ইলেকশনের আগে দরাদরির কাজটাও সেরে নিন। পাওয়ার অব মিডিয়া দেখানোর ধমক দিন।

"অংপুরের ছাওয়াল" আনিসুল হক, আপনি এবারো "অরণ্য রোদন" করবেন। ভালো কিছু লেখা লিখবেন। পাঠক পড়ে মন খারাপ করবে। ...এটুকুই!

অনারেবল পলিসিমেকারস্, সেল্ফ প্রোক্লেইমড পেট্রিঅটস - আশ্বিনের মংগা আসছে। সাদরে বরণ করা দরকার।

...সুতরাং দেরী নয় আর। গেট রেডি - কাউন্ট ডাউন...

Read more...

30 July, 2006

ধারা - ১৬৪

মহামান্য আদালত,
আমি নিশ্চিত এ আমার পূর্ব জন্মের পাপ। চলমান জনমে আমি এমন কোন অপরাধ করিনি যে অদেখা ঈশ্বর আমাকে এরকম শাস্তি দিয়ে যাবেন। এখনকার এই আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, অনেক মানুষের চেয়ে কম পাপ করেছি বলে জানি। তবুও ঈশ্বরের অভিশাপ আমার উপর। আমি হলফ করে বলছি - এ নিতান্তই অন্যায়! এ আমার উপর গুরুদন্ড। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন - আমি তেল চর্বিযুক্ত খাবার বেশি পছন্দ করি না। মাঝে মাঝে পোলাও খেতে ভালোবাসি। সাকী -শরাবে কোন আগ্রহ নেই। খুব আরাম করে ঘুমাতে ভালো লাগে। অথচ, মহামান্য আদালত - আপনি জানেন না - আমি ইদানিং অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটাই। ঈশ্বর জানতেন - আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, তাই তিনি আমাকে কেবল দুঃস্বপ্নের মাঝে ফেলে দেন। আর আমি গড়াগড়ি দিই। এ বিরাট অন্যায় আচরণ। নষ্ট মানুষরা আমাকে পুল সিরাত পার হতে দেখে হাততালি দিবে - মহামান্য আদালত - আমি এতো কষ্টের ভার নিয়ে কিভাবে পুল সিরাত পার হবো? আপনি জানেন - অনেকগুলো বিষণ্নতার ভার আমি বয়ে চলেছি, অনেকগুলো আকাঙ্খা আমাকে পেছন থেকে ধাককা দিচ্ছে। প্রচন্ড রোদে আমি পুড়ে যাচ্ছি, মহামান্য আদালত - আপনি দেখছেন - কিন্তু কথিত অন্তর্যামী ঈশ্বর দেখতে পাচ্ছে না।


মহামান্য আদালত, আপনি নিশ্চয় মোহসেন আলী, টিনা গাজী, আসমতউলাহ মাঝি-দের নাম শুনেছেন, কিন্তু দেখেন নি। আমি ও দেখিনি। অথচ আপনার মতো - আমিও জানি - উনারা আমার পূর্ব পুরুষ। আমি আরো জানি - তাঁরা আমার চেয়ে বিশুদ্ধ মানুষ ছিলেন। আমি নিশ্চিত - তাঁদের কোন পাপের ফল আমি ভোগ করছি না। উনাদের নীল রক্ত আমাকে অহংকারী করেছে, আভিজাত্য দিয়েছে; আমি তাঁদের কাছে ঋণী! অতএব আসুন আমরা নিরাপদ জানি - এ আমার পূর্বপুরুষের পাপ নয়।

আমি আবারো বলছি - ইয়োর অনার - এ আমার পূর্ব জন্মের পাপ। হয়তো আমি কোন ধর্মজাযক ছিলাম। কোন এক বিকেলে স্নিগ্ধ স্নাত নান-কে দেখে আমার চোখদুটো লোভী হয়ে উঠেছিল। হয়তো বা আমি কোন শুদ্ধ মহামানব ছিলাম। আশ্রমের সামনের অনাথ শিশুকে আমি অবহেলা করে ভুল করেছি। হতে পারে আমি কোন - সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক ছিলাম। নিজের ভুলে জাহাজ ডুবিয়ে মৃতদের অভিশাপ নিয়ে আজকের এই অভিশপ্ত আমি। যা-ই হোক না কেন, এ আমার পূর্ব জন্মের পাপ।

এ অস্থির জীবন একদিন শেষ হবে, আমি জানি - আপনিও জানেন - আমি আবার জন্ম নেবো। আমার এই পরাজিত আনা-কড়ি-পাই নিয়ে আমিকি আবারো মানুষ হবো? মহামান্য আদালত, আপনার কাছে আমার একান্ত আর্জি -আপনি ঈশ্বরের কাছে বলুন, আমার সমস্ত সত স্বত্তার দোহাই লাগে, আপনি বলুন - আমি যেন পরজন্মে মানুষ না হই। টিকটিকি হতে রাজী আছি মহানন্দে। ইব্রাহিম নবীর আগুনে ফুঁ দেয়ার অপরাধে কামেল মানুষরা আমাকে মারতে চাইবে, আমি দেয়ালে দেয়ালে দৌড়ে বেড়াবো, হয়তো একদিন কামেল কোন মানুষের ঈমাণী যোশে খুন হয়ে যাবো। তবুও মহামান্য আদালত - সে অনেক শান্তি।

পরজন্মে আমি মানুষ হতে চাই না। মানুষ হলে - আমি অন্য মানুষকে ভালোবাসতে চাইবো। স্বজনদের কাছে রাখতে চাইবো, বন্ধনে জড়াতে চাইবো। এখন এ সবই অপরাধ, সবই ভুল, মানুষ জীবন খুব নির্মম - ইয়োর অনার - আমায় ক্ষমা করবেন, আমি মিসফিট সৃষ্টি হয়ে আসতে চাই না আর। মহামান্য আদালত - আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, আপনি একবার ঈশ্বরের কাছে বলুন - - -

Read more...

  © Blogger templates The Professional Template by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP